নারায়ণ দেব
ত্রিপুরা সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক নাট্যোৎসব (Natyotsab),২০২৩-এর ৬ষ্ঠ সন্ধ্যার দ্বিতীয় নাটক ছিল ‘রঙিন রুমাল’। যার রচনা ও পরিচালনা সঞ্জয় কর। উইলিয়াম সেক্সপিয়ারের ‘ওথেলো’র অনুপ্রেরণায় ত্রিপুরার প্রেক্ষাপটে রচিত এই নাটক রঙিন রুমাল। নাটকের ভাষাও স্থানীয়।
অবিশ্বাসের সরু গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ নাটকের ভাবধারা। উঁচু-নিচু, ঘৃণ্য জাতপাতের বিভেদের কদর্য রূপটি নাটকে পরিস্ফুটিত। অতুল চন্দ্র ত্রিপুরার সেনাপতি। রাজকণ্যা দেবলীনা ভালবাসে তাকে, সেও ভালোবাসে রাজকন্যাকে। দু’জনের বিয়েও হয়। কিন্তু অতুল নিচু জাতের মানুষ বিধায় রাজ পরিবারের সম্ভ্রান্ত কর্মচারীরা এটা মেনে নিতে পারে না।শুরু হয় চক্রান্তের জাল বোনা। আর সেই চক্রান্তের জালে ভুল বুঝে অতুল চন্দ্র হত্যা করে তাঁর প্রিয় পত্নী দেবলীনাকে।
পুরো নাটকটিকে অত্যন্ত মননশীলতার সাহায্যে বেঁধেছেন নাটককার নির্দেশক সঞ্জয় কর। নাটকের প্রতিটি মুভমেন্টে রয়েছে অত্যন্ত যত্নের ছাপ। নাটকে বেশ কয়েকটি সাহসী দৃশ্য রচনা করেছেন নির্দেশক সঞ্জয় কর। এর মধ্যে একটি হল অতুল চন্দ্র ও দেবলীনার বাসর ঘরের দৃশ্যটি। যা দর্শকদের চমৎকৃত করে। মিডল স্টেজে উপর থেকে নীচে প্রলম্বিত সাতটি সাদা কাপড়। এই কাপড়গুলোর ব্যবহারেই দৃশ্যান্তরে বদলে যায় ঘটনার স্থানের চিত্র। কাপড়ে কাপড়ে গিঁট দিয়ে চক্রান্তের গভীরতা বুঝানোর ভাবনাটি অসাধারন। প্রতিটি চরিত্রের মাপা স্টেপ, সংলাপ প্রক্ষেপণ, শরীরি অভিনয় ছিল অত্যন্ত পরিশীলীত। প্রযোজনার শক্তপোক্ত স্তম্ভটি হল তরুন অভিনেতা উত্তম দাসের অতুল চন্দ্রের চরিত্রে অভিনয়। তিনি সর্বাঙ্গ দিয়ে অভিনয় করেছেন এবং চরিত্রটির অব্যক্ত অনুভবকে শরীরের ভাঙাচোরায়, হাতের মুদ্রার বা মুখের অভিব্যক্তিকে আশ্চর্য কুশলতায় পৌঁছে দিয়েছেন দর্শকের কাছে। যা সত্যিই একটি উঁচুমানের অভিনয় শৈলীর নিদর্শন হয়ে রইল।
ভাল কাজ করেছেন অঘোর চরিত্রে সানি সরকার কেশবলালের চরিত্রে দেবপ্রীত চক্রবর্তী। দেবলীনার চরিত্রে অনন্যা সরকার ছিলেন যথেষ্ট সাবলীল। বৃদ্ধা/ দেবলীনার বান্ধবী চরিত্রে আযুষ্মিতা চক্রবর্তী, দালিয়া চরিত্রে জেসিকা সরকার এবং প্রিযাঙ্কা চরিত্রে অনন্যা ঘোষ নির্দেশনা মেনেই তাদের কাজ গুলিকে রূপ দিয়েছেন। রুদ্রনারায়ণ/ সৈনিক চরিত্রে চন্দন বর্মন এবং রূপেন্দ্রকুমার চরিত্রে তুহীন শুভ্র ভট্টাচার্যের কাজে পাওয়া যায় আন্তরিকতার ছোঁয়া। এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন নৃপেন্দ্র সরকার, জয় শংকর ভট্টাচার্য ও চন্দ্রস্নাত কর।
শুভদীপ গুহের আবহ রচনা এবং তার সুনির্দিষ্ট প্রয়োগের ফলে নাট্যচলনের শুরু থেকে শেষাবধি বজায় থাকে এক মসৃণ গতি। সুপ্রীতি ঘোষ ও চন্দ্রস্নাত করের পোষাক পরিকল্পনা এবং দীপক দে’র বিশেষ কষ্টিউম পরিকল্পনা নাটকের সময় নির্ধারনের এক কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে। পীযূষ কান্তি রায়ের রূপটান এবং ড. দেবপ্রীত লস্করের কোরিওগ্রাফি নাট্যানুসারী। প্রভিতাংশু দাসের আলোর পরিকল্পনা এবং রিন্টন রায়ের প্রয়োাগ যথাযথ ভাবে নাট্যক্ষণ গুলিকে নির্মাণ করেছে।