Tuesday, June 10, 2025
Tuesday, June 10, 2025
Homeনাটকউত্তরবঙ্গের মেয়ে সিমরাণ থিয়েটার করে থিয়েটারকে ভালবেসেই

উত্তরবঙ্গের মেয়ে সিমরাণ থিয়েটার করে থিয়েটারকে ভালবেসেই

বিজয়কুমার দাস

থিয়েটারে নতুন প্রজন্ম : পর্ব ২৩

উত্তরবঙ্গে থিয়েটারের একটা চর্চা আছেই। বেশ কয়েকটি নাট্যদল উত্তরবঙ্গে থিয়েটার করে চলেছে দায়িত্বের সঙ্গে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এই যে, উত্তরবঙ্গে সংলাপ নির্ভর থিয়েটারের পাশাপাশি মূক নাটকের একটা চর্চা ও প্রচলন আছে। সৃষ্টি মাইম থিয়েটার সব্যসাচী দত্তের নেতৃত্বে এখানে সেই কাজটা করে চলেছে দায়িত্বের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়ে মূক নাটকের সঙ্গে যুক্ত। এক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির নেতাজী পাড়ার  মেয়ে সিমরাণ মাঝি একটি উল্লেখযোগ্য নাম।

সিমরাণের পড়াশুনো মারোয়ারি বালিকা বিদ্যালয়ে। ২০২৪ সালে কলেজ উত্তীর্ণ। বিনীতা মাঝি ও নন্দদুলাল মাঝির মেয়ে সিমরাণ থিয়েটারের পাশাপাশি খেলাধুলাতেও পারদর্শী। ভলিবলের সে একজন নিয়মিত খেলোয়াড়। আগামীতে খেলাধুলোর পাশাপাশি যে কোনরকম একটা চাকরির পাশাপাশি থিয়েটারের চর্চা চালিয়ে যাওয়া তার আগামী জীবনের লক্ষ্য বলে সে জানিয়েছে। দুই ভাই এর চেয়ে বয়সে বড় সিমরাণ অভিনয়কে জড়িয়ে রাখতে চায় জীবনের সঙ্গে। ২০২৪ সালে কলেজ উত্তীর্ণ সিমরণের ইচ্ছে, বাকি জীবনের সঙ্গে থিয়েটারকে সে জড়িয়ে রাখতে চায়।

এ পর্যন্ত ৮-৯ টা প্রযোজনায় অভিনয়ের সূত্রে থিয়েটারকে সে ভালবেসেছে মনেপ্রাণে। রোড এক্সিডেন্ট, পালাটিয়া, মাসান, ওরা কাজ করে, করোনা,ধর্ম,টি প্রপোজাল ইত্যাদি তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য প্রযোজনাগুলির নাম।প্রতিটি প্রযোজনাতেই নিজের অভিনয় দক্ষতায় উত্তীর্ণ হয়ে দর্শকের নজর কেড়েছে সিমরণ। তার ফলে অভিনয়ে জড়িয়ে থাকার ইচ্ছেটা তাকে পেয়ে বসেছে। সবচেয়ে বড় কথা এ ব্যাপারে পারিবারিক সম্মতি তার কাছে অন্যতম অনুপ্রেরণা। রাজবংশী “পালাটিয়া বন্দনা ” নাটকে রাজ্য স্তরে ২০১৯ সালে কলকাতা গিয়ে পরিবেশন করা তার একটি উল্লেখযোগ্য প্রেরণার বিষয় এক্ষেত্রে। এই ” পালাটিয়া বন্দনা” য় পুরুষ চরিত্রে  অভিনয় করে দর্শকের প্রশংসা পাওয়া তার অভিনয় জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি বলে সে মনে করে।সিমরাণ জানিয়েছে “পালাটিয়া বন্দনা” একটি লোকসংস্কৃতি আশ্রিত পালা যাতে শিল্পীরা নিজেই গান গায়, বাদ্যি বাজায়, আবার অভিনয়ও করে। গ্রাম পঞ্চায়েতের নেতা বিষয়ক এই পালাটি তার কাছে একটি পছন্দের প্রযোজনা।

সিমরাণ জানিয়েছে, বিগত তিন বছর ধরে সে জাতীয় মূকাভিনয় উৎসবে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তার অভিনয় জীবনে এই প্রাপ্তি তাকে অভিনয়ে প্রেরণা জুগিয়েছে। আগামীতেও সে নিজেকে আরো ভাল ভাবে তৈরি করে অভিনয়শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে চায়। এই ২০২৫ সালেও সিমরাণ জাতীয় মূকাভিনয় উৎসবে( ২৫-৩০ মার্চ) যোগ  দিয়েছে। বাড়ির মা – বাবার প্রেরণা ও উৎসাহ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয়। এই কৃতিত্ব সে দিতে চায় তার প্রশিক্ষক এবং দলের  পরিচালক (সৃষ্টি মাইম থিয়েটার) সব্যসাচী দত্তকে। সিমরাণ জানিয়েছে, গুরুজির  প্রেরণা ও প্রশিক্ষণের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে। ২০২৩ সালে সিমরণ প্রথমবার জাতীয় মূকাভিনয় উৎসবে যোগ দিয়েছিল।তারপর থেকে পরপর তিন বছর।

সব্যসাচী দত্তর সাথে কিভাবে যোগাযোগ ঘটেছিল?… এই প্রশ্নের উত্তরে সিমরাণ জানিয়েছে, স্কুলে সে প্রথমবার অভিনয় করেছিল। তখন থেকেই অভিনয় শিল্পটা তার প্রিয়। তাদের স্কুলের অভিনয় দেখতে এসেছিলেন মূক নাটক প্রশিক্ষক সব্যসাচী দত্ত। সেই প্রথম সব্যসাচীবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ।তিনি সিমরণের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তারপরই সব্যসাচীবাবুর দল সৃষ্টি মাইম থিয়েটারে যোগ দেয় সিমরণ। তারপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। পরপর তিন বছর জাতীয় মূকাভিনয় উৎসবে সুযোগ তাকে বাড়তি প্রেরণা জুগিয়েছে। মেয়েদের অভিনয়শিল্পের সাথে যুক্ত হওয়ার যে প্রতিবন্ধতা, সিমরণ তাকে পাত্তা দেয় না। এ ব্যাপারে বরং মা – বাবার প্রেরণা তার কাছে একটি অতিরিক্ত প্রাপ্তি। অভিনয় তার কাছে এমন একটি শিল্প, যা তাকে খ্যাতি দিয়েছে, অন্যরকম করে বাঁচতে শিখিয়েছে। বলা যায়,নিজেকে বিকশিত করার এবং সবার সামনে নিজেকে তুলে ধরার একটা শক্তিশালী মাধ্যম অভিনয়শিল্প, এটাই তার ধারণা। সে জানে, এ পথে ফুল যেমন থাকে, কাঁটাও থাকে। তাছাড়া মেয়েদের জীবন সবসময় নিজের ইচ্ছায় চলে না, তবু তার বিশ্বাস, অভিনয়কে সে জীবনের সাথে জড়িয়ে রাখার চেষ্টা করবে।এটা তার কাছে একটা সাধনা, তাই সেই সাধনায় সিদ্ধিলাভের প্রচেষ্টায় সে লেগে থাকতে চায়। তার কাছে মনের ইচ্ছাটাই বড়। আর ইচ্ছা থাকলেই সেই ইচ্ছাকে লালন করা যায়, এ তার দৃঢ় বিশ্বাস।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular