সুমিত দাশগুপ্ত
সম্প্রতি নিরঞ্জন সদনে মঞ্চস্থ হয়ে গেল যাদবপুর নাট্য ঐক্য নাট্য সংস্থার নতুন নাটক ‘গর্ভগৃহ’। এই নাটকের নির্দেশক সুজন সাহা। টানটান মেজাজের এই নাটকের মূল বিষয়বস্তু হল গর্ভবতী নারী ও মায়েদের পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও বস্তিবাসী আদর্শবান সংগ্রামী চেতনাসমৃদ্ধ জীবনবাবুর মধ্যেকার দ্বন্দ্ব।
ফ্যাক্টরি লকআউট হয়ে যাবার পরেও জীবনবাবু তাঁর মতাদর্শ ও চলার পথ পাল্টায়নি অথচ জীবনবাবুর একসময়ের সঙ্গী রত্নাকর তার পথ পাল্টে একজন পেশাদার গুন্ডা। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে বস্তি খালি করার জন্য কাজ করে। বস্তিবাসী জীবনবাবুর উপর বস্তি খালি করার জন্য চাপ, আবার গর্ভবতী মেয়ের ও গর্ভস্থ সন্তানকে বাঁচানোর মরিয়া প্রচেষ্টা।
অবশেষে রত্নাকর তার ভুল বুঝতে পেরে অন্যায় উচ্ছেদ থেকে সরে দাড়ায় – কিন্তু ঐ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তার শক্তি দেখিয়ে অন্যপথে রাষ্ট্রের সহযোগিতায় বস্তি উচ্ছেদ করে – কিন্তু চরম ক্ষতি হয় জীবনবাবুর গর্ভবতী মেয়ের – গর্ভস্থ সন্তানকে হারিয়েও উচ্চস্বরে লড়াই জারি রাখার যে বার্তা সে দিল তার থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে সর্বহারাদের হারানোর কিছুই নেই – জয় করার জন্য আছে সারা দুনিয়া।
এই নাটকের কলাকুশলীরা সকলেই খুব ভাল অভিনয় করেছেন। দলগত অভিনয় নাটকটিকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে – তবুও আলাদা করে বলতেই হয় জীবনবাবুর ভূমিকায় অভিনেতা সুজন সাহা, রত্নাকরের ভূমিকায় প্রশান্ত দত্ত এবং জীবনবাবুর গর্ভবতী কন্যা ভূমিকায় পৃথা ভট্টাচার্যের অভিনয়, নাটককে এক অনন্য মাত্রা দান করেছে।
এই নাটকের মঞ্চ করেছেন অভিজিৎ নষ্কর, বাবলু সরকারের অনবদ্য আলো ও কল্যান সরকারের আবহ নাটকটির যথার্থ মেজাজ বজায় রাখতে সাহায্য করেছে। রূপসজ্জায় মহঃ ইব্রাহিম যথাযথ।
এইরকম একটা সামাজিক বিষয় নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য যাদবপুর নাট্য ঐক্য নাট্য সংস্থা তাদের নাট্য প্রযোজনার দায়বদ্ধতা পালন করেছেন। অভিনন্দন জানাই তাদের এইরকম সাধু উদ্যোগকে এবং এই নাটকটির বহু অভিনয়ের প্রার্থনা রইল।