Tuesday, December 3, 2024
Tuesday, December 3, 2024
Homeবাংলা নাটকভারতীয় ও চীনা নাটকের তুলনামূলক ধারণা

ভারতীয় ও চীনা নাটকের তুলনামূলক ধারণা

দেবা রায়    

ভারতীয় নাট্যচর্চা এশিয়ার মধ্যে প্রাচীনতম অভিনয়-কলা হিসাবে বিবেচিত হয়। খ্রীষ্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে তার নৃত্য ও নাট্যের বিকাশ ঘটেছিল, নাট্যশাস্ত্রের সূত্র ধরে। এটিই ভারতীয় আদি নৃত্য ও নাট্যের আদিমতম সংহিতা। এখান থেকে স্টেজক্রাফটের নানা উপরকরণ যেমন পোশাক, মেকআপ, অঙ্গভঙ্গি, শরীরের চলন ও তার অবস্থান নির্দেশিকা হিসেবে পাই।

চীনের ক্লাসিক থিয়েটারকে ‘অপেরা’ বলা হয়। চীনা ঐতিহাসিক তথ্যানুসারে ‘তাং রাজবংশে’র (৬১৮-৯০৮) সমপ্য থেকেই এই ‘অপেরার’ উল্লেখ পাওয়া যায়। এই চীনা অপেরার খ্যাতি আজ সর্বোচ্চ, যার বিকাশ ঘটেছিল ১৯ শতকের মাঞ্চু শাসনের সময়।  

ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনী সূত্রে ব্রহ্মার আদেশে ‘নৃত্য’ ও ‘নাটক’ হয়ে প্রতিভাত হয়েছিল। সমস্ত ভারতীয় উপভাষাতেই এই দুই শব্দের ব্যবহার একই। ভারতীয় নাট্যাভ্যাসের প্রারম্ভে নৃত্যের প্রাধান্য ছিল বেশি। কিন্তু চীন কোনোদিনই এশিয়ার মধ্যে একমাত্র দেশ যারা কার্যত কোনো নৃত্য তৈরি করেনি।

১৮০০ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশের হাত ধরে ভারতীয় নাট্যচর্চায় ‘থিয়েটারে’ অনুপ্রবেশ। নৃত্য ও অন্যান্য ভারতীয় নান্দনিক বৈশিষ্টের সংমিশ্রণে ভারত আজ তার জাতীয় থিয়েটার গড়ে তুলেছে। ১৯৫০ সালে বোম্বেতে ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়।  

চীনের শেষ বংশানুক্রমিক শাসক সম্রাজ্ঞী ডোয়াগা’র অপেরার প্রতি এতোটাই আকর্ষণ ছিল, যে তিনি পিকিং-এ গ্রীষ্মকালীন অধিবেশনে, প্রাসাদে ট্রিপল-ডেক মঞ্চ (স্বররগ, নরক ও পৃথিবী) নির্মাণ করেছিলেন। ২০ শতকে চীনা থিয়েটারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম মেই ল্যান-ফাং, যিনি একজন অভিনেতা ও প্রযোজক। ইনি চীনের অপেরা ফর্মের পুনরুজ্জীবনের জন্য প্রথম স্কলারশিপের আবেদনকারী।  

ভারতীয় নৃত্যে কোনও দৃশ্য বিন্যাস নেই। তিনফুট উঁচু পিতলের-বাতি থাকে। দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের প্রাচীন নৃত্যনাট্য ‘কথাকলি’র প্রযোজনায় একটা আয়তাকার কাপড়ের পর্দার ব্যবহার করা হয়, যার দুই প্রান্ত থেকে একটি বড় বাতি রাখা হয়। নৃত্যশিল্পীরা সেই পর্দার পেছন থেকে তাদের নাচের ক্রমানুসারে প্রবেশ ও উপস্থাপনা নানা পদ্ধতিতে করে থাকে। ধ্রুপদী ভারতীয় নাট্যের উপাদান যেমন কবিতা, সঙ্গীত ও নৃত্য এবং অবশ্যই ধ্বনির ব্যবহার গুরুত্ব পায়। এই উপস্থাপনার প্রধান হল একজন গল্পকার বা কথক, যাকে এখন অধিকাংশ এশিয় নাটকে পাওয়া যায়।   

চিনা থিয়েটার শুরু হয় সন্ধ্যায় এবং শেষ হয় মধ্যরাত্রের পরে। নাট্য বিন্যাসে কতগুলি দৃশ্য জনপ্রিয় নাট্যাশের সন্মিলনে উপস্থাপিত হয়ে থাকে। বিরতি না থাকার কারণে মধ্যবর্তী সময়ে শ্রোতারা চা-পান করে, খায়, কথা বলে। মঞ্চের একপাশে একটা বক্সে অর্কেস্ট্রা থাকে যা সারা সন্ধ্যা ও রাত বাজতে থাকে। একটা হাতে আঁকা ব্যকড্রপ থাকে, এর না আছে কোনো পর্দা না আছে কোন মঞ্চ সজ্জা।  দৃশ্যে অভিনেতাদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি। রঙিন পোশাক, চরা মেকআপ। মঞ্চের বাম ও ডান দিকে দুই প্রবেশ দ্বার থাকে। মঞ্চে গান পাউডারে সাহায্যে মেঘ ধুপের সাহায্যে আগুন প্রদর্শন সাবেকী ভাবনার অন্তর্গত।  

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular