মনোজ দেবরায়
হাবিব তনভীর এর জন্ম শতবর্ষে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হলো পাঁচ দিনব্যাপী বাংলা একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতা। শিল্পতীর্থ আয়োজিত নব উন্মেষ-২ এ এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে নয়টি দল। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন ২ নং হলে প্রথমদিন অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর অভিনীত হল মিরাকি প্রযোজিত, ‘নারী থেকে নিরা’। নাটকের বিষয়বস্তু ছিল পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা কল্পে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর যুগান্তকারী সৃষ্টি আজাদ হিন্দ ফৌজ, যার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত ছিল ব্রিটিশ সিংহ।
সেই আজাদ হিন্দ ফৌজের ঝাঁসি রেজিমেন্টের এক সাহসী ও একনিষ্ঠ সেনা নায়ক ছিলেন ‘নীরা’ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যার নাম রেখেছিলেন নাগিন কন্যা। এই নিরার উপর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল। সে নিজের পরিবারের মধ্যে আবদ্ধ থেকেও এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে সে ব্রতী হয়েছিল। এমনকি বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে তার স্বামীকে পর্যন্ত রেহাই দেয়নি। এহেন নীরার শেষ পরিণতি ছিল ভয়ংকর। কেননা পরবর্তীকালে অর্থাৎ স্বাধীনতা উত্তরকালে তাঁর খুব করুণ পরিণতির সৃষ্টি হয়েছিল। স্বাধীনতা উত্তরকালে স্থানীয় প্রশাসন তার আশ্রয়টুকু পর্যন্ত ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেয় কিন্তু এতেও তার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ ছিল না, কেননা তিনি নেতাজির জন্য তথা দেশের জন্য আগেই নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। এই ছিল নীরা। তিনি প্রায় ৯২ বছর বেঁচেছিলেন।
ঘটনা প্রবাহে নাটকের প্রয়োজনে যে চরিত্রগুলো এসেছিল তথা অভিনয় করেছিলো, তারা ছিল পৌষালী বর্ধন, সজয়য়ী রায়, প্রতিশ্রুতি দাস, প্রাচী ঘোষ, শ্রাবণী সিংহ, কৃশানু চক্রবর্তী, শুভ্র জ্যোতি সিংহ রায়, অনল বিশ্বাস। লক্ষণীয় বিষয় হল নাটকটিতে অংশগ্রহণকারী সব শিল্পীরাই স্কুল পড়ুয়া, যতদূর শুনেছি সবচাইতে যে বয়সে বড়, সে দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত। এর মধ্যে এমন কয়েকজন আছে তাদের অনায়াসে নাট্যকুড়ি বলা চলে। তাদের মধ্যে মায়ের চরিত্রে এলিভিয়া দেববর্মা, নীরা চরিত্রে শ্রাবণী সিংহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নেগেটিভ চরিত্রে কৃশানু চক্রবর্তী খুবই সফল অভিনেতা বলা চলে।
শুধু তাই নয়, চরিত্রগুলো প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিটা চরিত্রকে সফলভাবে ফুটিয়ে তুলতে সচেষ্ট ছিল।যা এ বয়সে খুবই কষ্টসাধ্য প্রয়াস। সবকিছু মিলিয়ে নাটকটির বেশ গতি ছিল। কোরিওগ্রাফি ছিল খুবই স্বচ্ছ। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগীতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মার্চপাস্ট খুবই মনোগ্রাহী। হিন্দি সংলাপ ব্যবহারে নাটকটি এক সার্বজনীন রূপ পেয়েছে বলা চলে। আলো ও মঞ্চ পরিকল্পনা করেছে মিরাকির নাট্য শিক্ষার্থীরা। সংগীত ও আবহ সৃষ্টিতে কৃশানু চক্রবর্তী যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, পাশাপাশি শুভ্রজ্যোতি সিংহ রায়, অম্লান বিশ্বাস এবং অন্যান্যরা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ছিল। সর্বোপরি নাটকটিকে নিঃসন্দেহে একটি মঞ্চ সফল প্রযোজনা বলা যায়।