হানুফা বানু
পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে থিয়েটার বার বার সময়ের দাবী জানিয়ে এসেছে। মানুষজন যদি থিয়েটারে গিয়ে নিজেকে খুঁজে পায়, তবে সেই থিয়েটার জনচিত্ত আলোরিত করে। এই সময়ে ভারতবর্ষ জুড়ে ও আমাদের রাজ্যে ধর্মের বিভাজন চলছে, যেখানে বেকারত্ব, সামাজিক অবক্ষয়, রাজনৈতিক নেতা নেত্রীর দ্বিচারিতা, বিচার ব্যাবস্থার দখলদারি,এইসব অবস্থার পরিপেক্ষিতে গড়ে উঠেছে ক্লাইম্যাক্স থিয়েটারের নাটক ‘ধূর কি হবে’।কখনো হাস্যরসের মধ্যে দিয়ে,কখনো বীর রস,আবার কখনো করুন রসে সিক্ত করেছে আমাদের চিত্ত।এই নাটক আমাদের পথ দেখায়,হতাশা গ্রস্ত করে তোলেনা।
ভারতবর্ষ বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। মঞ্চ ভাবনায় তার ছাপ স্পষ্ট। অতি সাধারণ কিন্তু অসাধারণ একটি মঞ্চসজ্জা। কৌশিক ভট্টাচার্যর নাট্য রচনায় উঠে এসেছে আমাদের রাজ্য ও দেশের সাধারণ মানুষের সুখ, দু:খ, আশা, আকাঙ্খা, ভালবাসা ব্যর্থতা ও মনের আন্দোলনের কথা। তাকে রূপ দিয়েছেন পরিচালক অভিনেতা বাদল কাঞ্জিলাল। এই নাটকে একটিই চরিত্র। কাকে আগে রাখবো, পরিচালককে না অভিনেতাকে? সত্তর বছরের একজন বর্ষিয়ান অভিনেতা পরিচালক, নাকি সাতশ বছরের যুবক অভিনেতা। গোটা মঞ্চটাকে ব্যাবহার করে, চরিত্রের অন্তরভেদী আর্তনাদ আমাদের মনে গেঁথে দিলেন। বাদল কাঞ্জিলালের গলায় গাওয়া গানগুলি নাট্য ঘটনাকে এগিয়ে নিয়ে যায় এই নাটকটির উপস্থাপনার লক্ষে। পরিচালক গোটা মঞ্চকে যেভাবে ব্যাবহার করেছেন, সেটা পরিচালকের দক্ষতা। ক্লাইম্যাক্স থিয়েটার, কলকাতার মানসিক জোর প্রচুর। সম্প্রতি টালিগঞ্জ রঙ্গ ব্যাঙ্গ অদ্বিতীয়ার নাট্যৎসবে প্রায় পরিপূর্ণ মুক্তাঙ্গন প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের সামনে শিরদাঁড়া টান টান করে এই মুহূর্তের প্রত্যেকের মনের কথাগুলোকে নাট্যঘটনার মধ্যে দিয়ে উপস্থাপিত করলেন দক্ষতার সঙ্গে।
আবহ ভাবনা, এই নাটকের সহ পরিচালক সপ্তর্ষি চক্রবর্তীর। এই নাটকে আবহ ব্যবহারে পরিমিত বোধ, ‘ধূর কি হবে’র অন্তরের হাহাকারকে দর্শকের অন্তর ছুঁয়ে যায়। বিশেষ করে নাটকের শেষ গানের নির্বাচন।
এই মুহূর্তে মানুষের মনে অন্ধকারের ঘনঘটা।মঞ্চ অন্ধকার না করে আলো আঁধারির মধ্যদিয়ে অতি সামান্য হালকা নীল, এম্বার ও হালকা লাল রংকে ব্যাবহার করে বিভিন্ন নাট্য ঘটনা দর্শকের সামনে প্রস্ফুটিত করলেন আলোক পরিকল্পক বাবলু সরকার। একেবারে ধূর কি হবে নাটকের অন্তিমলগ্নে চরিত্র তমাল যখন তার লক্ষে এগিয়ে চলেছে, আলোক শিল্পী বাবলু সরকার গোটা মঞ্চকে অন্ধকার রেখে চরিত্রের মাথার উপরে টপ থেকে হালকা সাদা ঢিমে আলো ফেলেন, আমাদের কোন অসুবিধা হয়না চরিত্রটাকে দেখতে, পাশাপাশি আমরা দেখলাম, পা থেকে কোমর অবধি তীব্র আলোর চাপে চরিত্রটা যেন এগিয়ে চলেছে, পিছনে পিছনে আমি, আমরা, যেন লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষ, হেমলিনের বাঁশিওয়ালাকে অনুসরণ করে এগিয়ে চলেছি।
আমাদের স্বপ্নের রং ফিকে হয়ে যাচ্ছে, জীবনের রং সামাজিক অব্যবস্থার কারনে পুরে ঝলসে গেছে, সেখানে পোশাকের এত উজ্জ্বলতা বড়ই বেমানান। ক্লাইম্যাক্স থিয়েটার, কলকাতার ‘ধূর কি হবে’, এই প্রশ্ন তোলা থাক কিন্তু এই সময়ের পরিপেক্ষিতে কিছু একটা হবে,আজ না হয় কাল হবেই হবে।