নৈতিক রায়
১৮৫৫ থেকে ৫৭-র পুর্বে থিয়েটারে স্ত্রীলোকের আমদানী যে হয়নি তা কিন্তু নয়, তবে সেই অভ্যাস টেকেনি। দাড়ি চাঁছাদের কদরই ছিল বেশী কারণ সেসময় সুশীলা রমণীর বড়ই অভাব ছিল। যদিবা দুঃশীলাদের পাওয়া যেত, কিন্তু তাঁদের স্পর্শে সমাজের প্রভুত ক্ষতিসাধনের আশঙ্কায় দাড়ি চাঁছাদেরই গ্রহণযোগ্যতা ছিল বেশি।
শকুন্তলার ভূমিকায় ১৮৫৭ সালের জুলাই মাসে ছাতুবাবুর প্রাসাদে ‘অভিজ্ঞান শকুন্তল’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন ছাতুবাবুর পৌত্র শরৎচন্দ্র দেব। এছাড়া এই নাটকে অনসূয়া ও প্রিয়ম্বদা চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে যথাক্রমে অবিনাশ চন্দ্র ঘোষ ও ভুবন্মোহন ঘোষ কে। অভিনয়ের শেষে এক বাবু বলে উঠেছিলেন-
‘যখন বিশ হাজার টাকার অলংকারে মন্ডিত হইয়া শরৎবাবু দীপ্তিময়ী শকুন্তলার রানিবেশ দেখাইয়াছিলেন তখন দর্শকবৃন্দ চমৎকৃত হইয়াছিলেন।’
১৮৫৯ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটকে দেবযানী চরিত্রে অভিনয় করেন হেমচন্দ্র মুখার্জি, শর্মিষ্ঠা চরিত্রে কৃষ্টধন ব্যানার্জী।
১৮৬৬ সালে বিদ্যাসুন্দর নাটকে বাবু যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের পাথুরিয়াঘাটা বঙ্গ নাট্যশালায় বিদ্যা চরিত্রে অভিনয় করেন মদনমোহন বর্মন।
এরই অব্যবহিত পরে নাট্যশালায় স্ত্রী লোকের অভিনয় রাখা বাঞ্ছনীয় মনে করেন তৎকালীন নাট্যের তালেবর নাট্যজ্ঞরা। ছাতুবাবুকে এ নিয়ে মাইকেল তো বলেই বসলেন- ‘তোমরা স্ত্রীলোক লইয়া থিয়েটার খোলো, স্ত্রীলোক না হইলে কিছুতেই ভালো হইবে না।‘ কথা মাটিতে পড়ার সাথে ছাতুবাবুর নাতি শরৎবাবু , ভগ্নীপতি ও সি দত্ত, বটুবাবু, প্রিয়নাথা বসু, ছাতুবাবু নিজে উদ্যগী হয়ে এই শর্মিষ্ঠা নাটকে চার বেশ্যাকে মঞ্চে এনে নাট্যে পুরুষ অভিনেতার চল বন্ধ করে মেয়েদের সাথান করে দিলেন। সাথে সাথে বেশ্যারাও জাতে ঊঠে গেল বলে বাবু মহলে শোরগোল পরে গেল। সেই বারাঙ্গনারা ছিলেন গোলাপ সুন্দরী, এলোকেশী, জগত্তারিণী, শ্যামাসুন্দরী।
মদনমোহন বসু ‘মধ্যস্থ’ পত্রিকায় লিখলেন-
‘… বিলাতে রঙ্গভূমিতে স্ত্রীর প্রকৃতি দ্বারাই প্রদর্শিত হয়। বঙ্গদেশে দাড়ি গোঁপ ধারী (হাজার কামাক) জ্যাঠা ছেলেরা মেয়ে সাজিয়া কর্কশ স্বরে সুমধুর বামা স্বরের কার্য করিতেছে। ইহা কি তাহাঁদের ন্যায় সমাজ সংস্কারক সম্প্রদায়ের সহ্য হয়?… অতএব ‘আন স্ত্রী’… বাঁচিয়া থাকিলে আরও কত কি দেখিতে পাইবো। কিন্তু এত সভ্যতার তেজ সহ্য করিয়া বাঁচিয়া থাকা দায়।’