ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত
রুদিজলা রামসার সাইটটিকে পৃথিবীর মানচিত্রে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার এক ভিন্ন প্রয়াস নাটক ‘জল সিঁদুর’! সম্প্রতি ত্রিপুরা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর পরিচালিত নাট্যোৎসবের দ্বিতীয় দিনের প্রথম উপস্থাপনায় ছিল মেলাঘরের নবজাগরণ নাট্যদলের প্রযোজনায় এই ‘জল সিঁদুর’ নাটকটি যা নিরমহলের আঙ্গিনায় নির্মম জীবনযাত্রার এক বাস্তবানুগ প্রতিচ্ছবির মঞ্চায়ন। চাঁদ, লক্ষী ও পদ্মর ত্রিকোন প্রেমের কাহিনী এই মঞ্চনাটক।
শুভব্রত চক্রবর্তীর লেখা এই নাটকটি ত্রিপুরার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আগলে রেখেছে। জীবন ধারায় অস্তিত্বগত ব্যাথার বর্ণনা ধরা পরে এই নাটকে। নারীর আকাঙ্খায় তার নির্বাক প্রেমিক চাঁদের মত হলেও, অস্তিত্বের নিগ্রহে সেটা ভিন্নতায় পাষাণ রূপ প্রাপ্ত হয়। হাস্য-করুণ রসে ভরপুর এই নাটকটি বাকশক্তিহীন প্রেমিকের আকাঙ্খা-উৎকণ্ঠা নিয়ে নির্মিত। তারই প্রিয়তমাদের পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থিতি অনাবৃত করতে থাকে নাট্যের চলনে।
সঙ্ঘবদ্ধ শোষণ থেকে শুরু করে পরিস্থিতির আড়ালে দাড়িয়ে স্বার্থ উশুল করে নেওয়ার প্রবণতাই যেন সত্য, প্রত্যাবাসনের ত্রাসের থেকেও ভয়ানক! যা গোটা সমাজপল্লিকে ঘিরে রেখেছে। কন্যাসন্তানের প্রাণরক্ষার্থে অসহায় পিতার কঠোর সিদ্ধান্ত এবং মেয়ের রৌদ্র রূপ দেখে পরিস্থিতির বিপরীতে হাঁটার এই রঙ্গমঞ্চায়ন ছিল অনবদ্য। তবুও নাট্যের গতিময়তায় অযাচিত পরিস্থিতির শিকার হয়ে প্রাণ হারালো দুটো নিষ্পাপ যৌবন।
সুব্রত চক্রবর্তীর নির্দেশনায় নবীন প্রজন্মের এই প্রযোজনায় আরো পরিপক্কতা প্রযোজ্য। অতি সাধারণ মঞ্চ-সজ্জায় দৃশ্যস্থল লভ্য হলেও মঞ্চের পূর্ণপ্রয়োগ দেখা যায়নি অনেক ক্ষেত্রেই। যা দৃশ্যপটের ভারসাম্যহীনতায় পরিণত হয়েছে। এবং নাটুয়াদের মঞ্চের একই স্থানে নোঙ্গর করে রেখেছে। স্বাভাবিকভাবেই নাট্যের গতিময়তা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।
তবে খুব মার্জিত ভাবে দর্শকের কাছে পৌঁছে গেছে নারী সুরক্ষার বার্তা ও ত্রিপুরার পর্যটকপ্রিয় রুদ্রসাগরের সৌন্দর্যের চিত্রণ। জীবনযুদ্ধে হয়তো এমন মৃগতৃষ্ণা পেরিয়ে আসতে হয় প্রত্যেককেই। নাট্যকারের এই রচনা যেনো আমাদেরই মধ্যকার কোন এক বা একাধিক ঘরেরই কাহিনী।
চাঁদ চরিত্রে অভিনয় করেছেন পীযুষ দাস। পদ্ম ও লক্ষী চরিত্রে যথাক্রমে তৃষা ভট্টাচার্য ও দৃশা লোধ অভিনয় করছেন। তিনজনের অভিনয় প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল। এবং অনেকাংশেই তাঁরা সফল হয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন বুবাই চক্রবর্তী, দেবব্রত দেবনাথ, কুনাল শীল, নীলয় পাল, শিবানী নামা, মাসুদা বেগম। মিউজিক করেছেন সুদীপা সাহা, দুলাল আচার্য, রাহুল আচার্য ও রাহুল দেবনাথ। মঞ্চভাবনায় বুবাই চক্রবর্তী।