সুব্রত কাঞ্জিলাল
প্রশ্নটা বহুদিনের। বাংলা সাহিত্য শিল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে যেসব সমালোচনা উঠে আসে তার মান যে খুব একটা উঁচু জায়গায় নেই সেটা শিল্প সংস্কৃতি জগতের দিকপাল মানুষেরা বারবার উচ্চারণ করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের মধ্যে নানারকম বিভেদ বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল এরা। রবীন্দ্র সাহিত্যের তুলনায় শরৎ সাহিত্য যে কতটা নিকৃষ্ট এইটা বছরের পর বছর ধরে প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছে। তবে হ্যাঁ, যাদের মেরুদন্ড সোজা আছে তারা শরৎ শতবার্ষিকীতে শরৎ সাহিত্যের মূল্যায়ন করেছিলেন। নজরুল এবং সুকান্ত কে কবি হিসেবে কখনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। জীবনানন্দ দাশ কে নির্জনতার কবি, সমাজবিচ্ছিন্ন কবি, শুধুমাত্র প্রকৃতির সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর কবি বলা হয়েছে। বামদিকে থাকা বেশ কিছু মানুষের মধ্যেও এক ধরনের দ্বিধা ছিল জীবনানন্দ দাশ কে নিয়ে। জসীমউদ্দীনকে পল্লীকবি, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় কে বীরভূমের লেখক, এর বেশি মর্যাদা ওই সব সমালোচকরা দিতে পারেননি।
এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো। প্রায় প্রতিটি ইলেকট্রনিক্স এবং প্রিন্টিং মিডিয়া হাউসের নিজস্ব রাজনীতি রয়েছে। অর্থাৎ মালিকের রাজনৈতিক প্রয়োজন মোতাবেক সেই হাউসকে চলতে হয়। বিরুদ্ধ মতামত কে এইসব মিডিয়া এনকারেজ করে না। তার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে।
আজ আমরা এই আলোচনায় নাটক ও সিনেমা সংক্রান্ত সমালোচনার মান নিয়ে কিছু কথা বলব।
প্রথমেই বলতে হবে ধরনী ঘোষ এবং শমিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত শক্তিশালী কলম অবশ্যই আমরা পেয়েছি। এদের কাছাকাছি আরো কয়েকজন নিশ্চয়ই রয়েছেন। তবে সাধারণত কর্পোরেট বাণিজ্য মিডিয়া গুলোতে অহরহ যারা সমালোচক হিসেবে কলম ধরেন তাদের পাশাপাশি নাটক এবং সিনেমা সংক্রান্ত লিটিল ম্যাগাজিন গুলোতে যেসব সমালোচনা প্রকাশিত হয় সেগুলো কি মানের দিক থেকে অনেক উন্নত?
নাটকের ছোট পত্রিকা গুলো সব সময় আড়ষ্ট হয়ে থাকে এই কারণে যে, কোন দলের নাটকের রিভিউ করতে গিয়ে সব সময় প্রশংসা সূচক কথা বলতে হবে।
অন্যথা হলে ওই দলের বিজ্ঞাপন পত্রিকার গ্রাহক চাঁদা বন্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং যিনি রিভিউ করছেন তার একমাত্র কাজ নাটকের গল্পটা রিপিট করে দেওয়া।
তারপর আলোটা একটু অন্যরকম হলে ভালো হতো।
আবহাওয়া সংগীত যথাযথ ইত্যাদি। এইভাবে অত্যন্ত দুর্বল এক টি প্রযোজনাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়ে থাকে।
পত্রিকার আদর্শ বিরোধী কোন দল বা নাটককে বোকার মত মাঝে মাঝে আক্রমণ করে ফেলা হয়।
সাধারণত এইসব পত্রিকাতে যারা নাটকের সমালোচনা করেন তাদের লেখার মান, নাটক থিয়েটার সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানের মান খুব একটা থাকে না। দলগুলোকে খুশি করা এদের কাজ। অনেকে আছেন খুশি করতে গিয়ে দলগুলোর কাছে নিজেদের প্রচার প্রত্যাশা করে ফেলেন। যেমন যদি ওই সব দল রিভিউয়ারকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করেন। বাৎসরিক অনুষ্ঠানে মঞ্চে তুলে দুটো কথা বলবার সুযোগ দেন। এক কথায় পরস্পরের পিঠ চুলকে দেওয়া।
এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ আছে ন, যারা নাটক দেখার পর নাট্যকার পরিচালক অভিনেতাদের নানারকম জ্ঞান দিয়ে থাকেন। যেমন নাটকটা এভাবে না লিখে ওইভাবে লিখলে ভালো হতো। এটা করা উচিত ছিল, ওটা করা উচিত ছিল, এমনটা না করাই ভালো। এইতো কদিন আগে একজন পরিচালক ফোন করে বলছিলেন, সাতটা প্রতিযোগিতায় সাত জন বিচারক সাত রকম করে সাজেশন দিলেন। তাহলে কি বলতে হবে নাটক লেখা এবং তৈরি করার সময় ওইসব বিচারকদের মতামত নিয়ে কাজ করতে হবে?
বলা বাহুল্য এই ধরনের পত্র পত্রিকাতে বছরের পর বছর ধরে গন্ডায় গন্ডায় নাটক ছাপা হয়। তার অধিকাংশই নিম্নমানের। সম্পাদকরা সাফাই গান।
ভালো নাটক তো সব সময় পাওয়া যায় না। তাছাড়া আমরা নবীনদের সুযোগ দেবার কথা ভাবি। এরা বুঝতে চান না যে, এইসব করতে গিয়ে ইতিহাসের কাছে এদের নিজেদের ভূমিকা কত ছোট হয়ে যাচ্ছে।
কয়েক দশক পর কোন গবেষক যখন এসব পত্রিকা গুলো খুলে দেখবে, তখন তারা হতাশ হয়ে ভাববে, বিগত সময় এইসব নিম্নমানের নাটক রচনা হয়েছিল।
এসবের বাইরে আর এক ধরনের পত্র পত্রিকা রয়েছে। যারা নিজেদের ইন্টেলেকচুয়াল প্রমাণ করতে চান।
সেখানেও এই একই অবস্থা। কোন বড় দলকে চটানো চলবে না। ইউরোপ আমেরিকার তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর নাটক নিয়ে অধ্যাপক শ্রেণীর কলম চি গন নিজেদের পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিতে ব্যস্ত। বছরের পর বছর
এইসব চলতে থাকে। কারণ ইংরেজি জানা হাতে গোনা নাট্যকর্মীদের পাওয়া গেলেও অনেকেই তো বিদেশী নাটকের খবরা-খবর রাখেন না। কি করে বুঝবেন কোনটা প্রথম শ্রেণীর নাটক আর কোনটা তৃতীয় শ্রেণীর।
নাট্য সমালোচকদের প্রতি তির্যক মন্তব্য করে উৎপল দত্ত তার টিনের তলোয়ার নাটকে একটা দৃশ্যে বেশ মজার মজার কথা বলেছিলেন। এখানে তার পুনরাবৃত্তি র প্রয়োজন নেই। উৎপল বাবু তার চায়ের ধোয়া এবং জপেন্ দা জপেন যা বই দুটোতে থিয়েটারের ইন্টেলেকচুয়াল অধ্যাপক শ্রেণীকে তুলোধোনা করে ছেড়েছেন। এই কারণেই বাংলার বাজার পত্রিকার সঙ্গে গাট ছড়া বাধা বাবুরা উৎপল দত্তের প্রতি ভয়ংকর ক্ষুব্ধ। মনে মনে এরা খুব ভালো করেই জানেন যে, উৎপল বাবুর সামনে নিজেদের পান্ডিত্য পানাপুকুরে গড়াগড়ি খাবে। কলকাতার বিগ হাউজে টিনের তরোয়াল নাটককে আক্রমণ করে লেখা একটি সমালোচনা র জবাবে উৎপল দত্ত উত্তর দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই সমালোচক তখন লেজ গুটিয়ে পালিয়ে বেড়াতেন।
একই রকম ভাবে ঋত্বিক ঘটক ও বলতেন, ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে মাস্টার ডিগ্রী করলে বাজার পত্রিকায় চাকরি পাওয়া যায়। তাই বলে ফিল্ম ক্রিটিক হওয়া? তাহলে তো হনুমানকে দিয়ে কবিতা লেখানো যায়!!!
সেবাব্রত গুপ্ত মহাশয় কে বলেছিলেন, সেবা বাবু, আপনি আপনার বাজার পত্রিকার সম্পাদকের সেবা করে চাকরিটা বাঁচান। আমার ছবির রিভিউ করবার দুঃসাহস দেখাবেন না।
আমার মনে আছে সে বছর সুবর্ণরেখা ছবিটা মুক্তি পেয়েছে। ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে সমালোচনার নামে ঋত্বিক ঘটক কে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। ডান দিকের লোকজন প্রথম থেকেই ঋত্বিক বাবুকে পাত্তা দেওয়ার চেষ্টা করত না। বলা হতো এই লোকটা সিনেমার কিছু বোঝেনা। মূর্খের মতো সিনেমা বানায়। আমেরিকা থেকে বিশ্ব বিখ্যাত ফিল্ম ক্রিটিক মারি সিটেন এদেশে এসে অজান্ত্রিক দেখার পর রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। তিনি এমন কথা বললেন, সিনেমার ইতিহাসে অযান্ত্রিক একটা মাইলস্টোন।
ঠিক তখন এখানকার ইন্টেলেকচুয়াল সম্প্রদায় খানিকটা হোঁচট খেয়েছিল। যেমন রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর, রবীন্দ্র বিরোধীরা গর্তে পড়ে গিয়েছিল। অযান্ত্রিক ইউরপ, আমেরিকাতে প্রদর্শিত হওয়ার পর ওইসব মহাদেশের বিদগ্ধ ফিল্ম গবেষকরা বলেছিলেন, ঋত্বিক ঘটক সিনেমার নতুন রকম ব্যাকরণ তৈরি করেছেন। ভারতীয় সিনেমার একজন অন্যতম স্রষ্টা ঋত্বিক ঘটক।
একই সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি, মৃণাল সেনকেও বাজারি পত্রিকাগুলো ফালতু মনে করতো।
তার অন্যতম কারণ মৃণাল সেনের রাজনৈতিক দর্শন। ২২ শে শ্রাবণ, ইন্টারভিউ, কলকাতা ৭১, পদাতিক, কোরাস, এইসব ছবিগুলো ভীষণভাবে রাজনৈতিক ছবি। কর্পোরেট মিডিয়া কোনভাবেই হজম করতে পারত না। ওইসব মিডিয়া তাদের ভাড়াটে কলামচিদের দিয়ে লিখতে বাধ্য করত, মৃণাল সেন একজন কুখ্যাত লাল সৈনিক। তিনি যা করছেন সেসব সিনেমা নয়। আর্ট বা শিল্প নয়। ওগুলো দলীয় প্রোপাগান্ডা। যেমন উৎপল দত্তকে কোনদিন শিল্পী হিসেবে ওই সব লোকজন মর্যাদা দেয়নি।
পরবর্তী সময় মৃণাল সেনের অকালের সন্ধানে, খারিজ, একদিন প্রতিদিন এই পর্বের ছবিগুলো দেখেও হজম করা যাচ্ছিল না। একইভাবে এরা ভীষণ অগ্নি শর্মা হয়ে উঠেছিল ৭০ দশকে সত্যজিৎ রায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী, জন অরণ্য, সীমাবদ্ধ ছবিগুলো দেখে।
ভাড়াটে কলম চিরা হৈহই করে বলতে শুরু করেছিল,
সত্যজিৎ রায়ের অধঃপতন ঘটেছে। তারপর শেষের দিকের শাখা প্রশাখা, গণশত্রু, আগন্তুক দেখার পর বলা হয়েছিল এখানে কোথাও সত্যজিৎ রায় নেই।
ষাটের দশকের পরে সত্যজিৎ বাবুর মৃত্যু ঘটে গেছে।
বাংলায় ষাট সত্তরের দশকে নিজেদের যারা চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ বলে গর্ব করতে ন, সেই সূত্রে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতেন তাদের উদ্দেশ্যে অত্যন্ত ভদ্র ভাষায়, মোলায়েম শব্দ প্রয়োগ করে সত্যজিৎ রায় অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন। সেইসব লেখায় তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, আধুনিক সিনেমার ভাষা এইসব ভদ্র মহোদয়গণ একেবারেই বোঝেন নি। এরা ৪০-৫০ এর দশকের সাহিত্য নির্ভর সেলুলয়েড লিটারেচার ধর্মী এক ধরনের সিনেমার
ধারণা নিয়ে বসে আছেন। অন্যদিকে ঋত্বিক ঘটক অত্যন্ত কঠিন ভাষা প্রয়োগ করে বলবার চেষ্টা করেছেন, আসলে এদের কোন রাজনৈতিক জ্ঞান নেই। সিনেমার নন্দনতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব কিছুই বোঝেনা।
এই প্রসঙ্গে আসানসোল নিবাসী প্রয়াত অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের কথা মনে পড়ছে। তিনি সিনেমার লোক নন। কিন্তু পেশাগত জীবনে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার হয়েও একনিষ্ঠ ছাত্রের মত আধুনিক সিনেমা নিয়ে এককভাবে গবেষণা করে গেছেন। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা নিয়ে তার দুই খন্ডে বই আজও আকর গ্রন্থ হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।
কল্লোল নাটক নিয়ে তথাকথিত পণ্ডিতদের বালখিল্য, রাজনৈতিক আক্রমণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছিলেন উৎপল দত্ত। ৭০ এবং ৮০ দশকে বেশ কিছু সিনেমা সংক্রান্ত প্রথম শ্রেণীর পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হতো। সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না পাওয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষিত লেখকদের আমরা আবিষ্কার করেছি।
এই প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়ে যাচ্ছে। ভ্যান গগ
ছবি আঁকার দিকে মন দিয়েছেন। একদিন তার প্রিয় বন্ধু প্রতিষ্ঠিত চিত্রশিল্পীকে ডেকে এনে বলছেন, আমার ছবি দেখে বলতো, ছবি আঁকা চালিয়ে যাব কিনা। বন্ধু উপেক্ষার দৃষ্টিতে ছবিটা দেখে বারবার নানা রকম বিরুদ্ধ সমালোচনা করতে লাগলেন। বারবার বলতে লাগলেন, কিছুই হয়নি। ব্রাশ ওয়ার্ক নেই। রং যেন হাতে করে ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে। ভুল কম্পোজিশন। রংগুলো অত্যন্ত কন্ট্রাস্ট। আরো নানারকম মন্তব্য ছিল।
বিরক্ত হয়ে ভ্যানগগ বললেন, পন্ডিতি করিস না। তুই নিজের চোখ দিয়ে আমার ছবি দেখছিস কেন? শিল্পীর চোখকে আবিষ্কার করতে পারছিস না কেন?
আমি তো নতুন ব্যাকরণ খুঁজে বেড়াচ্ছি।
পাণ্ডিত্যের অহংকার নিয়ে সমালোচকরা এইভাবে নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করে ফেলেন। এবং বোকার মত বলে বসেন, গদার সাহেব দুর্বোধ্য।
সিনেমার আইজেনস্টাইন, পুদাভকিন লাল রাজনীতির লোক। লালনের গান অশিক্ষিত মানুষের জন্য। মার্কসবাদ এ দীক্ষিত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্য নিম্নগামী হয়ে গেছে। ম্যাক্সিম গোর্কি র নাম মুখে উচ্চারণ করা যায় না। শেক্সপিয়ার গ্রাম্যতা দোষে দুষ্ট। উৎপল দত্তের নাটক প্রোপাগান্ডা দোষে আক্রান্ত।
ব্রেটল ব্রেখট সাহেবের নাটক নাকি যান্ত্রিক। ওই ভদ্রলোক শিল্প টিম্প কিছুই বুঝতেন না। অধ্যাপক শ্রেণীর কলমচিরা ব্রেখট সাহেবের দর্শন নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না। চার্লি চ্যাপলিনের মসিয়ে ভরদু, গোল্ড রাশ, গ্রেট ডিক্টেটর, মর্ডান টাইমস, ছবিগুলো নিয়ে বাজার পত্রিকা ভয়ংকর ক্ষুব্ধ। তার কারণ এদের প্রভু আমেরিকার শাসকরা চ্যাপলিন কে বলসেভিক আখ্যা দিয়েছিল। সিনেমার আলোচনা উঠলেই এরা হলিউডের বাণিজ্যিক ছবির প্রেমে অন্ধ হয়ে পড়েন। অন্যদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার সিনেমা, আধুনিক চীনের সিনেমা, লাতিন আমেরিকা ও তৃতীয় বিশ্বের অন্যধারা সিনেমা গুলো কে পরিহার করে চলে ন।
এদের যুক্তি হল, ওগুলো সিনেমা নয়। রাজনৈতিক প্রচার। ওইসব সিনেমাতে শোষক শোষিতের শ্রেণী দ্বন্দ্ব শিল্প রসকে ব্যাহত করে।
আমির খানের মঙ্গল পান্ডে ছবিটা মুক্তি পাবার পর, বাজার পত্রিকা সিনেমা রিভিউর পাতায় বিষোদগার করবার পরেও সম্পাদকীয় পৃষ্ঠাতে দীর্ঘ প্রবন্ধ ছেপে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল, ছবিটা ইতিহাসের বিকৃতি। মঙ্গল পান্ডে র জীবন নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ওই ছবিতে কখনো প্রমাণ করবার চেষ্টা হয়নি যে, মঙ্গল পান্ডের জীবন নিয়ে একটি জীবনী মূলক গল্প বলা হচ্ছে। বরং বারবার দেখানো হয়েছে লোক শিল্পীদের গানের মধ্যে দিয়ে উঠে আসছে লোকশিল্পীদের কল্পনায় রাঙ্গানো একটি মিথ চরিত্রের কথা। যেমন একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি গানটি জন্ম নিয়েছিল লোকশিল্পীদের বিপ্লবী চেতনার মধ্য দিয়ে। লোকশিল্পীরা এই ভাবেই পলাশির যুদ্ধে সিরাজের পতনের পর, সিরাজের পক্ষ নিয়ে বেদনা মাখা অনেক গান সৃষ্টি করেছিল। ইতিহাসে স্পার্টাকাস চরিত্রের সন্ধান পাওয়া যাবে না।
দাস বিদ্রোহের এই কাল্পনিক নায়কটির জন্ম বিদ্রোহী লোকগবিদের কল্পনায়। সেই কল্পনাকে আশ্রয় করে হা
ওয়ার্ড ফাস্ট উপন্যাস রচনা করেছিলেন। মার্কিন শ্রমিকদের মধ্য থেকে এইভাবে জন হেনরি গানের জন্ম নিয়েছিল। বিগ বাজার পোষিত সমালোচকদের মগজে এগুলো ঢুকবে না।
বাজার পত্রিকার উসমার অন্যতম কারণ, ওই ছবিতে বর্ণিত সিপাহী বিদ্রোহ ের ঘটনা। কাল মার্কস যাকে বলেছিলেন, ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ। কিন্তু শাসকের খয়ের খা ঐতিহাসিকরা বারবার প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল ওর মধ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধের কোন বীজ ছিল না। মুসলমান সামন্ত প্রভুদের গুন্ডামি দাঙ্গা হাঙ্গামা চিত্র ফুটে উঠেছিল। একইভাবে উৎপল দত্তের কল্লোল নাটক কেও এরা অনৈতিহাসিক, ইতিহাসের বিকৃতি প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছিল। অথচ দেখা যাচ্ছে চীন ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ নিয়ে গড়ে ওঠা চেতন আনন্দের হকিকত সিনেমাটা যে পরিপূর্ণভাবে একটি চীন বিরোধী রাজনৈতিক ছবি, ইতিহাসের সম্পূর্ণ মিথ্যাচার এই প্রশ্নে সে যুগের সিনেমা সমালোচকরা
নিরব ছিল। আজও থাকে।
গৌতম মুখোপাধ্যায়ের প্রযোজনা তে গোর্কির মা উপন্যাসের একটি চিত্ররূপ দেখে (চিত্রনাট্য সংলাপ:
তীর্থঙ্কর চন্দ্র) বাজার পত্রিকা লিখল—মা ভোগে!!
আমরা জানি ছবির গল্প চিত্রনাট্য পরিচালনায় যথেষ্ট ত্রুটি ছিল। ঠিক সিনেমা হয়ে ওঠেনি। তাই বলে মা ভোগে?
তারপর রয়েছে এদের বাংলা ভাষা নিয়ে এক ধরনের সার্কাস। বারবার হোঁচট খেতে হয়, এটা বাংলা তো? হিব্রু ফরাসি জার্মানি ইংরেজি র এক ধরনের ককটেল। সহজ কথাটা সহজ করে বলবার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।
তারমানে আমি বলছি না, সৎ, যথার্থ শিক্ষিত সমালোচকরা হারিয়ে গেছে ন। তবে আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে এরা বাজারি হতে পারেন না।