নিজস্ব প্রতিবেদন
নর্থ আমেরিকার নিউ জার্সি থেকে ‘ইসিটিএ’ (একতা) নাট্যদল এই নাট্যোৎসবের মরশুমে কলকাতায়। তাঁরা এসেছেন তাঁদের প্রযোজনা ‘জন্মান্তর’ নাটক নিয়ে। এই সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত ভৌমিক এই নাটকের নাটককার ও নির্দেশক।
হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাসে মৃত্যুই শেষ কথা নয়, অর্থাৎ মৃত্যুর পরও তার একটি অস্তিত্বকে ধরে নানা ধরনের লোককথা আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে রয়ে গিয়েছে। যার পক্ষে বিপক্ষে নানান যুক্তি তর্কও কম নেই। তবে আজ এই সময়ে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ কিভাবে দেখবে? একে সত্য বলে মেনে নেবে নাকি এর কোনো অস্তিত্ব নেই বলে উড়িয়ে দেবে। যদিও এর আগে এ নিয়ে বহু পরীক্ষানিরীক্ষা হয়েছে। অর্থাৎ একটা বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করেই এই বিষয়ে মানুষ তার পক্ষ নেয়। এমনি একটি বিশ্বাস নির্ভর বিষয়কে নির্ভর করে কেউ যদি ব্যবসা করে, অর্থাৎ মৃত্যুর পর আমাদের পুনর্জন্ম হয়, এই নিয়ে যদি কেউ ব্যবসায়ে নামে! যার ফলস্বরূপ নাটকীয় মুহুর্তে যদি এইভাবে প্রতিভাত হয় যে এই জন্মে তো সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে না, পরের জন্মেও তো আছে, তাহলে এটা পরিস্কার যে নাটকীয় মুহুর্তে সেখানে নিসন্দেহে হাস্যরসের ভাবনা এসে দাঁড়ায়। আবার অতিবড় নাস্তিক যদি দেখে জন্মান্তর বিশ্বাসে তার মুনাফা আছে, তাহলে কি সে তার সেই বিশ্বাসেই অনড় থাকতে পারবে? এমনি এক জিজ্ঞাসার মধ্য দিয়ে সুদীপ্ত ভৌমিকের এই নাটকের অবতারণা।
দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে একজন প্রবাসী হয়ে তিনি বাংলাভাষায় নিয়মিত নাট্যচর্চা করে চলেছেন আমেরিকার বুকে। সেখানে তাঁদের মূল দর্শক বাংলাভাষী মানুষ। অবাঙালি দর্শকও নাটক দেখতে আসেন, কিন্তু সেখানে সিনেমার মতো নাটকের সাবটাইটেল ব্যবহার করা হয়। মঞ্চের ওপরে তাঁরা এলসিডি স্ক্রিনের মধ্য দিয়ে সেই বাংলা নাটকের সাবটাইটেল দেখে নাট্যরস অনুধাবন করেন। সুদীপ্তবাবু ফোনালাপে জানান, তাঁরা এবার জেলা ও কলকাতা মিলিয়ে মোট ছয়টি নাটকের আমন্ত্রণ নিয়ে ভারতে এসেছেন। প্রতিবারের মতো এবারেও বাংলার বিভিন্ন জায়গায় নাটক করার আনন্দ নিয়ে তাঁরা নিশ্চিতভাবে দেশে ফিরে যাবেন। নির্দেশক সুদীপ্ত ভৌমিক জেলার মানুষদের সামনে নাটক প্রদর্শন করে বেশী অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন বলে আমাদের কর্মীকে জানান এবং সেখানে তাঁর প্রযোজনা মঞ্চস্থ হলে যারপরনাই প্রীত হন। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে বাংলা ভাষায় নাটক করে তিনি দুই দেশ ও সংস্কৃতির মধ্যে এক সেতু স্থাপন করেছেন, যা বাংলা নাট্য চর্চায় উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। সুদীপ্তবাবু এর আগে কলকাতা তথা ভারতের নাট্যদল নিয়ে তাঁদের নিউ জার্সিতেও ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছেন।
এবারের নাট্য উৎসবের মরশুমে বেশ কয়েকটি নাট্যমেলায় তাঁরা ডাক পেয়েছেন, তার মধ্যে অনীক, নকশা, সমতট উল্লেখযোগ্য। আগামী ২২ ডিসেম্বর হবে কলকাতার তপন থিয়েটারে, এরপর ২৩ ডিসেম্বর গোবরডাঙা নকসার আমন্ত্রণে সংস্কৃতি কেন্দ্রে, ২৪ ডিসেম্বর বহরমপুর রবীন্দ্রসদন, ২৬ ডিসেম্বর অভিনীত হবে, ফালাকাটা কমিউনিটি হল, ২৯ ডিসেম্বর কলকাতার তপন থিয়েটার এবং ৩১ ডিসেম্বর সমতটের আমন্ত্রণে উত্তরপাড়া গণভবনে।