কেট ডগলাসের নাটক ‘দ্য এপিয়ারি’, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলে

- Advertisement -

শুভ্রা চক্রবর্তী (নিউইয়র্ক)

আমাদের দেশে নাটকের ভাবনা এখনও মানুষের চাওয়া-পাওয়া, সুখ-দুঃখ, অধিকার-অনধিকারের মধ্যে আটকে থাকলেও বিদেশি থিয়েটারে বিষয়বস্তুর ভাবনায় কিন্তু অমূল পরিবর্তন এসেছে। যে পরিবর্তন মানুষের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার উর্দ্ধে উঠে পরিবেশের কথা বলে। কথা বলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের। ভবিষ্যতের গল্প নিয়ে এই রকম একটি নাটক হল কেট ডগলাসের ‘দ্য এপিয়ারি’। ১৩ তারিখ, মঙ্গলবার নিউইয়র্ক সিটির টনি কাইসের থিয়েটারে এই নাটকের প্রথম শো মঞ্চস্থ হল।

আমরা প্রায় সবাই জানি যে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা হয় সব ধরনের জীবজন্তু, পশুপাখি, গাছ-পালাকে নিয়ে। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে বাস্তুতন্ত্র। এই বাস্তুতন্ত্রই কিন্তু মানুষকে পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে সেই বাস্তুতন্ত্রেরও পরিবর্তন হচ্ছে। একে একে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক পশু-পাখি, জীব-জন্তুর প্রজাতি। সর্বগ্রাসি মানব সভ্যতা তার লোলুপ লেহিহান জিহ্বায় একে একে গিলে ফেলছে প্রকৃতির রক্ষাকর্তাদের। কিন্তু এতে আদতে কার ক্ষতি হচ্ছে? নিশ্চিত ভাবে বলা যায় – মানুষের। কীভাবে মানুষ তার নিজের পায়ে নিজের কুড়ুল মারছে, সেটাই মৌমাছিদের লুপ্ত হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে ‘দ্য এপিয়ারি’ নাটকটিতে।

কেট ডগলাস তাঁর নাটক ‘দ্য এপিয়ারি’তে মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির যে সম্পর্ক – সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। নাটকের গল্পটা মোটামুটি এই রকম – আজ থেকে ২২ বছর পর পৃথিবী থেকে মৌমাছির শেষ প্রজাতিও মুছে যেতে বসেছে। এই পরিস্থিতিতে ফুল থেকে ফল কী করে হবে, মধু কোথা থেকে আসবে, মধুজাত অন্যান্য জিনিস, ওষুধপত্রই বা কিভাবে তৈরি হবে সেনিয়ে মহাচিন্তায় পড়েছেন কয়েকজন মানুষ।

শেষ মৌমাছিগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ল্যাবেরটরিতে লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গিওয়েন, পিলাররা। পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালিয়ে যেতে তাঁরা জোরা নামে পিএইচডি ডিগ্রিধারীকে কাজে নিয়োগ করে। পিলার এবং জোরা কঠিন পরিশ্রম করতে শুরু করে। তাঁরা কোনোমতেই মেনে নিতে পারে না যে শেষ মৌমাছিগুলিও মরে যাবে। কিন্তু এতকিছুর পরেও যখন মৌমাছিগুলি ঝিমিয়ে পড়ে তখন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে তাঁদের দেশের সমস্ত নিয়ম-কানুনকেও অমান্য করতে হয়। জোগাড় করা হয় স্বেচ্ছাসেবকদের। মৌমাছিটিকে বাঁচাতে যাঁদের ওপরে শুরু হয় নানান পরীক্ষা-নীরিক্ষা।

সন্দেহ নেই, একটি সিরিয়াস বিষয়কে নাটকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন নাট্যকার কেট ডগলাস। হয়তো ব্যাপারটা একটু বেশিই গুরুগম্ভীর হয়ে যাচ্ছে বলে নাটকে তিনি হালকা সংলাপ ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন। আর তাতেই নাটকটির অনেক জায়গায় একটু ফিকে হয়ে গিয়েছে। নাটকের শেষের দিকে গ্যাসমাস্ক পরিয়ে যেভাবে ল্যাবেরটরির পরীক্ষা-নীরিক্ষাকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে – সেটা না করলেও হয়তো চলত।

সেট সাজিয়েছেন ওয়াল্ট স্পেগলার্স। মঞ্চে ল্যাবেরটরিকে বাস্তবসম্মত করে তুলতে স্বচ্ছ জালিকার ব্যবহার বেশ ভালোই লেগেছে। স্বচ্ছ জালিকার মধ্যে মৌমাছিদের এদিক-ওদিক উড়ে বেড়ানো – দর্শকদের মনে অন্যমাত্রা যোগ করে। সব মিলিয়ে ৭০ মিনিটের নাটকটিকে চলনসই বলা যেতে পারে।

নাটকের নাম – দ্য এপিয়েরি

নাট্যকার, পরিচালক – কেট ডগলাস

সেট সাজিয়েছেন – ওয়াল্ট স্পেগলার্স

অভিনয়ে – কেট ডগলাস, এপ্রিল ম্যাথিস, টেইলর স্কিলিং। কারমেন এম হারলি প্রমুখ

আগামী ৩ মার্চ নাটকটির দ্বিতীয় শো আছে।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -