Tuesday, December 17, 2024
Tuesday, December 17, 2024
Homeআলোচনাফুলেশ্বর উদ্দীপনের প্রযোজনায় ‘দগ্ধ সময়’

ফুলেশ্বর উদ্দীপনের প্রযোজনায় ‘দগ্ধ সময়’

শুভশ্রী দত্ত

ফুলেশ্বর উদ্দীপনের প্রযোজনায় ‘দগ্ধ সময়’ ইতিহাস ও সময়ের আর্তনাদ। প্রতিটি দর্শক চোখের পল্লবটুকুও ফেলতে পারল না, টানা এক ঘন্টা দশ মিনিট ধরে৷ রচয়িতা ও নির্দেশক এবং গল্পের মূখ্য চরিত্রের অভিনেতা অনুপ চক্রবর্তীর নাটক ‘দগ্ধ সময়’ এর উপস্থাপন ঘটল৷ জার্মাণ নাৎসি দলের নোংরা চক্রান্তে, অগণিত ইহুদি জাতির প্রতি অত্যাচারের নির্মম পরিস্থিতিই দৃশ্যায়িত হল, এই গল্পের মধ্য দিয়ে৷ সংখ্যালঘু, অবহেলিত, অত্যাচারিত ইহুদি জাতির উপর অমানবিক নিষ্ঠুরতার ঐতিহাসিক প্রতিচ্ছবির রূপ তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷  

চূড়ান্ত নিষ্ঠুর পরিস্থিতি, জার্মানের নাৎসি বাহিনীর এই পাশবিক রূপের জ্বলন্ত কাহিনী ব্যক্ত করা হয়েছে এই ‘দগ্ধ সময়’ নামক নাটকের মধ্য দিয়ে৷ যে ইতিহাস, পৃথিবীর মানুষদের বার্তা দেয় যে, বর্ণবাদকে মূখ্যত অজুহাত হিসেবে খাড়া করে ইহুদি জাতির মানুষদের হত্যা করার নানান নোংরা, পাশবিক তরিকা যা ব্যবহার করে জার্মান নাৎসি দল। লক্ষ লক্ষ মানুষদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল তারা৷ ওরা ইহুদিদের জন্য হাজার হাজার বন্দীশিবিরের ব্যবস্থা করেছিল৷ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের আয়োজন হয়েছিল৷ অতএব রাজনৈতিক কারণ, মিথ্যেপথে এতটাই শক্তিশালী তৈরী করা হয়েছিল যে, হত্যাপুরীতে না যাওয়ার কারণ একেবারে ধূলিসাৎ হয়ে যায়, অত্যাচারিত, সংখ্যালঘূ ইহুদি জাতির মানুষগুলির কাছে৷ তাদের যুদ্ধবন্দী করে, ক্রীতদাস তৈরী করা হত৷ এছাড়াও গ্যাসচুল্লী কক্ষে, কিছু ইহুদিদের বাছাই করে, ঢুকিয়ে দেওয়া হত৷ এরপর, মৃত ব্যক্তির চামড়া ব্যবহার করে সৌখিন ব্যবহারিক জিনিসও পর্যন্ত তৈরী করা হত৷ এই নিষ্ঠুর সময়ের দাউ দাউ করে, জ্বলে ওঠা পরিস্থিতিরই রূপদান ঘটে, এই নাটকের মধ্য দিয়ে৷

জার্মান নাৎসি দলের সদস্যদের পতাকার বিশেষ চিহ্ন, হাতে বেঁধে চরিত্রের যথাযথ মূল্যায়ন ঘটিয়েছে, এই নাটকে কার্ল নামক চরিত্রে যে এই দলের প্রধান নেতা৷  

অত্যাচারিত ইহুদি জাতির মানুষদের গ্যাসচুল্লীতে ঢুকিয়ে হত্যার পরে তাদের চামড়া দিয়ে সৌখিন জিনিস, বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার্য্য সাজসজ্জার জিনিস তৈরী হত৷ ইলসা নামে, জার্মান নাৎসি দলের এক সদস্যার গৃহসজ্জায়, এ’সব জিনিস ব্যবহৃত হয়েছে৷ ইলসা, কার্ল এবং আরও দু’জন জার্মান নাৎসি সদস্যের সাথে অট্টহাসিতে জমে ওঠে মজলিশ, মদের ফোয়ারায় ভরিয়ে তোলে জমজমাট নৈশ আড্ডা৷ এই সময়েই আলোচিত হয়, ইলসার ঘরে সাজিয়ে রাখা জিনিসপত্রের উৎসের বিষয়ে৷ এভাবেই নাৎসি দলের নিষ্ঠুরতার যথাযথ রূপ ফুটে ওঠে, নাটকের প্রথম দৃশ্যের মধ্য দিয়ে৷

জার্মান নাৎসিদের অতীব নিষ্ঠুরতা এগিয়ে নিয়ে যেতে,  বাধ সাধলো প্রকৃত ভালোবাসা৷ এক ইহুদি কন্যা মারিয়াকে বন্দী অবস্থায় নিয়ে আসা হল৷ এক সময়, মারিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কার্ল অর্থাৎ নাৎসি দলের নেতার এক গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল৷ এই অতীতই যে গল্পের নিষ্ঠুর পরিণতির পাশবিক অবস্থার সঙ্গে চলল বিপরীত মুখী দ্বন্দ৷ জ্বলন্ত সময়ের মাঝে, ব্যাঘাত ঘটাল নিঃস্বার্থ ভালোবাসা৷ নাটকের গল্পে নাৎসি দলের সাথে, ইহুদি জাতির এই নোংরা দ্বন্দ্বের খানিকটা বিরতি আনলো এই সম্পর্কের সৌন্দর্য৷ মারিয়ার পরিবারে তার বাবা ,ভাই এদেরকে গ্যাস চুল্লীতে ফেলে দেবার নিষ্ঠুর সিদ্ধান্তে ও এল বিরতি৷ গল্পে এই সুন্দর রূপ নাৎসি জাতির অমানবিক অত্যাচারের বাড়াবাড়িকে কিছুটা বিরতি দিয়ে, জ্বলন্ত সময়ের আগুনের তেজকে খানিকটা হাল্কা করে দর্শকের সামনে উপস্থাপন ঘটল।

নাৎসি দলের সদস্যা ইলসা, ইহুদিদের উপর অত্যাচার করার নেশায় মত্ত হয়ে ওঠার চরিত্রকে স্বাভাবিক ছন্দে ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেত্রী শ্রেয়সী রায়৷ মারিয়া ইহুদি জাতির অত্যাচার থেকে নাৎসি দলকে  আটকাতে, নিজের ভালোবাসাকে বারংবার সামনে এনেছে৷ অত্যাচারের পরিস্থিতিকে থামাতে, প্রতিবাদী চরিত্রকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তুলে ধরেছেন, অভিনেত্রী সুদেষ্ঞা ভুঁইয়া ৷ আরও দুইজন নাৎসি সদস্য, পলের চরিত্রে পলাশ মাইকেল ও এম্রিকোর চরিত্রে শঙ্কর মাকাল৷ সমস্ত চরিত্রকে পরিচালনার মধ্য দিয়ে সুন্দরভাবে  উপস্থাপনার সাথে, নিজের চরিত্রকে একদিকে নিষ্ঠুরতা অপরদিকে আবেগপ্রবণ, এই দুই রূপের সমতা বজায় রেখে, দশর্কের সামনে যথাযথভাবে নিজেকে তুলে ধরলেন নির্দেশক অনুপ চক্রবর্তী মহাশয়৷

নাটকের অসাধারণ উপস্থাপনা তখনই সম্ভব হয় যখন সেই প্রযোজনার আলো, মঞ্চ ও আবহ বা সঙ্গীতের সঠিক প্রয়োগ ঘটে। আলোর দায়িত্বে ছিলেন শ্যামল দলুই, মঞ্চ সজ্জায় ছিলেন রামানুজ চ্যাটার্জী, আবহে রুদ্রজীৎ বাগ এবং সঙ্গীতে শুভঙ্কর মণ্ডল।  

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular