তণিমা টাট
সম্প্রতি একডেমী মঞ্চে অভিনয় হয়ে গেল সংস্তব প্রযোজিত সাম্প্রতিক নাটক ‘উড়ন্ত তারাদের ছায়া’। এই মুহূর্তের এক অত্যন্ত আলোচিত নাটক! নাটক, আলো, আবহ, ও নির্দেশনা দেবাশিস।
মুঘল সাম্রাজ্যের ত্রয়োদশ সম্রাট ও প্রথম বাহাদুর শাহ র পৌত্র মুহাম্মদ শাহ আর পারস্যের সম্রাট নাদির শাহ এই নাটকের প্রধান দুই চরিত্র। দুটো চরিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী! নাদির শাহ যতটাই নিষ্ঠুর, নৃশংস ঠিক ততটাই ক্ষমাশীল, শান্ত, সঙ্গীতানুরাগী মুহম্মদ শাহ! এই দুই চরিত্রকে কেন্দ্র করে নাট্যকার ও নির্দেশক দেবাশিস মঞ্চে যেন রঙ তুলি দিয়ে ছবি এঁকেছেন! একের পর এক দৃশ্যের যথাযথ অবতারণায় ইতিহাসের খনন কার্যটি বেশ দক্ষতার সাথে মঞ্চে উপস্থাপীত করলেন।
আলোর এমন মায়া-খেলা কবে শেষ দেখেছি মনে করতে পারছি না! জয়দীপ ও মঞ্জীমার কন্ঠের মাদকতায় আবহ এক অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে, মঞ্চসজ্জা কি সুচারু ভাবে বাদশাহী পরিবেশ এনে দিচ্ছিল শুধু ওড়না দিয়ে পর্দা টেনে!
আর অভিনয় কি বলবো! দুই প্রধান চরিত্রের দুই অভিনেতা সঞ্জীব সরকার ও তথাগত চৌধুরী শুধু অভিনয় দিয়েই দর্শকদের ঐ সময়ে নিয়ে চলে গেলেন! যেমন শারীরিক অভিনয় তেমনি নিখুঁত সংলাপ উচ্চারণ! নাদির শাহ’র জ্যেষ্ঠ পুত্রের ভূমিকায় সুস্নাত ভট্টাচার্য্য বেশ ভালো!
মুহাম্মদের দাদীর চরিত্রে একটি দৃশ্যে অভিনয় করেই কঙ্কাবতী বুঝিয়ে দিয়েছেন উনি আমাদের সকলের প্রিয় ও প্রণম্য অভিনেতা দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুযোগ্য কন্যা! দাদী চরিত্রটির বয়স শুধুমাত্র কন্ঠস্বর আর বসার ভঙ্গীমায় অসাধারণ ভাবে ফুঁটিয়ে তুলেছেন কঙ্কাবতী, সঞ্জয় পালের রূপ সজ্জা চরিত্র টিকে আরো দৃঢ় করতে সাহায্য করেছে।
অমৃতা ও সায়ন্তন খুব সাবলীল! আমরা যারা থিয়েটার করি, প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করি এই নাটক তাদের জন্য দেখা অবশ্যই উচিত! ধন্যবাদ সংস্তব কে ধন্যবাদ নির্দেশক দেবাশিস কে এমন একটি নাটক আমাদের উপহার দেবার জন্য।
আজ এই অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে হিংসা আর প্রেমের এমন সুচারু প্রয়োগ নাটকের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। ‘মৃত্যু যেন ঘৃণার মতই উজ্জল আর জীবন ভালোবাসার মত করুণ!’ এই সংলাপ টা মনে থাকবে অনেক দিন!
পরিবর্তী অভিনয় ৯ এপ্রিল বেহালা শরৎ সদন।