দলমাদল সংস্থার নাট্য আলোচনা

- Advertisement -

দুলাল চক্রবর্ত্তী

গত ১ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৫টায়, কলকাতার চারুকলা ভবনে অবনীন্দ্র সভাঘর-এ যাদবপুর দলমাদল আয়োজিত “বাংলার লোক সংস্কৃতিতে বর্তমান নাট্যের ভূমিকা” বিষয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। আলোচক ছিলেন মধ্যমগ্রাম অল্টারনেটিভ লিভিং থিয়েটারের কর্তাব্যক্তি প্রবীর গুহ, ইলোরা নাট্য পত্রে সম্পাদক ও ইলোরা দলের নির্দেশক মলয় ঘোষ এবং ভাবনা থিয়েটার পত্রিকার সম্পাদক থিয়েটার পরিব্রাজক অভীক ভট্টাচার্য। এদিন প্রবীর গুহ একেবারে গোড়া থেকে, আদীম মানুষের জীবন এবং সেই জীবনের আসু প্রয়োজনীয়তা থেকে কীভাবে সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটেছে, পরবর্তীতে কেমন করে তা ক্রমে বাজার সভ্যতায় বিপণন উপযোগী হয়ে ক্রমশ বিপন্নতা প্রাপ্ত হচ্ছে, নাট্যের প্রয়োগে এবং মুনাফার চটকে লোকজ-কৃষ্টি যেভাবে পরাধীনতার কবলে আত্মগরিমা হারাচ্ছে, এই নেট-জেট যুগের চমক প্রধান বিনোদন প্রক্রিয়ায়, জীবন সংস্কৃতি কতটা বৈচিত্র পূর্ণ হয়ে চলেছে, সেই চলনের কেন’র কারণ খুঁজে, টেকনোলজির দাপটে সংস্কৃতি কীভাবে রুচি ও মন-মৌজি মৌতাত পেয়ে পরিপুষ্ট হচ্ছে, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে এই সেমিনারে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছিলেন। মলয় ঘোষ তাঁর কথায়, সময়ের মূল্যে লোকায়ত সংস্কৃতি ধারার ক্রম সংক্ষিপ্ত হয়ে পড়ার বাস্তবতাকে ও লোক সংস্কৃতির অভ্যন্তরে নাট্য পরম্পরাকে অনুসারী হয়ে সংযুক্ত করাকে চিহ্নিত করেছিলেন। অভীক ভট্টাচার্য, প্রাসঙ্গিক আলোচনায়, এই গোলমেলে সময়ের নিজস্ব দাবিতে ভাবীকালের অগ্রগামিনী চরিত্রে নাটক ও লোকসংস্কৃতির নিজস্বতা রক্ষার শংকাজনক দিকগুলি তুলে ধরেছিলেন। এদিনের প্রায় আড়াই ঘণ্টার আলাপ আলোচনায়, ৩ ব্যক্তিত্ব, নিজস্ব অভিমতের ৩টি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়ের চূড়ান্ত পূর্ণতা দিতে পেরেছিলেন। তবুও এই সামগ্রিক আলোচনায় উঠে আসা নানান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাংলার লোক সংস্কৃতিতে বর্তমান নাট্যের ভূমিকা আদৌ আছে কি নেই, এই মর্মে কোন সদর্থক উত্তর পাওয়া যায় নি। হয়তো সেখানেই সময়ের তরল বিলাসে চিয়ার্স ধ্বনিতে আটকে পড়েছে নাট্য ও লোকসংস্কৃতির গম্ভীর চর্চা অনুরাগ। এই চলার প্রতিফলন নিশ্চিতভাবেই অভাবের গভীর থেকে স্ব-ভাবকে টেনে বের করবে।

২০১৭ সালে এই যাদবপুর দলমাদল সংস্থা জন্ম হয়েছিল। মাত্র সাত বছরে করোনা কালের অবরুদ্ধতার মধ্যেই এই দল এগিয়ে চলে মাটি এবং শেকড়ে অনুসন্ধানে। পথ চলা শুরু করে বর্তমান নাট্য সংস্কৃতির প্রতিযোগিতা মগ্ন উত্থানের বহমান স্রোতেই এই দলের কুশীলবরা আছেন কিছুটা ভিন্ন লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যে অন্ত্যজ অন্ত্যমিল খুঁজে ফিরে। নিয়ে। ধীরগতিতে ধাবমান বাংলা নাট্যের ইতিহাস খুঁড়তে সংস্থা প্রশ্ন তুলতে চায়, “আমরা নাটক কেন করব? কাদের জন্যে করবো? একটি নাট্য সংগঠনের কর্মযজ্ঞ কি কেবল ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতায় সীমাবদ্ধ থাকবে?” উঠে আসে আরও কিছু প্রশ্ন, যেহেতু নাটক লোকসংস্কৃতির অঙ্গ, সেই লোকসংস্কৃতিগুলি বাঁচিয়ে রাখতে নাটকের ভূমিকা তবে কী! যাদবপুর দলমাদল সংস্রহা সুধা কুম্ভকারের গবেষণা ভিত্তিতে “বাংলার লোকসংস্কৃতি: বাঁকুড়া” শীর্ষক বই গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। এই বই/গ্রন্থ প্রকাশের উদ্দেশ্য বিলুপ্ত প্রায় সংস্কৃতিগুলি বর্তমান প্রজন্মকে মুখোমুখি করা। সংস্কৃতির শিকড় সন্ধানে অনুসন্ধিৎসু করে তোলা। আর তাই যাদবপুর দলমাদল ইতিমধ্যেই চারটি নাটকের নির্মাণ করেছে। সংস্থার মুখ্য ভাবুক সঞ্জয় সাহার নির্দেশনায়, যাদবপুর ব্যতিক্রম সংস্থার দেবা রায়ের লেখা, চাল চাই এবং সাঁড়াশি। এছাড়াও মৈনাক সেনগুপ্তের লেখা মামলা ও মলয় ঘোষ রচিত নন্দিনীর কথা নাটক দুটি। নির্দেশক সঞ্জয় সাহা। এই চার নাটকে ঘুরে ফিরে অভিনয় করেছেন, দলের সুধা কুম্ভকার, সঞ্জয় সাহা, নরোত্তম সাহা, স্বরূপ কুমার বসু, সাত্যকি চন্দ, মলয় সরকার, কৃষ্ণ নন্দ উকিল, সুদীপ্ত দাস, সুমিত মজুমদার, মাস্টার শিবম, পিঙ্কু সাহা প্রমুখেরা। আবহ কল্যাণ সরকার, রূপসজ্জা পিঙ্কু সাহা, মঞ্চ অজিত রায়। দলমাদল সংস্থা ৫ জুলাই তপন থিয়েটারে নিজস্ব ব্যবস্থাপনার দুটি নাটকের অভিনীতব্য নাট্য সন্ধ্যায় নিজেদের “মামলা” নাটকের মঞ্চায়ন করেছে। সাথের আরেকটি নাটক হলো, বোলপুর ইলোরা দলের হাসি মজায় উপভোগ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিষয়ের আখ্যান “মানব জমিন” একাঙ্ক। রচনা ও নির্দেশনা মলয় ঘোষ। বাংলাদেশের নাট্য মহলে এই সংস্থা দুই দেশের ভিতরে সাংস্কৃতিক বিনিময়ে সংযুক্ত রয়েছে।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -