সুব্রত কাঞ্জিলাল
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee) একটি সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) কে প্রশ্ন করেছিলেন, মানিকদা, বাংলা শিল্প-সাহিত্যের মধ্যে অসংখ্য মাধ্যম থাকা সত্ত্বেও আপনি সিনেমাতে এলেন কেন?
জবাবে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, কাব্য, কথাশিল্প, চিত্র শিল্প, সঙ্গীত ইত্যাদির মাধ্যমে অনেক বড় বড় দিকপাল রা পথ আগলে দাঁড়িয়েছিলেন। শুধুমাত্র একটা মাধ্যম অর্থাৎ সিনেমাতে তেমন কেউ ছিলনা। তাই ঢুকে পড়েছিলাম।
এখন প্রশ্ন হলো, বাংলা সাহিত্যে অসংখ্য মণি মুক্তোর মতো গল্প উপন্যাস থাকা সত্ত্বেও তিনি পথের পাঁচালী দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন কেন?
ফরাসি পরিচালক রেনোয়া (Jean Renoir) কলকাতায় তার দ্য রিভার (The River) ছবির শুটিংয়ে এসে ছিলেন। সত্যজিৎ বাবু শুটিং দেখতে গিয়েছিলেন। পরিচালকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। সিনেমার প্রতি আগ্রহ সেই সময় প্রবল হয়ে ওঠে। কর্মসূত্রে লন্ডনে গিয়ে দু বছর থাকার সময় অসংখ্য শিল্পসমৃদ্ধ সিনেমা তিনি দেখেছিলেন। Vittorio De Sica-র বাইসাইকেল থিফ (Bicycle Thieves) ছবিটা দেখার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন যে, সিনেমা বানাবেন। বাইসাইকেল থিফ ছবিটা তৈরি হয়েছিল, স্টুডিওর বাইরে আউটডোর এর বাস্তব জগতে। সম্পূর্ণ অপেশাদার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ওই ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছিল। রোমের বস্তি অঞ্চলের শ্রমিক জীবন ভিত্তিক গল্প তৈরি হয়েছিল।
দেশে ফিরে এসে তিনি মনস্থির করলেন, গ্রামীণ পটভূমিতে একটি নিম্নবিত্ত পরিবার কেন্দ্রিক গল্প তিনি বলতে চান। স্টুডিওর বাইরে কৃত্রিম আলো ব্যবহার না করে, অপেশাদার অভিনেতাদের নিয়ে ছবি তৈরি করবেন।
বলা বাহুল্য পথের পাঁচালী (Pather Panchali) সৃষ্টি হবার অনেক আগে, নিমাই ঘোষ তৈরি করেছিলেন, ছিন্নমূল। এই ছবিটা ছিল পূর্ববঙ্গ থেকে আসা ছিন্নমূল মানুষের বাস্তব জীবন ভিত্তিক গল্প। ঋত্বিক ঘটক (Ritwik Ghatak) ও এ কিভাবে নির্মাণ করেছিলেন, নাগরিক। এই ছবিগুলো সেসময়ের প্রচলিত ধারার বাইরের অন্যরকম নির্মাণ।
সেসময় বাংলা সিনেমা ছিল যাকে বলে সেলুলয়েড লিটারেচার। অর্থাৎ সাহিত্যের চলচ্চিত্র করণ। হলিউডে ও বেশিরভাগ ছবি এই ফর্মুলায় তৈরি করা হত। সেখানে অবশ্য মনোরঞ্জনের দিকে বেশি নজর দেওয়া হতো। তাই জাঁকজমক বেশি ছিল। এদেশের অধিকাংশ হিন্দি ছবি আবশ্য পৌরাণিক গল্পে আশ্রয় নিয়েছিল। সিনেমা মানে এক ধরনের রাজকীয় ব্যাপার এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে ছিল। সিনেমা বানাতে গেলে অনেক টাকার দরকার হয়। সেই টাকা যারা লগ্নি করে, তারা বেশ খানিকটা বাণিজ্য করে নেবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং আর পাঁচটা শিল্পমাধ্যমের মধ্যে সিনেমা যে সম্পূর্ণ অন্যরকম একটি মাধ্যম এই ধারণা তখনো গড়ে ওঠেনি।
সদ্য সদ্য দেশ স্বাধীন হয়েছে। ২০০ বছরের পরাধীনতার গ্লানি, দারিদ্র্যের অন্ধকার, সামন্ততান্ত্রিক পশ্চাত্পদ চিন্তা ধারা আরো নানা রকম সামাজিক ব্যাধি সর্বত্র বিরাজ করছিল। সিনেমা যে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে, এই ধারণা ইউরোপে প্রতিষ্ঠা পেলেও আমাদের এখানে সেভাবে কেউ ভাবতে পারছিল না। তাছাড়া সিনেমা তৈরি করতে গেলে যেসব অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দরকার সেসব ও তেমন ছিল না এখানে।
চলচ্চিত্রের অভিনেতা অভিনেত্রীরা মূলত থিয়েটারের মঞ্চ থেকে আসতেন। তাদের অভিনয় ছিল অতিনাটকীয়। পরিচালকরা হলিউডের স্টাইল নকল করতেন। অতি নাটকীয়তা সিনেমা তে চলতে পারে না এই সাধারণ ধারণা তখনো গড়ে ওঠেনি। তাছাড়া সমাজের নিম্নবর্গের অর্থাৎ শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ ব্যথা যন্ত্রণা সিনেমায় তেমনভাবে পাওয়া যেত না। যদিও ইউরোপের অনেক সত্যনিষ্ঠ দায়বদ্ধ পরিচালকরা ক্যামেরা কে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার করে তুলতে পেরেছিল।
অসংখ্য ইউরোপীয় সিনেমা দেখার পর সত্যজিৎবাবু বুঝতে পারলেন, তাকে কি করতে হবে। কোন পথ ধরে এগোতে হবে। কোন গল্প কিভাবে বলতে হবে। সিনেমার দর্শকদের কাছে তার কাজ কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। জীবন বহির্ভূত মনোরঞ্জনের আয়োজন শিল্পীর পক্ষে সততার পরিচয় হয়ে উঠতে পারে না। শিল্পীকে হতে হবে সত্যবাদী। সুন্দরের আরাধনা করতে গেলে, মিথ্যার আশ্রয় দেওয়া চলে না। কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি কে রঙিন পোশাক পরিয়ে পরিবেশন করা অপরাধ। মানব জীবনের গভীরে ডুব দিয়ে শিল্পীকে তুলে আনতে হয় অমূল্য জীবনের মনি মুক্তা।
এই প্রসঙ্গে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কথা আলোচনা করা যেতে পারে। তিনিও ইউরোপ থেকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষায় আলোকিত হয়ে ফিরে এসে দেখলেন, বঙ্গদেশে নাটকের নামে চলছে এক ধরনের অজাচার। রাজপুরুষ, জমিদার তথা বড়লোকদের উঠোনে বাংলা নাটক বাইজি বাড়ি র ব্যভিচারী তে পরিণত। তিন লিখলেন, অলীক কুনাট্য রঙ্গে, বাঙালির মন মাতাল হয়ে আছে। সেখান থেকে বাংলা নাটক বা থিয়েটার কে উদ্ধার করতে হবে। তখন তিনি কলম ধরলেন। তার নাটকে উন্নত ইউরোপীয় নাটকের প্রভাব দেখা গেল। স্বাভাবিক ভাবে উচ্চবিত্ত সম্প্রদায় মাইকেলকে বর্জন করলেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ মাইকেলকে গ্রহণ করলেন। সাধারণ মানুষের জীবন যন্ত্রণার , লড়াই-সংগ্রামের নাটক রচনা র বন্ধ দরজা খুলে গেল। লেখা হল নীলদর্পণ। জমিদার দর্পণ। কুলীনকুল সর্বস্ব নাটক। একেই কি বলে সভ্যতা। বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ। সুতরাং বাংলা থিয়েটারের নব ভগিরথ হিসেবে আমরা মাইকেলকে বরণ করতে পারি। সেদিন তিনি না থাকলে, চল্লিশের দশকে গণনাট্য সংঘের আবির্ভাব ঘটতো না।
সত্যজিৎ রায় নিজেকে সুশিক্ষিত করেছিলেন সর্বদিক থেকে। তার পরিবার ছিল সে যুগের পরিমাপে ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান শিল্প-সংস্কৃতির আলোকে আলোকিত। রাবীন্দ্রিক পরিমণ্ডলে তার শৈশব যৌবন সমর্থ হয়েছিল। নন্দলাল বসু, রামকিঙ্করের মত শিল্পীদের কাছে তার শিল্পচর্চা শুরু হয়েছিল। মা এবং মামার বাড়ির কাছ থেকে পেয়েছিলেন ভারতীয় এবং ইউরোপীয় উচ্চাঙ্গসংগীতের আস্বাদ। ছোটবেলা থেকে তার চোখ এবং কান তৈরি হয়ে উঠেছিল। সাধারণত সে সময় ভারতীয় এবং বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এইরকম রেনেসাঁ পুরুষ ছিল বিরল।
বাংলায় প্রবাদ রয়েছে, যাত্রা দেখে ফাতরা লোকে। নাটক সিনেমা চরিত্রহীনদের দখলে থাকে। গান বাজনা বাইজি বাড়ির ব্যাপার-স্যাপার। ভদ্রলোকেরা কখনো ওইসব লাইনে নিজেকে আবিস্কার করতে চায়না। তাই সিনেমা তে নামতে হয়। অর্থাৎ সিনেমা নরকের কারবার। আমাদের ছোটবেলা সিনেমা দেখা ছিলো নিষিদ্ধ কর্ম।
সত্যজিৎ রায় এইসব নিষিদ্ধ কর্মে যুক্ত হয়ে পড়লেন।
তিনি সিনেমাতে নামলেন। এবং প্রমাণ করলেন সিনেমা সিনেমা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চর্চা এবং কাজকর্ম করে বিশ্ব জয় করা যায়। রবীন্দ্রনাথের মত কবিতা লিখে নোবেল পুরস্কার অর্জন করা যায়। যেমন ইউরোপে চার্লি চ্যাপলিন স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট না থাকলেও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্যার উপাধি অর্জন করেন। সিনেমা শিল্পের নোবেল পুরস্কার অর্থাৎ অস্কার পুরস্কার অর্জন করেন।
আমরা আবার ফিরে আসবো সেই আলোচনায়, সত্যজিৎ বাবু নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিয়ে, ব্যাবসায়িক মনোভাব পোষণ করে, বিপুল অর্থ রোজগারের উদ্দেশ্য নিয়ে, যুক্তিহীন, শিল্প জ্ঞানহীন, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, নিম্নরুচির মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য সিনেমা বানালেন না কেন? পরিবর্তে পথের পাঁচালীর মত গল্পের চিত্ররূপ সৃষ্টি করতে আত্মসমর্পণ করলেন কেন? সে সময় কোন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান তাকে তো ফাইন্যান্স করতে প্রস্তুত ছিল না। নিজের সঞ্চিত টাকা এবং বউয়ের গয়না বন্ধক দিয়ে পাগলামি করতে গেলেন কেন?
আজ যখন অনিক দত্ত (Anik Dutta) অপরাজিত (Aparajita) ছবিটি নির্মাণ করতে অগ্রসর হন, তখন আমরা কিন্তু দুই যুগের দুই পুরুষের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখতে পারি। অর্থাৎ যে বিপুল ফাইন্যান্স, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, অসংখ্য শিল্পী ও টেকনিশিয়ানদের সংঘটিত করে অনিকবাবু অপরাজিত ছবিটি বানালেন তার সঙ্গে সত্যজিৎ বাবুর পথের পাঁচালী সৃষ্টির কোন তুলনা চলে না।
সত্যজিৎ বাবু কেন ফাইন্যান্স জোগাড় করতে পারেননি? তার অন্যতম কারণ, সেসময় সিনেমা শিল্পে যারা টাকা লগ্নি করতেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্য। মুনাফা। সে সময় তারা সত্যজিৎকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এই কারণে যে, পথের পাঁচালী বাণিজ্য করার উপাদান নয়। এ যুগে বিষয়টা বদলে গেছে। অপরাজিত ছবি মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শোনা যাচ্ছে বিপুল বাণিজ্যের উল্লাস।
পথের পাঁচালী ছবিটাকে বিপুল প্রচারের মধ্যে নিয়ে আসবার বিপুল অর্থ এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছিল না। আজ সেটাই অনিকবাবুর হাতে রয়েছে। যুগটা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। করপোরেট পুঁজির প্রভুরা মানুষের পানীয় জল কিংবা গরুর গোবর নিয়ে কিভাবে বাণিজ্য করতে হয় তারা জানেন।
ঋত্বিক ঘটক সুবর্ণরেখা ছবি সারাদিন ধরে শুটিং করতে করতে সন্ধের সময় স্টেশনে চলে আসতেন। কারণ হাওড়া থেকে একটা ট্রেন টাটানগরের দিকে যাবে। সেই ট্রেনে দুটো রিল আসবে। যা না পেলে পরের দিন শুটিং হবে না। এই যন্ত্রণা নিয়ে, বিপুল উদ্বেগ নিয়ে একজন শিল্পীকে সৃষ্টিশীল থাকতে হয়েছিল। শুটিংয়ের সময় মুড়ি চানাচুর, ডাল-ভাত চচ্চড়ি ছাড়া তেমন কিছু আয়োজন করা যেত না। ভাবুনতো জীবদ্দশায় ঋত্বিক বাবুর প্রথম ছবি নাগরিক মুক্তি পেল না তার কারণ সে সময় সিনেমা শিল্পের মাফিয়ারা রাজত্ব করছিল। এই যন্ত্রণা কতটা গভীর। কতটা ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে একজন সৃষ্টিশীল মানুষের দেহ মনে। সিনেমা শিল্পের মাফিয়াদের ষড়যন্ত্রে, এবং রুচিহীন অশিক্ষিত দর্শকদের কারণে ঋত্বিক ঘটকের একটার পর একটা ছবি হল থেকে উঠে গেছে। কোমল গান্ধার, অযান্ত্রিক, সুবর্ণরেখার মত ছবি র কোন মূল্য সে সময় এদেশে ছিলনা। বাজারে পত্রিকাগুলো নির্লজ্জ আক্রমন করত ঋত্বিক বাবুর শিল্পকর্মকে।
সত্যজিৎ রায় জানতেন, বাঙালি বাবুদের নোংরা চরিত্রের ইতিহাস। যারা রবীন্দ্রনাথকে ও যন্ত্রণায় যন্ত্রণায় শেষ করে দিতে চেয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ আজও বাঙ্গালীদের কাছে গৃহসজ্জার উপাদান মাত্র। বাবুদের ড্রইংরুমের সুদৃশ্য কাচের শোকেস রবীন্দ্রনাথ সাজানো থাকে।
সত্যজিৎ রায় এইসব ভন্ড, উৎশৃংখল, অতি নিম্ন রুচির মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীদের খুব ভাল করে চিনে ছিলেন। তার শেষের দিকের ছবি আগন্তুক, গণশত্রু, শাখা প্রশাখা নির্মাণের সময় তিনি একরকম চাবুক হাতে নির্দয় হয়ে উঠেছিলেন।
তিনি দেখেছেন, ঋত্বিক ঘটকের মতো আরো অনেক শিল্পীকে এই মধ্যবিত্ত বাঙালি কিভাবে ক্রুশবিদ্ধ করেছিল। যেমন রাজেন তরফদার, গঙ্গা নামের চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করে তিনি প্রমাণ করেছিলেন, শিল্পীকে কিভাবে সৎ থাকতে হয়। গঙ্গা ছবিটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেল ও, গঙ্গা, পালঙ্ক, জীবন কাহিনী, নাগপাশ এর মত ছবিগুলো নিম্নরুচির বাঙালি দর্শকদের কাছে ছিল বিভীষিকা। এরা সিনেমার নামে এক ধরনের বেলেল্লা সংস্কৃতি র পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছে আজও।
সত্যজিৎ রায় জানতেন , এইসব নিম্নরুচির দর্শক এবং সিনেমা শিল্পের মাফিয়াদের পরিমণ্ডলে দাঁড়িয়ে তাকে পথের পাঁচালী সৃষ্টি করতে হবে। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায়ের সৌজন্যে সিনেমাটা সম্পূর্ণ হতে পেরেছিল। শোনা যায় পরিচালক হিসেবে মাত্র ৩০০০ টাকা পারিশ্রমিক তিনি পেয়েছিলেন। আসলে তিনি, বউ এর গয়না, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, দামি ফ্ল্যাট কেনার উদ্দেশ্য নিয়ে সিনেমা শিল্পের কাছে আশ্রয় নেননি। সে যুগের উত্তম কুমারের মতো অনেক শিল্পী ও শুধুমাত্র গ্ল্যামারের আকর্ষনে বা কোটি কোটি টাকা রোজগারের নেশায় সিনেমার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। প্রকৃত অর্থে তারা শিল্পের সেবক, সাধক হয়ে ওঠার সাধনা করে গেছেন। আজ যা সিনেমা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকজনদের কাছে হাস্যকর ব্যাপার।
পথের পাঁচালী সৃষ্টির জন্য দিল্লির শাসক এবং মুম্বাই বাংলার সিনেমা শিল্পের মাফিয়া রা সত্যজিৎ রায় কে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছিল। তিনি নাকি সদ্য স্বাধীন একটি দেশের চূড়ান্ত দারিদ্র বিক্রি করছেন বিদেশের বাজারে। মনে রাখতে হবে যে, সে যুগে যদিও হিন্দি এবং বাংলা সিনেমাতে, অর্থনৈতিক দারিদ্র, বেকার সমস্যা, মূল্যবোধ হীনতা, সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে অনেক ছবি তৈরি হতো। তবে পরিত্রাণের কথা কেউ বলত না। মানব মুক্তির কথা শিল্পিত ভাবে উচ্চারিত হতো না। শ্রেণী-সংগ্রামের এক ধরনের রোমান্টিক মধুর মিলনের গল্প বলা হত। সত্যজিৎ প্রথম ব্যক্তি, যে বললেন, এই দারিদ্র, অনাহার, দুর্ভিক্ষ মহামারী, কালোবাজারি মানুষের তৈরি। একদল মুনাফাখোর অমানুষদের সৃষ্টি। এর জন্য দায়ী শাসকশ্রেণীর অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। স্বাধীনতার স্বাদ প্রকৃত অর্থে মধুর নয়। বিষাক্ত। উপরতলার মুষ্টিমেয় দানব দের মত কিছু গোষ্ঠী স্বাধীনতার সবটুকু অমৃত লুট করে নিয়েছে। সভ্যতা প্রকৃত অর্থে বিপুল প্রহসন।
পথের পাঁচালী ছবিতে তেমন কোনো নিটোল গল্প নেই। অতি নাটকীয়তা বর্জন করা হয়েছে। সস্তা ভাবালুতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এই গল্পে কোন রোমান্টিক প্রেম কাহিনী নেই। দরিদ্র মানুষের উত্তরন নেই। বরং মৃত্যুর মিছিল রয়েছে।
কোন কোন মাথামোটা ব্যক্তি সত্যজিৎ বাবুকে বলেছিলেন, দু’চারটে গান যদি ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তারা খানিকটা অর্থলগ্নি করতে পারেন। পথের পাঁচালীর দ্বিতীয় পর্ব অপরাজিত ছবিতে এমন একটা বিষয় তুলে ধরলেন, যা ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে একেবারেই খাপ খায় না। অর্থাৎ মায়ের প্রতি সন্তানের আকর্ষণ জন্মের পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। অপু তার জ্ঞানার্জনের আকাঙ্ক্ষায় মায়ের প্রতি ততটা অনুগত নয়।
এরচেয়ে বৈপ্লবিক সত্য আর কি হতে পারে? এটাই তো সামাজিক সত্য! অথচ এই সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়! অস্বীকার করা হয়!
পথের পাঁচালীর দর্শক অপরাজিত ছবিটিকে গ্রহণ করতে পারল না। কারণ দর্শকের মাইন্ড সেটআপ।
সত্যজিৎ রায় এটা জানতেন। তবুও তিনি সত্যনিষ্ঠ ছিলেন। মিথ্যেবাদী হতে চাননি। অশিক্ষিত দর্শকের নিম্নরুচির কাছে আত্মসমর্পণ করেন নি। এইখানেই সত্যজিৎ রায়ের সততা। ওই ছবির প্রযোজক তিনি নিজেই ছিলেন। বাণিজ্যিক মুনাফার কথা একবারের জন্যও ভাবতে চান নি। আজকাল এই রকম সাহস এবং সততা কতজন চিত্র পরিচালকের মধ্যে রয়েছে? এরা সবাই মুখে মারিতং জগত। নিরাপদ আশ্রয়ের আড়ালে বসে বড় বড় কথা বলে। বারীন সাহা মহাশয় জীবনে একটা মাত্র ছবি নির্মাণ করতে পেরেছিলেন। তেরো নদীর পাড়ে। ছবিটা মুক্তি পেয়েছিল ১৩ বছর পর যখন পশ্চিমবঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রচেষ্টায় আমরা ছবিটা দেখেছিলাম। যথাবিহিত দর্শক আনুকূল্য লাভ করা যায়নি।
বারীন সাহা তারপর আর কোন দিন ছবি বানানোর জন্য আপস করেননি। সততা মেরুদন্ড বিক্রি করেননি। এটাই ছিল সে যুগের প্রকৃত পরিচয়।
এদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব যারা আয়োজন করেছিলেন, এবং সেই উৎসবের পরে যারা ফিল্ম ক্লাব আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন তাদের মধ্যে সত্যজিৎ রায় ছিলেন অন্যতম। বাণিজ্যিকভাবে এদেশে হলিউডি ছবির বাইরে অন্য ধরনের ছবি এখানে প্রদর্শিত হতো না। সেই সব ছবি দেখার জন্য ফিল্ম ক্লাব আন্দোলনের সূত্রপাত। সেইখান থেকে সত্যজিৎ রায়ের মত সত্যনিষ্ঠ ফিল্ম মেকারদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। যদিও কালের নিয়মে ওইসব ফিল্ম ক্লাবগুলো আনসেন্সরড ছবি প্রদর্শনের উপায় হয়ে উঠেছিল। তার অন্যতম কারণ বিকৃত রুচির দর্শকদের অবদান।
সোভিয়েত রাশিয়ার সিনেমা ফিল্ম ক্লাব আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এদেশে ঢুকে পড়েছিল। আইজেনস্টাইন, পুদবকিন প্রমুখদের ছবিতে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ সিনেমাতে কিভাবে ব্যবহার করা হয় এই সত্য বুঝতে পারা গেল। শুধু বিষয় নয়, বিষয় প্রাধান্য থাকবে, তার সঙ্গে কিভাবে নির্মাণ কৌশল, এডিটিং দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে শট ও সিকোয়েন্স জুরেজুরে একটা ছবির শরীর নির্মাণ হয় এইটা এই সব ছবিগুলো থেকে বোঝা গেল। মনতাজ ব্যবহারের ঐতিহাসিক নির্মাণ আবিষ্কার করা গেল। ঋত্বিক ঘটক তাইতো বলতেন, যে দ্বন্দ্বতত্ত্ব জানেনা, আইজেনস্টাইনকে আত্মস্থ করেনি তার সিনেমা করার অধিকার জন্মায় না। আইভান দা টেরিবল ছবিটা সত্যজিৎ রায়ের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল।
তিনি বুঝতে পারলেন, সিনেমা কিভাবে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। মুভি ক্যামেরা আবিষ্কারের পর লেনিন বলেছিলেন, চলচ্চিত্র কে হাতিয়ার করে আমরা এবার উন্নত সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব।
তিনি সমস্ত শিল্পীদের ডাক দিয়ে বলেছিলেন, চলচ্চিত্র কে উন্নত মানব সমাজ গড়ে তোলার জন্য হাতিয়ার করো। রুশদেশে যাওয়ার পর এবং ওখানকার সিনেমা দেখার পর, রবীন্দ্রনাথ ও চলচ্চিত্রের বিপুল শক্তির বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলেন। এবং তিনি এই শিল্পের প্রতি আকর্ষন বোধ করেছিলেন। চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। নটীর পূজা চিত্রায়িত হয়েছিল।
পথের পাঁচালী হয়ে উঠল গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনের বিশ্বস্ত দলিল। প্রকৃতির অনির্বচনীয় সুন্দরের মাঝে মাটির মানুষ গুলো কিভাবে শ্রেণীবিভক্ত হয়ে আছে, এই ছবি তার সত্যকথন। খাঁটি বাঙালি শৈল্পিক চোখ দিয়ে সত্যজিৎ বাবু গ্রাম বাংলার খণ্ড খণ্ড চিত্র প্রস্ফুটিত করে তুললেন। জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি তে রেলের গাড়ির দৃশ্য উঠে এলো। রেললাইন, টেলিগ্রাফের পোস্ট ইত্যাদি নতুন ভারত বর্ষ নির্মাণের চালিকাশক্তি ছিল। সেই শক্তির স্পর্শ অপু ও দুর্গার মধ্যে তিনি জারিত করে দিলে ন। হরিহর দারিদ্র্যের যুপকাষ্ঠে লুপ্ত হয়ে যাওয়া মানুষ হয়ে উঠল না। হরিহরের মধ্যে স্বপ্ন দেখা মন বেঁচে রইল। দুর্গার বেদনাদায়ক মৃত্যুর পরেও এই পরিবারটি কূপমন্ডুক এর মত আর পাঁচজন বাঙালির পদাঙ্ক অনুসরণ করল না। হরি হ র তার স্ত্রী পুত্রকে নিয়ে নতুন দেশ ও পৃথিবী দেখার জন্য বেরিয়ে পরল। এক জায়গায় বেশিদিন বসবাস করলে মানুষ নষ্ট হয়ে যায়। এই চিরায়ত সত্য উচ্চারিত হলো পথের পাঁচালী তে। অপুর জ্ঞান তৃষ্ণা র উন্মেষ ঘটে গিয়েছিল এইখান থেকে। সত্যজিৎ বাবু তার এই ট্রিলজি তে বললেন, চরৈবেতি। এগিয়ে চলো। তোমার থামা নেই। জয় করে নেবার জন্য রয়েছে গোটা পৃথিবী।
পরবর্তী সময়ে ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন এবং আরো অনেকে এই ভাবেই এগিয়ে এসেছিলেন। বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের মাইলস্টোন হয়ে উঠেছিল তাদের ছবিগুলো।
সিনেমার দর্শক প্রস্তুত ছিল না। কবেই বা থাকে। বাণিজ্যিক সিনেমার মাফিয়ারা আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিল। কর্পোরেট পুঁজির বাইরে অন্যভাবে যে সিনেমা তৈরি করা যেতে পারে, এটা তারা চাননি। দেশের সরকার গুলো কখনো সৎ সৃষ্টিশীল সিনেমা তৈরীর জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। বামফ্রন্ট সরকার তাদের ক্ষুদ্র ক্ষমতা র মধ্যে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, রাজেন তরফদার, গৌতম ঘোষ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, শ্যাম বেনেগাল, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, এবং আরো অনেককে দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের ছবি তৈরি করে নিয়েছিল। বাংলা একাডেমি, নাট্য একাডেমি, নন্দন, গিরিশ মঞ্চ, অহীন্দ্র মঞ্চ, নজরুল মঞ্চ, মধুসূদন মঞ্চ, রূপায়ণ (রঙিন ছবি সম্পাদনার জন্য) এমন অসংখ্য ঐতিহাসিক কাজ বামফ্রন্ট সরকার করেছিল। পশ্চিমবঙ্গের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, নাট্য উৎসব, বইমেলা, লিটল ম্যাগাজিন মেলা এমন অসংখ্য উদ্যোগের জন্য ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে।
মনে রাখতে হবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের ভান্ডারে পথের পাঁচালী থেকে অনেক অনেক শিল্পসমৃদ্ধ সিনেমা পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে। তবে পথের পাঁচালীর তাৎপর্য কি? শুধুই কি মানবিক দলিল চিত্র?
নাকি আঙ্গিকের উৎকর্ষতা? সত্যজিৎ রায় তো আঙ্গিক সর্বস্ব ছিলেন না! টেকনোলজিকে খুব গুরুত্ব দিতেন না। তিনি বারবার বলছেন, ক্যামেরা কে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। টেকনোলজি দিয়ে শিল্প সৃষ্টি সম্ভব নয়। অথচ কয়েক বছর আগে, একটি বেসরকারী ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে, সন্দীপ রায় কে বসিয়ে জনৈক পন্ডিত মূর্খ সিনেমাওয়ালা অনায়াসে বলে গেলেন, সত্যজিতের চেয়ে অনেক বেশি টেকনিক্যাল জ্ঞান সন্দীপ রায়ের রয়েছে। বাবার অপমান ছেলে কিন্তু নীরবে সহ্য করল।
তার একটা কারণ রয়েছে। সন্দীপ রায় নিজেকে শিল্পী হিসেবে প্রমাণ করতে চাননা। তিনি ফেলুদা সিরিজে নিজেকে বন্দী করে রাখলেন।
টেকনোলজির বাহাদুরি দিয়ে পথের পাঁচালী নির্মাণ করা যায় না। এই কথাটা উচ্চারণ করেছিলেন জাপানি পরিচালক সত্যজিৎ বাবুর বন্ধু কুরসোয়া।
নন্দনতাত্ত্বিকরা বলেন, যে কোন শিল্পীর প্রধান লক্ষণ হল সরলতা। রবীন্দ্রনাথ বলতেন সহজ কথা সহজ করে যায় না বলা সহজে। পথের পাঁচালী শুধুমাত্র একটি সহজ সরল মানবিক আবেদন যুক্ত সিনেমা নয়। প্রথা ভাঙ্গার দুঃসাহসিক একটি প্রচেষ্টা। সেই যুগের প্রথাগত পথে পথের পাঁচালী সৃষ্টি হয়নি। আমি এখানে বারবার সৃষ্টি শব্দটা উচ্চারণ করছি। ঋত্বিক ঘটক বলতেন, আমি, মানিকবাবু, মৃণাল সেন কেউ পরিচালক নই। আমরা স্রষ্টা। সৃষ্টির আনন্দ পেতে চাই শিল্প কর্মের মধ্যে।
সিনেমা বানানো যায়না। সিনেমা সৃষ্টি হয়।
আমরা বলতে পারি, পথের পাঁচালী ভারতীয় চলচ্চিত্রের ভান্ডারে অনুপম সৃষ্টি।
সৃষ্টিশীল সিনেমা সত্যজিৎ রায়ের হাতে প্রথম সূচিত হয়েছিল। তারপর গণ্ডায় গণ্ডায় সিনেমা তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে হাতেগোনা কিছু ছবি ছাড়া আর কোন টা সৃষ্টি হয়নি। সৃষ্টির সঙ্গে আবিষ্কারের সম্পর্ক গভীর। অনিক দত্ত ভূতের ভবিষ্যৎ আবিষ্কার করেছিলেন। ওটা এক ধরনের সৃষ্টি। তাই বলে অপরাজিত ছবিটাকে কোনোভাবেই আমরা সৃষ্টিশীল কাজ বলতে পারি কি?
পথের পাঁচালী ছবির তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা আরো অনেক রয়েছে। বাংলার গ্রাম, বাঙালি কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সুপ্রাচীন রিচুয়াল লোকবিশ্বাস এই ছবি র পড়তে পড়তে দেখতে পাওয়া যায়। কয়েক হাজার বছর পরে ও এই ছবির অনাগত দর্শক বুঝতে পারবে বাংলার গ্রাম, মানব সমাজ, সামাজিক সংকট, মানব চরিত্রের সৌন্দর্য কেমন ছিল।
এই ছবিতে কেউ অভিনয় করেননি। ক্যামেরা ছিল আশ্চর্য শান্ত, স্নিগ্ধ, এবং কৌতুহলী। এই কৌতুহল আসলে জীবনের প্রতি কৌতুহল।
পরিতাপের বিষয়, বাংলা সাহিত্য রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে যে উত্তরাধিকার অর্জন করেছিল, এবং নতুন ঐতিহ্যের সন্ধানে ব্রতী হয়েছিল, তার ধার কাছ দিয়ে বাংলা সিনেমা হাঁটে নি। সত্যজিৎ বাবুর কাছ থেকে কোনকিছুই শেখেনি পরবর্তী কালে র বাঙালি চলচ্চিত্রকাররা। বরং বিপরীত স্রোতে গা ভাসানো হয়েছিল।
সুতরাং আমরা যদি বলি, পথের পাঁচালী আমাদের দেশের প্রথম একটি সামাজিক রাজনৈতিক বিপ্লবের স্বাক্ষর। যে ছবিটা সৃষ্টি হয়েছিল নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। সস্তা রাজনীতি নয়। নিছক বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়। একজন শিল্পী সমাজবিজ্ঞানের কৌতুহল নিয়ে বাংলার গ্রামীণ সভ্যতার আবিষ্কার করেছিলেন। তাহলে কি ভুল বলা হবে?
অন্যদিকে অনিক দত্ত অপরাজিত ছবিটি নির্মাণ করে পরিবর্তিত সময় শিল্পী ও সমাজবিজ্ঞানের কৌতুহলের পুনর্নির্মাণ করলেন।
জানিনা এই পুনর্নির্মাণ বাঙালির মনোজগতকে কতটা আলোড়িত করতে পারবে।