নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করতে চান? কেমন পোশাক কেনা-কাটা করবেন জেনে নিন

- Advertisement -

দেবা রায়

নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করার ইচ্ছে অনেকেরই থাকে। সেই ইচ্ছেটা যদি ঠিক সময়ে মনের মধ্যে তৈরি হয় আর যদি নিজেকে সেই ভাবেই তৈরি করা যায় তাহলে পর্দায় একদিন সফল হওয়া কোনও রকেট সাইন্স ব্যাপার নয়। যাঁরা নাটক কিংবা সিনেমায় নামতে আগ্রহী তাঁদের বলব, অভিনয়টা অবশ্যই মন দিয়ে শিখুন। কেননা, অভিনেতা হতে হলে অভিনয়ই শেষকথা। তবে অভিনয়ের পাশাপাশি কোন চরিত্রের জন্য কেমন পোশাক কিংবা মেকআপ প্রয়োজন সেটার ধারণাও থাকতে হবে। এর আগে আমরা মেকআপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রতিবেদনে আলোচনা করব পোশাক নিয়ে।

যদিও সিনেমায় একজন কস্টিউম ডিজাইনার থাকেন। তিনিই অভিনেতাদের চরিত্র অনুযায়ী পোশাক বেছে দেন কিংবা তৈরি করে দেন। কিন্তু তা বলে অভিনেতার যদি পোশাক সম্পর্কে একদমই ধারণা না থাকে, তাহলে অন্ধের মতো কস্টিউম ডিজাইনারের কথা ফলো করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না।

কস্টিউম ডিজাইনারের অর্থ কি

কস্টিউম ডিজাইনার হলে একজন ব্যক্তি যিনি নাটক বা সিনেমার চরিত্রের পোশাক নির্বাচনের দায়িত্ব নেন। পরিচালকের সাথে সমান্তরাল সম্পর্ক থাকা উচিত। কারণ পরিচালকই একমাত্র যিনি কন্টেট নির্মাণ করছেন, তাই তিনি কি চাইছেন সেটার দিকে নজর দেবার প্রধান দায়িত্ব পোশাক ডিজাইনার বা কস্টিউম ডিজাইনারের।

পোশাক কেমন হওয়া উচিত

নাটক বা সিনেমার অভিনয়ে পোশাক একটি বিশেষ দিক। কারণ পোশাক ছাড়া সেই শিল্পকলার প্রকাশ সঠিকভাবে সম্ভব না। কারণ দর্শক হিসেবে যারা আসেন, তাঁরা নাটক বা সিনেমার গল্পের স্বাদ পেতে সক্ষম হন সেই অভিনীত চরিত্রের পোশাক দেখে।

তাই নাটকে বা সিনেমায় গল্পের গতি ও প্রকৃতির সাথে মিল রেখে সেই নাটক ও সিনেমার পোশাক নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ সেই পোশাকগুলি যেন সেই টেক্সটের সাথে কখনই বিরোধিতা না করে।

ধরা যাক একজন ভিখিরি চরিত্র, তাঁর যে পোশাক পড়ার কথা ছিল সেটা না পড়ে, ড্রেসারের কাছ থেকে ধবধবে পোশাক পড়ে মঞ্চে নেমেছে, তাহলে কোনোভাবেই দর্শক মনে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

আবার পুলিশের পোশাক জায়গা ও তাঁর পদের সাথে নিল রেখে নির্বাচন করতে হবে। তাই পোশাক কি কি হবে তা সেই নাটক বা সিনেমার সাথে সাযুজ্য রেখে নির্বাচন করতে হবে।     

থিয়েটারে পোশাক ডিজাইনের গুরুত্ব

নাট্য বা চলচ্চিত্র নির্মানে পোশাক একটি অবশ্য কর্তব্য বিষয়। কারণ পোশাক ছাড়া কোন চরিত্র সেই গল্প বা কাহিনীকে প্রকাশ করতে পারে না। সেই প্রদর্শিত নাটক বা সিনেমার মেজাজ ও চরিত্রে ভাব প্রকাশে অন্যতম প্রধান সহযোগী। তাই অভিনয় শিল্পে এইকাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে হলে এই সম্পর্কে অধ্যয়ন করা বাধ্যতামূলক।

পোশাক ও চরিত্ররে মধ্যে সাযুজ্য

আনুষঙ্গিক পোশাকই চরিত্রের একমাত্র লক্ষ্য নয়, সেই চরিত্রের বহুমুখী ভূমিকা পালন করার দরকার পড়ে। মঞ্চের অন্যান্য উপকরণের মধ্যে পোশাকের সামাজিক অবস্থান ও দর্শনগত ত্রুটি থাকলে সেই চরিত্র থেকে দর্শক চোখ সরিয়ে নেবে।

আবার সেই পোশাক সেই মঞ্চের ডিজাইন থেকে মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তাতেও দর্শক গল্প ও দৃশ্য থেকে সরে যাবেন। যা কাঙ্ক্ষিত নয়। পোশাক চরিত্রে সামাজিক অবস্থান চিহ্নিত করে। আভ্যন্তরীন সংগ্রামকে প্রতিফলিত করে। ভালো বা মন্দের দ্বন্দ প্রকাশে সক্ষম হয়। তাই পোশাক অভিনীত চরিত্র সম্পর্কে নানা দিকের অবতারণা করে।   

পোশাক ডিজাইনের প্রধান উপাদান

কস্টিউম ডিজাইনের উপাদান নির্ভর করবে সেই গল্পের প্রকৃতির ওপর। এর প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল রূপরেখা বা Silhouette, যা উপস্থাপিত নাটকের রেখা ও ভরের ওপর নির্ভর করবে। চরিত্রের রেখা ও ভর দর্শক মনে সেই চরিত্রে সামগ্রিক আকার আঁকতে সক্ষম হয়। কিন্তু ভিস্যুয়াল উপাদান চারটি, আকার, প্রকৃতি, রঙ, ও টেক্সচার।

পোশাক একটি চরিত্র সম্পর্কে কি জানায়

প্রথমত পোশাক চরিত্রের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করতে হবে। সেই চরিত্রে সামাজিক অবস্থান, সেই চরিত্রের রুচি এবং অবশ্যই বৈচিত্র প্রকাশ অবশ্যই করা উচিত। যা দর্শকদের কাছে, সেই অভিনীত অন্য চরিত্রের সাথে অভিনেতার সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করে।

পোশাক অনেকক্ষেত্রে মঞ্চের বা উপস্থাপনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে কিন্তু দুই বিপরীত চরিত্রের মধ্যে একটি বিভাজন রেখা রাখা বাঞ্ছনীয়, নচেৎ দর্শক মনে চরিত্র সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে।

পোশাক অভিনেতার উললব্ধি নির্মাণে প্রধান সহায়ক

অভিনেতার আত্মপলব্ধি পোশাক পরিধানে সম্ভব। চরিত্রে প্রবেশের জন্য এই পোশাকই যদি সঠিক নির্বাচন না হয় তাহলে তা প্রধা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এবং অভিনেতা চরিত্র নির্মাণে ব্যর্থ হয়।

যে চরিত্র স্থান, কাল, আকার, প্রকৃতিভেদে খালি পায়ে থাকা দরকার সেই চরিত্রে জুতো প্রয়োগ করলে অভিনেতা কখনোই সেই চরিত্রে নিমজ্জিত হতে সক্ষম হবে না। অর্থাৎ অভিনীত চরিত্রে সঠিক পোশাক নির্বাচন সেই চরিত্র নির্মাণে কনফিডেন্স বাড়িয়ে দেয়।   

এই কাজের শর্ত

প্রথমে প্রকল্পকে নির্দিষ্ট করা, তারপর দীর্ঘ সময় সেই কন্টেন্ট এর সাথে যাপন করা, তাকে নানা দিক থেকে পর্যালোচনা করা, পরিচালকের সাথে ভাব আদান প্রদানের মাধ্যমে কাজ করে যাওয়া। সেই বিষয়ের সাথে নিজেকে পরিচিত করতে, শারিরীকভাবে সেই চরিত্র স্বচক্ষে দেখা খুব দরকার হয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে তাঁকে গল্পে উল্লিখিত প্লটের সাথে ভ্রমণ করতে যেতে হতে পারে। মানে যাওয়াই উচিত।

আলো, পট, শব্দ ও পোশাকের সম্পর্ক

আলো, পট, শব্দ কিন্তু ভীষণভাবে পোশাকের সঙ্গে সম্পর্কিত। কোনোটার সাথে একটা তাল বা মাত্রার অমিল হলে সামগ্রিক উপস্থাপনায় প্রভাব পড়বেই।

কারণ উৎপাদনের প্রধান উপাদানগুলির পারস্পরিক দ্বন্দ্ব বা সাযুজ্য পটভূমির মেজাজ ধরে রাখতে সাহায্য করবে। মঞ্চ, শব্দ আলো যেমন পোশাকের ওপর এসে পড়ে, তখন পোশাকও তার সাথে মিলে যাবার যোগ্যতা রাখতে হবে, তাই পারস্পরিক হাত ধরাধরি করে চলে এই উপাদানগুলি। 

সাধারণত চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত পোশাকের নকশা কি নির্ধারণ করে

সময়, স্থান, চরিত্রের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ, চরিত্রের সাথে চরিত্রের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং অবশ্যই পরিচালকের দৃষ্টিভঙ্গি।

কস্টিউম ডিজাইনার হওয়া ভালো কেন

একজন কস্টিউম ডিজাইনার হলে তার জন্য প্রোডাকশনের নির্দিষ্ট বাজেট থাকে, অর্থাৎ এটা পেশা হিসেবে বেশ উল্লেখযোগ্য। কারণ এই পোশাক ছাড়া না নাটোক সম্ভব না সিনেমা।

অর্থাৎ এই কাজে আসতে গেলে এই কাজ শেখা ও এর সাথে নিজেকে চর্চা ও চর্যায় নিয়ে আসা কর্তব্য। আপনার দক্ষতার ওপর পরিচালক নির্ভর করবেন, অর্থাৎ সেই কাজটা করার জন্য একজন ডিজাইনারকে তার দক্ষতা বাড়াতে হবে।

কোথায় এই বিষয়ে পড়ানো হয়

ব্রডওয়েতে এই বিষয়ে পড়ানো হয়। তাছাড়া জাতীয় স্তরেও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে এই বিষয়ে পড়ানো হয়। অর্থাৎ এই বিষয়ে আপনি উচ্চশিক্ষাতেও যেতে পারেন। 

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -