Tuesday, December 24, 2024
Tuesday, December 24, 2024
Homeবাংলা নাটকথিয়েটারের নেশায় মজে আছে সাঁইথিয়ার সোহিনী

থিয়েটারের নেশায় মজে আছে সাঁইথিয়ার সোহিনী

বিজয়কুমার দাস

(থিয়েটারে নতুন প্রজন্ম : পর্ব ১৫)

বীরভূমের সাঁইথিয়ার সোহিনী কর্মকারের সর্বক্ষণের ধ্যান জ্ঞান থিয়েটার। শুধুমাত্র থিয়েটারের জন্য বীরভূমের সাঁইথিয়া থেকে স্কুটি চালিয়ে বর্ধমানের তেপান্তর নাট্যগ্রামে যায় রিহার্সাল দিতে। সাঁইথিয়া থেকেই তার হাতেখড়ি। কিন্তু এখন বর্ধমানের তেপান্তর নাট্যগ্রামের নাট্যক্ষেত্রের এবং আমরা নাট্যদলে অভিনয় করে। ‘এবং আমরা’ দলের কর্ণধার কল্লোল ভট্টাচার্যর নির্দেশনায় অভিনয় করেছে সেই দলের নাটকেও। পাশাপাশি ‘সাঁইথিয়া পাড়ি থিয়েটার’ নামে নিজের নাট্যদল তৈরি করেছে। 

আসলে থিয়েটার করার ঝোঁকটা তাকে পেয়ে বসেছিল তার মা শর্মিষ্ঠা কর্মকারের অভিনয় দেখে। সোহিনীর মা শর্মিষ্ঠা দীর্ঘদিনের অভিনেত্রী। সাঁইথিয়া আসরনাট্যম, সপ্তপ্রদীপ সাংস্কৃতিক সোসাইটির বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করেছে শর্মিষ্ঠা। তাই থিয়েটারে যুক্ত হতে কোন সমস্যা হয়নি তার। মামার বাড়ির দিক থেকে যেমন উৎসাহ পেয়েছে সোহিনী,তেমনই নিজের বাড়ির মা – বাবার কাছেও। তাই নিজেই নাটকের দল তৈরি করে থিয়েটারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গড়ে তুলছে শহরের শিশু কিশোরদের।

এ প্রসঙ্গে সোহিনী জানিয়েছে, মা এর সাথে নাটকের রিহারসাল দেখতে যেতে যেতেই থিয়েটার করার ইচ্ছেটা জেগেছিল।আর যতটুকু শিখতে পেরেছি তা ছড়িয়ে দিতে চাই ছোট শিশু কিশোরদের মধ্যে। সোহিনীর বিশ্বাস, থিয়েটার  এমন একটা মাধ্যম যেখানে সব রকমের শিল্পকর্ম জড়িয়ে আছে।

সোহিনীর থিয়েটারের হাতেখড়ি হয়েছিল সাঁইথিয়া আসরনাট্যম নাট্যদলে। তার মা শর্মিষ্ঠাও এই দলে অভিনয়ে যুক্ত। মায়ের হাত ধরেই সোহিনী এসেছিল আসরনাট্যমে। এই দলে রবি ঠাকুরের “তোতা কাহিনী” অবলম্বনে নাটকে তার প্রথম অভিনয়। পরে এম্ফিথিয়েটারওয়ালা, বীরভূম রেপার্টারি থিয়েটার, ভবানীপুর সপ্তপ্রদীপ সাংস্কৃতিক সোসাইটি সহ পশ্চিম বর্ধমানের এবং আমরা নাট্যদলে বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করেছে।

এবং আমরা নাট্যদলে কল্লোল ভট্টাচার্যের নির্দেশনায় নীল পীড়িতের ফুল নাটকে  ফুলমণি এবং সপ্তপ্রদীপ দলে সুব্রত ঘটকের পরিচালনায় “বাঁধা সুর বেতারে” নাটকে বেদেনী চরিত্র তার অভিনীত প্রিয় চরিত্রের তালিকায়। এই চরিত্র দুটি তার কাছে ছিল একটা চ্যালেঞ্জ। সে জানিয়েছে চ্যালেঞ্জ নিতে তার ভাল লাগে।

থিয়েটার জগৎকে এখনো পর্যন্ত সে যতটা জেনেছে তাতে এই জগৎটা তার ভাল লাগার জগৎ। নিজেকে গড়ে তোলার জগৎ। দর্শকের সামনে অভিনয় করাটা তার  একটা প্রিয় কাজ বলে সে মনে করে।তার মনে হয় নিজেকে আবিষ্কার করার একটা সুযোগ আছে থিয়েটারে।

থিয়েটার করে ভালভাবে বাঁচতে চাইলে বাঁচা যায় বলেই সে মনে করে। সে দেখেছে, বহু মানুষ তো থিয়েটার করেই বেঁচে আছে। এভাবেই থিয়েটারে জড়িয়ে থেকে বাঁচতে চায় সোহিনী।

থিয়েটারের জগতে আসার জন্য তার মা শর্মিষ্ঠার ইচ্ছা তার কাছে প্রেরণা। তার থিয়েটারে আসার পথটা তার মা-ই তৈরি করে দিয়েছে। নানা প্রতিকূলতা থাকলেও থিয়েটার নিয়েই থাকতে চায় সোহিনী।

এ পর্যন্ত তার অভিনীত নাটকগুলি হল নীল পীড়িতের ফুল, কঙ্কাল, মুক্তকথা, বাঁধা সুর বেতারে, প্রথম রঙ্গ, কাঙাল ডোম, কালিদাসের হেঁয়ালি, একলব্য, রাগ কোরো না, তোতা কাহিনী ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথের কঙ্কাল অবলম্বনে একক অভিনয়ে তার দলের সাম্প্রতিক প্রযোজনাটি দর্শক সমাদৃত হয়েছে। সম্প্রতি কলকাতার মাচার মানুষ নাট্যদল রাজ্যের একগুচ্ছ তরুণ নাট্যকর্মীর সাথে সোহিনীর নাট্যকর্মকে সম্মান জানিয়ে কলকাতার তপন থিয়েটারে তাকে সম্মানিত করেছে।

নাটকের অভিনয়ের কর্মশালা করেছে গম্ভীরা ভট্টাচার্য ও ভূমিসূতা দাসের প্রশিক্ষণে। এছাড়া বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগেও অভিনয় শেখার সুযোগ পেয়েছে। সোহিনী জানিয়েছে, লাভ লোকসানের হিসাব করি না। বুঝেছি, থিয়েটার একটা নেশা। এই নেশাতেই মেতে থাকতে চায় সোহিনী কর্মকার। 

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular