Voice Acting: বাচিক শিল্পের অনুশীলন এবং তার জ্ঞান ও বিজ্ঞান

- Advertisement -

দেবা রায়

বাচিক অভিনয়ে ভয়েস ট্রেনিং অত্যন্ত জরুরী বিষয়। যেটা ছাড়া বাচিক অভিনয় (voice acting) একেবারেই অসম্ভব। গান, কবিতা পড়া, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করা বা সংবাদ পাঠ করা সব কাজেই বাচিক অভিনয় বিদ্যা থাকা দরকার। এইসব কাজে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে  নিজের দক্ষতাকে প্রতিনয়ত চর্চা করে যেতে হবে। ধরা যাক আপনি যদি গান করেন তার সাথে কবিতা পড়তে চান, দুটো কাজ বাচিক হলেও দুটির চর্চাগত দিক পৃথক। আবার আঙ্গিক অভিনয়ের ক্ষেত্রে সেটাও আলাদা।  অর্থাৎ এক বাচিক অভিনয়ে অনেক বিভাগ আছে। আপনি সংবাদ পাঠ করতে পারেন, কোনো অনুষ্ঠান এংকারিং করতে পারেন, আবৃত্তি , ডাবিং, অডিও নাটক, ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েস ওভার ইত্যাদি না বিষয়েই আপনি কাজ করতে পারেন। আবার একটি ক্ষেত্রে পারদর্শী হতেই পারেন। এটা আপনার কর্মক্ষমতার ওপ্র নির্ভর করবে।

এখানে ১৫ প্রশ্নের সমাধান দেয়া রইল, আপনি পেশাদার বাচিক অভিনেতা হতে চাইলে এই ভাবে নিজেকে গড়ে নিতে পারেন।

১। কিভাবে ভয়েস অভিনয় শেখা শুরু করব?

1. আপনার দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করুন।বাচিক অভিনয় প্রশিক্ষণ দি ধরনের। এক অভিনয়ের ক্লাস নেওয়া এবং দুই একজন প্রশিক্ষক নিয়োগ করা।

2. আপনার ভয়েস সংজ্ঞায়িত করুন

3. ডেমো রিল রেকর্ড করুন।

4. ধারাবাহিকভাবে অডিশন দিয়ে যান।

5. প্রতিদিন নিয়ম করে অনুশীলন করুন।

6. এই শিল্পে আপনার যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন।

২। নিজে নিজে বাচিক অভিনয় (voice acting) শেখা যায়?

হ্যাঁ তা যাবে না কেন? নিজে নিজে শেখা তো সবচেয়ে আদিমতম পদ্ধতি। প্রথন যেদিন কাজ শুরু হয়েছিল, তখন তাকে কে অভিনয় শিখিয়েছিল? অর্থাৎ নিজে নিজে  এই বিদ্যায় অভ্যাস করাই যায়। যাকে আমরা বলি … আপনাকে তার জন্য বই পড়তে হবে, ভিডিও দেখতে হবে। কিন্তু একজন প্রকৃত শিক্ষক পেলে আপনি কি টেকনিক  জানতে পারবেন। শুধু জানলে হোল না, সেগুলিকে নিয়মিত অভ্যাস করতে হবে। আপনি নিজে নিজে শিখুন বা কারোর কাছে প্রশিক্ষণ নিন সব ক্ষেত্রেই নিজেকে চর্চার মধ্যে রাখতে হবে। পেশাদার অভিনেতা হতে গেলে দক্ষতাই আপনার পুঁজি। মনে রাখবে যিনি আপনাকে টাকা দিচ্ছেন উনি আপনার দক্ষতাকে কিনছেন, অর্থাৎ সেখানে কোনো গাফিলিতি থাকা যাবে না।

৩। ভয়েস অভিনয়ের জন্য কি কোনো কোর্স আছে? খরচ কত? 
অনলাইনে ভয়েস অ্যাক্টিং কোর্স (online Voice Acting courses)  রয়েছে সেখানে সঠিক অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার সাথে বাচিক অভিনয় রপ্ত করতে পারেন। টাকার অঙ্কের পরিমাণ 40,000/- থেকে 50,000/- প্রতি মাসে। এই কোর্স অনুসরণ করে বাচিক  অভিনয় শিখলে অ্যাক্টিং শিখতে একসময় এসে পূর্ণ-সময়ের ক্যারিয়ার (full-time career) তৈরি করতে পারেন।আর যদি এটি ব্যয় সাপেক্ষ মনে হয় তাহলে পরিচিত কোন দক্ষ ভয়েস ট্রেনারের অধিনে এই বিদ্যা অভ্যাস করুন। এখন অনলাইনে (online)ভয়েস আর্টিস্ট এর চাহিদা খুবই আছে।   
৪। পেশাদার বাচিক অভিনয় করার জন্য আপনার কি কি যোগ্যতা থাকা দরকার? 
না বাচিক অভিনেতা হতে গেলে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতার দরকার হয় না। এই পেশায় প্রতিযোগিতার ভীড় প্রবল। এক্মাত্র সেই কারনে আপনার এক এবং প্রধান যোগতা আপনার বাচিক অভিনয়ের দক্ষতা। আপনার স্বরের কোয়ালিটিও সমান গুরুত্ত্বপুর্ণ, খোলামেলা অডিশনের মাধ্যমে আপনি আপনার সেই দক্ষতা দিয়েই কাজ খুঁজে নিতে পারেন। যদিও এই ক্যারিয়ারে অনেকে  উচ্চ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, তাহলে এই বিষয়ে অভিনয় ও কন্ঠ নিয়ে কলেজ স্তরে পঠন পাঠন করে। তাদের ক্ষেত্রে পি এইচ ডি করার সুযোগও থাকে, সরকার থেকে স্কলারসিপ দেয়া হয়। 
৫। বাচিক অভিনয় কি খুব সহজ কাজ? 

না সেরকম কিছু নয়। এইভাবে কোনটা সহজ আর কোনটা কঠিন এটা এইভাবে বলা যায় না। নিজের দক্ষতাকে আগে বুঝে কাজ নামতে হবে। না জেনে কাজে নামলে সব কাজই কঠিন। এওবে হ্যাঁ খু চ্যালেঞ্জিং, সেইভাবে যদি দেখেন তাহলে কাজটি খুবই সহজ, কারণ আপনাকে মুখস্থ করে বলতে হচ্ছে না, আপনি সংলাপ সামনে রেখে অভিনয় করতে পারেন। আবার আপনি এই কাজ শিখে নিজেই কাজটা করে নিতে পারেন, ঘারের কাছে পরিচালকের দীর্ঘ শ্বাস পড়বার ভয় নেই। অর্থাৎ আপনি মুক্ত। কিন্তু সিনেমা শিল্পে ডাবিং এর ক্ষেত্রে বিষয়টি কিন্তু আরও কঠিন। আমরা পরে এই ডাবিং-এর বাচিক নিয়ে আলোচনা করবো।  
৬। আপনি কি বাচিক অভিনয়ের জন্য অনলাইনে কাজ করতে অডিশন দিতে আগ্রহী?  

আগ্রহ প্রকাশের আগে নিয়ে আপনার কিছু বাচিক অভিনয়ের অংশ অডিও করে নিজে শুনুন, ভালো লাগছে কি না সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হোন, তারপর নিজের ভয়েস অভিনয় রেকর্ড করে অনলাইনে নির্দিষ্ট সাইটে দিয়ে রাখুন, আপনার অডিও তাঁদের কাস্টিং ডিরেক্টর, প্রোডিউসার শুনে নেবেন, আপনাকে কল করার পর আপনার অনলাইন অডিশন (live voice acting audition) হবে সেখানেও আপনার দক্ষতাকে আপনার রেকর্ড করা ভয়েসের মতো বা তার চেয়ে ভালো করতে হবে, তার চেয়ে খারাপ করা যাবে না, আপনি তাহলে বাতিল হয়ে যাবেন। আগেই বলেছি এখানে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি।  
৭। অনলাইনে ভারতীয় বাচিক অভিনেতারা (voice actors) কত বেতন পান?     
ভারতে ভয়েস ওভার আর্টিস্টের বেতন ₹ 0.9 লাখ থেকে ₹ 8.0 (₹ 0.9 Lakhs to ₹ 8.0 Lakhs)  লাখের মধ্যে। যার গড় করলে দাঁড়ায়  বার্ষিক ₹ 3.3 লাখ টাকা। অনলাইনে নিয়মিত কাজ করা এমন ১০০ জন বাচিক শিল্পীর (Voice Over Artists.) প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তি করে এই তথ্য দেওয়া হল।  
৮। বাচিক অভিনয় কি দক্ষতা নাকি প্রতিভা(skill or talent)?  
বাচিক অভিনয় অবশ্যই এক দক্ষতা। এখানে প্রতিভা বলে কিছু নেই, সম্পুর্ণটা দক্ষতার প্রকাশ। নিজের গভীর চর্চা ও অধ্যয়ন আপনাকে সেরা বাচিক অভিনেতা করতে পারে। অনলাইনে এই ভয়েস অভিনেতাদের তালিকা দেখলেই বুঝবেন, তারা কেউ বিশাল বিশাল ব্যাপার নন, শুধুমাত্র চর্চার সাহায্যে তারা আজ এইকাজে পারদর্শী।  
৯। কণ্ঠস্বর কি অন্যান্য অভিনয়ের থেকেও কঠিন? 
ভয়েস অ্যাক্টিং অভিনয়েরই একটি ফর্ম। এখানে শুধুমাত্র আপনার কন্ঠ দিয়ে অভিনয় বা চরিত্রটি গড়ে তুলতে হবে। আপনাকে আবেগ, সৌন্দর্য, স্বচ্ছতা প্রকাশ করতে হবে। একজন মঞ্চ অভিনেতার সমস্ত গুণাবলী আপনার থাকতে হবে। কিন্তু তা শুধুমাত্র কণ্ঠের সাহায্যে। এখানে বিষয়টি যে খুব সহজ তা কিন্তু নয়, হাত পা সঞ্চালনের ফলে অভিব্যক্তি খুব ভালো আসে, কিন্তু বাচিক অভিনয়ের সময় কোনোরকম ক্যারিকেচার বা অঙ্গ-সঞ্চালন করা যাবে না। স্থির হয়ে চরিত্রকে অডিও মাধ্যমে মূর্ত করতে হবে। অর্থাৎ একজন বাচিক অভিনেতা একটি বিষয়কে ব্যবহার করে সমগ্র বা একটা গোটা চরিত্র হয়ে ওঠে।  
১০। বাচিক অভিনেতা হতে প্রতিবন্ধকতা কি? 
·      সবসময় কাজ না থাকা। এখানে অনবরত কাজ খুঁজে যেতে হবে। কাজ পাওয়াটা চ্যালেঞ্জিং। কারণ প্রতিযোগিতা।  
·      ভীষণ প্রতিযোগিতা।
·      সেটআপ তৈরি বা নিজের কাছে রাখা ব্যয়বহুল।  
·      কণ্ঠস্বর খুব হার্ড হতে পারে। 
১১। কি কারণে একজন বাচিক অভিনেতার অভিনয় খারাপ হয়? 
বাচিক অভিনেতার সম্পদ তার কণ্ঠস্বর। সেখানে কোনো কম্প্রোমাইজ করা যাবে না। আর বাচিক অভিনয়ের ক্ষেত্রে শিল্পীকে স্বরক্ষেপনের রীতি সব জানতে হবে। শুধু জানা নয়, নিখুঁত ভাবে জানা। আর একটা বিষয় মনে রাখা, সেইকাজে যদি ডিরেক্টর থাকেন তাহলে অভিনেতাকে সব সময় পরিচালক কি চাইছেন সেটাই অভিনেতাকে দিতে হবে।জোরে কথা বললে সেটা বাদ হয়ে যেতে পারে।    
 ১২। বাচিক অভিনেতাকে সফল হতে গেলে কি করতে হবে?
বাচিক অভিনয়ে নাটকীয়তা থাকা দরকার, তার জন্য অভিনেতার অডিলিউসন জানাটা জরুরী, পরিচালক সেই মডিলিউসন বার বার চাইলে আপনাকে সেই কথা মত| দিতে হবে। কারণ সেটা চরিত্র ডিমান্ড করে। আপনি যদি বিসশ্বাসযোগ্য পারফরমেন্স দিতে পারেন তবেই আপনার সাফল্য আসবে, অর্থাৎ আপনার কাজ ভালো হলে তা পাঁচ জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। আপনার ব্যবহারও এই কাজের জন্য ভীষণভাবে লক্ষ্য করা হয়। আসলে সফল হতে গেলে আপনার স্পেসালিটি থাকতে হবে। এটাই শেষ কথা।  
১৩। বাচিক অভিনেতা কি ক্লান্ত কখনও ক্লান্ত হয়ে পড়ে?

হ্যাঁ প্রায়ই পেশাদার ভয়েস ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই ক্লান্তি ভাব দেখা যায়।যেমন- শিক্ষক, গায়ক এবং কল সেন্টারের কর্মচারী ইত্যাদি। দৌড়ে আপনার পা যেমন ক্লান্ত হয়ে যায়, তেমনি দীর্ঘ সময় ধরে কণ্ঠের ব্যবহারে ভয়েসবক্সে চাপ পরার কারণে কণ্ঠে ক্লান্তি আসে।এক্ষেত্রে ভয়েস থেরাপিস্টের পরামর্শ নেয়া দরকার, তিনি যা করতে বলবেন তা করতে হবে।সেই সুপারিশের মধ্যে একটি, প্রতি 60 মিনিটের ভয়েস  ব্যবহার করলে 10 মিনিট ভয়েস বিশ্রাম নিতে হবে।   

 ১৪। বাচিক অভিনয়ের জন্য কীভাবে নিবন্ধন করবেন?

কীভাবে বিভিন্ন শিল্পে ভয়েস অভিনয়ের চাকরি খুঁজে পেতে পারেন তার পদক্ষেপগুলি দেয়া হল:

1. একটি পেশাদার পোর্টফোলিও তৈরি করতে হবে।

2. সোশ্যাল মিডিয়াতে অনুসন্ধান করতে হবে।

3. একটি ভয়েস অভিনয় প্রোফাইল তৈরি করুন।

4. অডিশনের জন্য নানান ওয়েবসাইট চেক করতে হবে।

5. ডিজিটাল ফ্রিল্যান্স পরিষেবা ব্যবহার করতে পারেন।

6. একজন এজেন্টের সাথে কাজ করতে পারেন।

7. অভিনয় এবং কণ্ঠ প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।

8. নিজস্ব হোম স্টুডিও সেট আপ করতে পারেন।

১৫। কিভাবে বাচিক অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু করবেন?

একজন অভিনেতা হিসাবে অভিজ্ঞতা অর্জন শুরু করতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য এখানে নয়টি পদক্ষেপ রয়েছে:

1. স্থানীয় কাজের  (local gigs) খোঁজ রাখুন।  

2. অভিনয়ের ক্লাস নিন।

3. নিজের শিক্ষাক্রম চালিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ চর্চা।

4. একটি স্থানীয় থিয়েটারে যোগ দেয়া।

5. এই শিল্প সম্পর্কে জানুন।

6. আপনার রিজিউম তৈরি করুন।

7. একটি পেশাদার কাজ পাবার চেষ্টায় থাকুন।

8. অডিশন দিতে শুরু করুন।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -