অনন্য ভাবনায় শেক্সপিয়ার মাস্ট ডাই

- Advertisement -

দুলাল চক্রবর্ত্তী

সম্প্রতি একাডেমি মঞ্চে একেবারে প্রথম শো দেখেছিলাম। নাটকের নাম শেক্সপিয়ার মাস্ট ডাই। প্রযোজনা অশোকনগর নাট্যমুখ সংস্থা। এদিন মঞ্চে ইংল্যান্ডের কবি ও নাট্যকার শেক্সপিয়ারের মৃত্যু প্রয়োজনীয় ছিল…এই কাঙ্খিত কামনায় তাঁর নাট্যে সৃজিত চরিত্ররা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। যে চিরঞ্জীব সৃষ্টিতে বিশ্বজিৎ এই মহান শ্রষ্টা, বিশ্বে রাজত্ব  করে চলেছেন।  তাঁর চার কিম্বদন্তী নাটকের, চার চরিত্র কফিন থেকে মঞ্চে উঠে এসেছিল কিছু আসু দ্বন্দ্ব নিয়ে। চোখে মুখে ছিল জিজ্ঞাসা। যারা স্বতন্ত্রভাবে জীবন। এরা খ্যাতি প্রতিপত্তি ক্ষমতা অহংকার চায় নি। যারা জীবন সংগ্রামে ভাগ্য গঠন করতে শূন্য থেকে শুরু করেছিল। যারা ছিল যথেষ্ট সাহসী এবং বীর যোদ্ধা। তারাই জীবনের অমৃত গরল চেটেপুটে খেতে গিয়েই শেক্সপিয়ারের হাতের পুতুল বনেছিল। মানবতায় উজ্জ্বল, তাদের ভালবাসার অনন্ত অনুভুতি থাকা স্বত্বেও, শুধু শেক্সপিয়ার ইচ্ছা না করায়, তাদের বিশ্রাম হীন অশান্ত জীবন বইতে হয়েছিল। রক্তে হাত রঞ্জিত করেই শুধু হিংসাত্মক এক স্বার্থপরতাকে চিনে নিতে হয়েছিল। এরা শান্তির জীবন পায়নি। অনিচ্ছায় শ্রষ্টার ইচ্ছা-হাতে তাদের বলির পাঁঠা হতে হয়েছিল….এরা ম্যাকবেথ, হ্যামলেট, ওথেলো এবং কিং লিয়ার। এই নামাঙ্কিত চার নাটকের চারটি কেন্দ্রীয় চরিত্রই শেক্সপিয়ার মাস্ট ডাই কামনায় নাটকের কেন্দ্রে এসেছিল। তাদের জীবন ভরা বিস্বাদের দীর্ঘশ্বাস হিসহিসিয়ে পড়েছিল। নিয়তির নিয়মিত আসা যাওয়ায় যে লোভ আর ক্ষমতা আড্ডায়, যে ক্ষয় ছিল। যে চক্রান্ত ছিল, সেই রক্তাক্ত ক্ষতের ক্ষতিগ্রস্ততার পোস্টমর্টেম নাটকে চলেছিল যন্ত্রণা আর বেদনার ভারাক্রান্ত আলাপে। এমনই এক নাটক শেক্সপিয়ার মাস্ট ডাই। জীবন দাতা নাট্যকারের বিরুদ্ধে হাহাকার আর আর্তনাদ উগড়ে দিতে, নানা রঙের অনুপম আদপে, শেক্সপিরিয়ান সাজে হাবে ভাবে চরিত্ররা এসেছিল। নাটকও বিশ্লেষণে হয়ে  উঠেছিল টানটান উত্তেজক।

এই চার নাটকের শৃঙ্খলিত নক্ষত্রের গান শুনে বুঝে আরেক কল্পনায় চার নাটকের মারপ্যাঁচ কে আজকের মারপিঠে আহত ক্ষমতা লোভী রাজনৈতিক তুলনা ভাবনায় ধরেছেন, নাটককার শরণ্য দে। সেই ভাবনাকে অসাধারণ পঙ্কিলতা দিয়ে, বিভৎসতা দিয়ে, নিষ্ঠা শ্রদ্ধা অনুশীলনে  মঞ্চে এনেছেন নাট্যমুখের শিল্পী কুশীলবেরা। সামগ্রিক ভাবনায় ও চালনায় নিযুক্ত আছেন দল নায়ক অভি চক্রবর্তী। আমার দেখায় এই শেক্সপিয়ার মাস্ট ডাই অশোকনগর নাট্য মুখ দলের আরেক সেরা কাজ। আলো আবহে মঞ্চের কৌলিন্য গুণপনায় অভিষিক্ত সার্থক একটি শেক্সপিয়ার চর্চার নমুনা হয়ে রইল এই শেক্সপিয়ার মাস্ট ডাই নাটক।

তবে কথা আছে। অনেক,… সব আলাপ কাগজে হয় না। তবুও কিছুটা সম্ভব বটেই। নাটক দেখার পর থেকেই ভাবছি। এই নাটকের পক্ষে যাবো। না বিপক্ষে। কারণ আমরা বাঙালিরা শেক্সপিয়ার কিম্বা রবীন্দ্রনাথকে দেবতা বানিয়ে রেখেছি। এখানে এঁদের রচনা পর্যালোচনা করা মানেই বিশ্বমান নাট্য সাহিত্য চর্চায়, বাঙ্গালির আবেগে ধরে রাখা বনেদি চর্চাকে আঘাত করা হয়তো। চিরন্তনীকে ভেঙ্গেচুরে ফেলা। হতে পারে মানুষের শ্বাশত নাট্য মোদি জীবন শ্লাঘায় কিছু তাপমাত্রা যোগ করা। নাও হতে পারে। কারণ উদ্দেশ্য ভিন্ন। একটা অন্বেষণ… যা আটকে আছে একমাত্রা জীবন বোধের ক্লিশে ধারপাতে। যেন এইসব সৃষ্টি গ্রন্থে, আলমারিতে সাজিয়ে তুলে রাখা কিছু বদ্ধমূল অসংবদ্ধ ছোঁয়াছুঁয়ি বাঁচানোর ইচ্ছা পোষণ মাত্র। সাহিত্য কী শুচিবাই গ্রস্ত হয়ে গেরস্তের অন্দর পূজায় চির বন্দনায় নন্দিত হতেই জন্মেছে? আলোচনা চর্চা অভাবে, সেই কবেকার অর্পিত পূজার শুকনো ফুল, সে তো মরা ভাবনায় পতিত হয়ে আছে। শুকনো ফুল মালা নৈবেদ্য অর্ঘে, অচর্চিত দেওয়ালের অলঙ্কার দেখে চলা এই বর্তমানে রাজনীতির অস্থির কাড়াকাড়ি-আলাপে কোন লাভ এনে দিত? কাজেই বিতর্কিত হলেও কিন্তু অযুক্তিক কিছুতেই নয়। নাটক ভেঙে আটকে থাকা চরিত্রদের জাগিয়ে এনে সময়ের প্রয়োজনীয় কথা শুনিয়ে দিতে পেরে অশোকনগর নাট্যমুখ তাদের অনেক নাটকের বিপ্রতীপে অভিমুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজেদের ভিন্নতর করেছে। যা প্রশংসনীয়।

এটাও জানা হয়েছিল প্রায় তখনি…এই নাটক মঞ্চায়নের আগেরদিন। ২১ তারিখ সন্ধ্যায়, তপন থিয়েটারের দ্বিতীয় তলে ভাণ আয়োজিত “কথামালা ১৮” শুনতেও ছুটে গেছিলাম, বলে। দেড় ঘন্টার বেশি সময় ধরে অনেক কথা সেদিন হয়েছিল। ছিল যুক্তি যুক্ত ব্যখ্যা। একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার বটেই। বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সুবক্তা, মানস চৌধুরী এসেছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের নাট্যকার অস্তিত্বের খুটিনাটি প্রসঙ্গের তুল্যমূল্য আলোচনা করেছিলেন। বিষয় ছিল “রাজ্য, ঈশ্বর, প্রণয় ও প্রজা–রবীনাথের চার নাটক”। সংস্থার প্রধান, প্রজ্ঞাবান চিন্তক গৌরাঙ্গ দন্ডপাট, ভাণের মানে সম্মানে বিষয়কে উল্টিয়ে দিয়ে শুরু থেকেই মাথার পেছন থেকে দেখেন নিশ্চিত। তাই এমন বিষয় শীর্ষক হতে পারে। সেই মর্মেই এই সময়ের পাঠ মালা জড়িয়ে গেল….কেন রাজা বিসর্জন রক্তকরবী মুক্তধারা… এই চার নাটক লেখা হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে। নাটক রচনাকালে, কবির মনোবীক্ষণ কী কারণে এই চার নাটকের রচনায় প্রয়াসী হয়েছিল। তখন পৃথিবীর রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন ছিল। রবীন্দ্রনাথ কি ভাবছিলেন। দেশের প্রয়োজনীয় বার্তা সেদিন কী ছিল। তাই নিয়েই উঠে এলো এতো কথা… যা বলেছিল, রবীন্দ্র চর্চা করার আগে, সারা বিশ্বে এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে, রাজনীতিতে, চোখ খুলে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে আগে জাগতে হবে। কেননা আজই আমাদের সময় ও নাটককে বুঝে নেবার পালা শুরু করা দরকার। এই চলমানের বিরুদ্ধে নাট্য-বিপ্রসন্তান জন্ম দেবার দায় আমাদের আছেই। অন্তত যাঁরা নাটক চর্চা করি। তাদের জন্যে। আলোচনায় মানস চৌধুরী বুঝিয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথের নেপথ্যের জ্ঞান ও বিশ্ব বীক্ষা এবং সময় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষিত, সাথে মানুষের কল্যাণে, সাহিত্যের নব নির্মাণে অচলায়তন ভাঙ্গার কৌশলগত অন্য সৃজনশীলতার প্রয়োজনীয়তা- কথা। থাক সে কথা…..

কিন্তু মজার কথা, এই আলোচনা প্রসঙ্গে মিলে গেছিল, পরের দিনের নাটক শেক্সপিয়ার মাস্ট ডাই এর গড়ে ওঠার বিষয়ও ছিল দুরন্ত খনন প্রকৃয়া। যদিও কাকতালীয়। কিন্তু ঘটনাটা পাশাপাশি। দুই ধরনের দুই গবেষণা। নাটকে নেই কথিত ব্যখ্যা। ঘটেছে চরিত্রের আত্ম জিজ্ঞাসায় উত্থাপিত ঘটনা। কেন সারে চারশো বছর আগে শেক্সপিয়ার মৃত্যু থেকে মৃত্যুকে বেছে তুলে নিয়ে মৃত্যুর মধ্যেই তুলতুলে আদরে রেখেছিলেন,.. ভয়ংকর মরন শব্দটিকে। দুনিয়া মাতিয়ে ছিলেন আদিম ওই মরন দিয়ে। রাষ্ট্রকে, রাজনীতিকে মিথ্যা ছলনায় ভরিয়ে দেবার প্রবঞ্চিত নাট্যে ভাসিয়ে ছিলেন। সারা বিশ্বকে ফুলের বদলে রক্ত উপহার দিয়েছিলেন। প্রাসঙ্গিক সমকালীন বিশ্ব রাজনৈতিক অবস্থার বিচার আলোচিত হলে সেখানেই এইসব জিজ্ঞাসার উত্তর পাওয়া যাবে।

তবে শেক্সপিয়ারের মরা উচিত ছিল, স্বনির্মিত কল্পিত চরিত্রদের হাতে…. এই অকল্পনীয় কল্পনা কী কষ্ট কল্পিত, নাকি সময়ের আয়নায় মুখ রেখে রক্ত দেখে আকাশ ভুলে যাওয়ার বিরুদ্ধে উত্তর আধুনিকতার চিৎকার। না-কি আমরাই হত্যা চেয়ে সংসারে সমাজে মন পুঁতে রেখে, আর্তনাদ শুনতে জিঘাংসক চরিত্র বনে কান পেতে আছি। এ নিয়ে বিষদ অনুসন্ধান জরুরি। নাটক এখানে ভাবনার তাপমাত্রায় জিজ্ঞাসার জন্ম দেয় মাত্র। উত্তর একেবারেই নয়। ভাবনায় ভাবাতে চেয়েছে বলেই সেখানেই ভয়। হত্যার গন্ধ শুঁকে শেয়াল কুকুরের মধ্যে না হায়নার জন্ম হয়। ঘরে বাইরে কোথাও তো নিরাপত্তা নেই।

