নিজস্ব প্রতিনিধি
সম্প্রতি এপিক থিয়েটার (Epic Theatre) একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ উপহার দিল কলকাতার নাট্যজনদের। সমসাময়িক সময়ের দুই বাংলার খ্যাতনামা সঙ্গীতশিল্পী রাহুল আনন্দকে (Rahul Anand) নিয়ে এসে তাঁরা নাটকের শব্দ ও সঙ্গীতের ওপর দু’দিনের কর্মশালায় আয়োজন করেছিলেন দক্ষিণ কলকাতার শিখা গুহ ভবনে। এই কর্মশালায় অপর এক প্রশিক্ষক হলেন স্বরাজ ভট্টাচার্য।
রাহুল আনন্দ (Rahul Anand) এই মুহুর্তে দুই বাংলার সঙ্গীত জগতে একটি উজ্জ্বল নাম। তাই এই কর্মশালা নিয়ে নাট্যমহলে অনেকেই উৎসাহী ছিলেন। প্রশিক্ষক যেহেতু রাহুল আনন্দ, স্বাভাবিক ভাবেই কর্মশালায় যোগদানের জন্য প্রচুর মানুষ যোগাযোগ করেন এপিক থিয়েটারের কর্ণধার দিলীপ মজুমদারের সাথে। দিলীপবাবুর কাছ ‘বাংলা নাটক ডট ইন’ এর পক্ষ থেকে কিছু কথা জানতে চাওয়ায়, তিনি বেশ আনন্দের সাথে জানান, ‘আমরা এপিক থিয়েটার, রাহুল আনন্দের এই এগিয়ে আসা এবং তাঁর মূল্যবান সময় এপিককে দেওয়ার জন্য, তাঁর আমরা কাছে কৃতজ্ঞ।’
কর্মশালা শুরুতেই রাহুল আনন্দ সবাইকে কিভাবে স্বল্প ব্যয়ে নাটকের আবহ বা মিউজিক করা সম্ভব, সে সম্পর্কে অবহিত করেন। আবার যে শিল্পীরা গান পারেন কি পারেন না এই বিষয়ে দ্বিধায় থাকেন, তাঁদের উদ্দ্যেশে তিনি বলেন, সেটা কোনো সমস্যা নয়। সকলের মধ্যেই এই শব্দ ও সঙ্গীত রয়েছে, প্রতিদিন সকালে উঠে কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়ামের সাহায্যে কণ্ঠ চর্চা করা উচিত। গলা চর্চার মধ্যে দিয়ে স্বরযন্ত্রকে পরিস্কার রাখা দরকার। উনি মনে করেন এই কণ্ঠ চর্চা একটি নির্দিষ্ট ঢঙ-এ বসা উচিত, যেখানে দেহকে স্বাভাবিক আরামদায়ক অবস্থায় রাখা যায়। তাঁর কর্মশালায় সবচেয়ে বড় পাওয়া শব্দ ও সঙ্গীত সম্পর্কে তাঁর কিছু ফিলোজফিক্যাল কথা।
রাহুল আনন্দ একজন মাটির মানুষ, এমনটাই মনে করেন দিলীপবাবু। রাহুল আনন্দ নিজেও বলেছেন, তিনি পয়সার পেছনে ছোটেন না, কাজ ভালো করলে পয়সা তাঁর পেছনে ছুটে আসবে। সত্যিই তাই, দিলীপবাবুর ডাকে নাটকের এমন একটি বিষয়ে ওয়ার্কশপ করানোর জন্য উনি রাজি হয়েছেন, এবং এসে করিয়েছেন বিনা পারিশ্রমিকে। ওপার বাংলার মানুষের মতো এপার বাংলা মানুষও জলের গান শুনলেই আনন্দিত হন। এই ভালোবাসাকে সম্মান জানিয়ে তিনি ছুটে এসেছেন মানুষেরই মাঝে। সাধারণ মানুষের সাথে তিনি মিশতে ভালোবাসেন।
দিলীপবাবু যখন বাংলাদেশে গেছেন, তখনও তিনি দেখেছেন উনি মানুষ দ্বারা বেষ্টিত হয়েই থাকেন। এখানকার মত স্টারড্রাম সেখানে নেই, উনি যেরকম মানের সঙ্গীত শিল্পী, এখানে হলে তাঁর কাছে ঘেঁষতে বাঁধা দিত তাঁরই কিছু পেটোয়া লোকজন কিন্তু রাহুলের ক্ষেত্রে এরকমটা তিনি কখনোই দেখেন নি, এরকমই বলেন দিলীপবাবু। জলের গানের অনুরাগীরা অটোগ্রাফ চাইলে, সেলফি তুলতে চাইলে আনন্দের সাথে তাঁদের সাথে থাকেন, তাদেরকে ফিরিয়ে দেন না। একবারের একটি ঘটনা জানা যায়, দিলীপবাবুর কাছে একজন অনুরাগী অটোগ্রাফ চাইলে তিনি রং তুলি দিয়ে তাঁর নামটা সেই অনুরাগীর কপালে এঁকে দিয়েছিলেন। এমনি মাটির মানুষ রাহুল আনন্দ। উনি নিজেও একজন চারুকলার শিল্পী ও ডিজিটাল আর্টিস্ট হিসেবে একজন গোল্ড মেডেলিস্ট।
মোট ১৮ জন অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে সংগঠিত এই কর্মশালা নিঃসন্দেহে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সেখানে নাটকে শব্দ উৎপাদনের নানা তরিকা কর্মশালায় যোগদানকারী সকলকে সমৃদ্ধ করেছে। কাগজ ছিঁড়ে সেগুলিকে দুমড়ে মুচরে যে শব্দ উৎপাদিত তা যেন কখনও ঝড় কখনও বৃষ্টি মনে হয়।
নাটকের প্রতি ভালোবাসাই তাকে এই কাজ করতে উৎসাহিত করেছে। তিনি মামুনুর রসিদ তথা আরণ্যক নাট্যদলে দীর্ঘদিন নাটক করেছেন, এরপর তিনি বর্তমানে ‘প্রাচ্যনাট’ নামে একটি নাটকের দল করেছেন যা এই মুহুর্তে বাংলাদেশে একটি প্রতিষ্ঠিত নাট্যদল হিসেবেই চিহ্নিত।
অপর প্রশিক্ষক স্বরাজবাবু তিনিও শব্দ উচ্চারণের প্রতি জোর দিতে বলেছেন। কারণ স্বরের মাধ্যমেই সংলাপ উচ্চারিত হয়, তাই উচ্চারণ সম্পর্কে প্রত্যেক অভিনেতাকে সচেতন হতে হবে।