তাই তো প্রশ্ন জাগে, সত্য প্রতিষ্ঠায় অন্যায়কে নির্মুল করতে ট্র‍্যাজেডি নাটকের রক্তিম সমাপ্তি অভিনন্দনগুলি কী বিশ্ব শান্তির বিরুদ্ধেই বিক্রিয়া করে যাচ্ছে? আজকের রাজনীতির জটিল ঘূর্ণাবর্ত কী তবে রঘুপতি’র উদ্ভবে অপরাধ জনক নির্মাণ বলে বোধ হতে পারে?  তবে শুধু শেক্সপিয়ার কেন, রবীন্দ্রনাথকেও কী ভাল আর মন্দের চলনের বিক্রিয়া পর্যালোচনায় নামতে হতে পারে? প্রশ্ন তোলার সাহস শেক্সপিয়ার মাস্ট ডাই একমাত্র নয় তা-ই। আরো বড় বহু সাহিত্যের মিধ্যেও তো আছে।

যাই হোক আমি সামান্য নাটক দেখিয়ে মানুষ। আজ পর্যন্ত একের পর এক নাটক দেখেই চলেছি। ভাল মন্দ বিরক্তিকর নানা কিছু প্রাপ্ত অনুভূতিই চেপে রাখছি আর পথ হাঁটছি। একেবারেই অপরিচিত নিঃশব্দ চলনে আবার নাটক দেখছি… কাজেই এই শেক্সপিয়ার মাস্ট ডাই নাটকের বক্তব্য নিয়ে মন্তব্য করা কী আমার কর্তব্য? নাকি সমুচিত? শেক্সপিয়ারকে তাঁর সৃষ্ট চরিত্ররাই যদি তাকে বরদাস্ত না করতে পারে, সেই ভাবনা এই আধুনিক এবং উত্তর আধুনিকতার প্রেক্ষিতে যদি কল্পনা করা হয়। তা হতেই পারে। এ তো স্বাধীন ও স্বাভাবিক  সময় স্রোতের অনিবার্য একটা চলাচলের ধারা। আমি বা কেউ এখানে কী বলতে পারি বা পারে?

এই নাটকের বিষয়ে আছে চিরস্থায়ী অস্থিরতা। মঞ্চে এসেছে ডাইনিরা। উল্লেখ্য চার চরিত্ররাই ছিল ঘুমিয়ে। কবরে-কফিনে মৃত। ডাইনিরাই প্রাসঙ্গিক কথক। চরিত্রদের টেনে আনে। ওদের ঘুম ভাঙ্গিয়ে খুঁচিয়ে ঘা করে। শেক্সপিয়ারকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। চার নাটকের ঘটনা বৃত্তের চক্রাকার চক্রান্তে কিলবিলিয়ে এসেছে লেডি ম্যাকবেথ, রেগান, গনোরিন, কর্ডোলিয়া, ডেসডিমোনা, ইয়াগো, হ্যামলেটের বাবা, ক্লডিয়াস গ্রাটুৎ, গ্রেবডিগার সবাই…মিলেমিশে আলাপে, বিলাপে, সংবাদে, বিসম্বাদে ঘুরেফিরে চারটি নাটকের সার বস্তু নিয়েই এক জটিল জটলা চলেছে অবধারিত পন্থায়। এই প্রচেষ্টা নান্দনিক এবং ভিন্ন ভাবনায় সময়ের ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক অবস্থায় রক্তের বিরুদ্ধেই অসহিষ্ণু বিষাদকে দেখানোই এই নাটকের মূল কথা।

নাটকের চার চরিত্র…কিং লিয়ার (অরূপ গোস্বামী), ওথেলো (অসীম দাস), হ্যামলেট (সৌমেন্দু হালদার) ও ম্যাকবেথ (সুকান্ত পাল) খুব ভাল চারিত্রিক দ্বন্দ্বে নাটকের মূল কাজ সমাধা করেছেন। এঁরা কেউই তথাকথিত বীর দেহাবয়বের মানুষ না হ’য়ে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বলেই নাটকের মর্যাদা বেড়েছে। চার অভিনেতাই সফল, তাদের প্রত্যেকের যন্ত্রণা দগ্ধ অস্থিরতা…প্রেক্ষাগৃহে বসে কাঠের মতো দেখায় শ্বাস কষ্টের কারণ হয়। তার মধ্যেই খুব ভাল লাগে শিরিণ পালের স্মার্ট লেডি ম্যাকবেথ এবং ঝুমুর ঘোষের ভালবাসা ভরা কন্ঠের নির্মলেন্দু বিস্তৃতিতে ডেসডিমোনা চরিত্র দুটি। সমরেশ বসুর ক্লডিয়াস, শান্তনু দাসের হ্যামলেটের বাবা, এবং অতনু সরকারের ইয়াগো এই নাটকের বিশেষ টানাপোড়েনে তিন অগ্নি বলয়ের দাহ্য ময় বায়বীয় মাধ্যম বেয়ে কামনা পীড়ন দাসত্ব যেন। রেগান/দেবপ্রিয়া বন্দোপাধ্যায়, গনেরিন/ শ্রেয়া সরকার, কর্ডেলিয়া/ পূজা কুন্ডু, গ্রাট্রুৎ/ সংগীতা চক্রবর্তী নিজেরাই নিজেদের কল্পনা মিশিয়েছেন, শারীরিক নানা সীমাবদ্ধতা টপকে। তবে অনবদ্য ছিল চার ডাইনি, অর্পিতা পাল, পায়েল ঘোষ, রুমকি নাগ এবং তুহিনা গায়েন। নাটকের সামগ্রিক বিভৎসতা সৃষ্টি, সেট প্রপস নির্ভুলভাবে অপসারণ কর্ম নির্ভর করেছে এই জোড়াতালি দেয়া কুৎসিত নারীদের হাতেই। কুটিল হিংসুক ঘাতকদের ধারণ করতে এঁদের ধারণা খুব স্পষ্ট লেগেছে। নাটকের শেষের পরে গ্রেবডিগার হিসাবে ডিগিং কাজে অভিজিৎ বণিক, বিজয় দাস ও সম্পদ সেন স্বাভাবিক ছিলেন। কিন্তু তখন এই নাটক শেষ হয়ে গেছে। চরিরা সবাই আবার কফিনে ফিরে গেছে। এবার এদের আসা, রিয়েলিটি প্রমাণ করা, নাটকের থিম থেকে বাইরের আরোপন অবান্তর মনে হয়েছে। এই নাটকে এসব মানায় না। তাই এই উল্লেখে নাটকের গভীরতা কিছুটা তরল সমীকরণে আক্রান্ত হল কিনা ভাবা উচিত।

এই নাটকের সার্বিক অবদানে পন্ডিত দিশারী চক্রবর্তীর আবহ আর অঙ্গ সঞ্চালনায় সুদীপ্ত কুন্ডুর চিন্তা-মেধা ও জ্ঞান বিশেষ কার্যকরী হয়েছে। সাথে সুরজিৎ পালের রূপসজ্জা যথার্থ শেক্সপিয়ার নাট্যের যথার্থ অলঙ্করণে গিয়েছিল। অসাধারণ সৃষ্টিশীল কাটুম কুটুম মঞ্চের ব্যঞ্জনা। অদ্রীশ কুমার রায় এবং অভি চক্রবর্তী উভয়ের শিল্প স্বাধীন চেতা মনোভাবে অসাধারণ মঞ্চ মায়ায় এই কিম্ভূতকিমাকার নাটকের সরীসৃপ চেহারার খাঁজ খন্দ পাওয়া গেল। সাথে ছিল আলো শব্দ আর সঙ্গীতের তাল মাত্রা। গভীর মনোযোগ দিয়েই আলোক প্রক্ষেপক সাহেব সান্যাল, আবহ সঞ্চারক স্নেহাশিস দে প্রতিটি পরিবর্তনকে মাত্রায় উদ্ভাসিত করেছেন। অভি চক্রবর্তী ও শরণ্য দে, তাদের মিশ্রিত ক্রিয়া বিক্রিয়ায় একটি দেখা আর ভাবার মঞ্চনাট্য খোরাক দিলেন। অন্তত আমি তো খিদে মিটিয়েছি ভালবাবেই।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -