Acting tips: অভিনেতা হতে গেলে যে ১০টি কৌশল জানতেই হবে

- Advertisement -

দেবা রায়

অভিনয় বিদ্যার ক্ষেত্র অসীম। অভিনয় (Acting tips) করার নানান পথ রয়েছে। অনেকটা নানা মুনীর নানা পথ। এই রীতি নির্ভর করে প্রয়োগ কর্তার কেরামতির ওপর। কিন্তু অভিনেতাকে পরিচালকের একজন উপকরণ মনে করে এগোতে গেলে, তাঁকে দক্ষতা নির্মানে (Acting tips) মনোযোগ দিতেই হবে। একজনের চিন্তাধারাকে নিজের মধ্যে নিয়ে তাকে তার গতি ও সুনির্দিষ্টতা বজায় রেখে সেই চরিত্র নির্মাণে অগ্রসর হতে হবে। আর এই প্রক্রিয়ার ফলাফল খুব ভালো হবে এটা বলার অপেক্ষা লাগে না।

অভিনয় বিদ্যার পাঠ বা কায়দা আপনার জন্য ফলদায়ক হবে এমন পদ্ধতি খুঁজে পাওয়া মুস্কিল, কারণ পেশাগতভাবে এই ফলাফল শেষ পর্যন্ত নির্ভর করে অভিনেতার ওপর। সে আপনি মেইসনারের দর্শন (Meisner’s philosophy), ব্যবহারিক  নন্দনতত্ত্ব (Practical Aesthetics) বা স্ট্রাসবার্গের (or Strasberg’s Method) পদ্ধতি ব্যবহার করুন না কেন, আসল ব্যপারটি বোঝা যায় যায় আপনি যখন সেটা রিহার্সাল দিচ্ছেন, সেখানে আপনি পারছেন কি পারছেন না, তার ওপর। অবশ্য এই সকল চিন্তাধারা ও প্রয়োগ ভাবনার সবই অভিনেতাকে সমৃদ্ধ করবে এবং সেই চরিত্র নির্মানে তাকে সেই সাহায্য করবে, এবং সে তার কর্মক্ষমতা দিয়ে এক অনন্য চরিত্র গড়ে তুলবে দর্শকের কাছে। 

অর্থাৎ এই নিবন্ধের দশটি অভিনয় কৌশল কিন্তু শেষ কথা নয়। তবে সেই চরিত্র নির্মানে ও প্রকাশে একটি গাইড লাইন বলা যেতে পারে। এই অধ্যয়নে থাকছে নাটকের বিশ্লেষণ, শারীরিক প্রস্তুতি ও চরিত্র বিকাশ। আপনি যদি মনে করেন ঐ এতো বই ধারা, সব পড়বার মতো সময় বা ধৈর্য আমার নেই, অথচ পেশাদার ভাবে এই শিল্পে নিজেকে যুক্ত করবার ইচ্ছা আছে, সেক্ষেত্রে এই দশটি টিপস  নিঃসন্দেহে অভিনয় শেখার কাজে কিছুটা হলেও কাজে লাগবে। তা প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও লাগবে।

এমন অনেক অভিনেতা আছেন যাদের আমরা প্রায়ই দেখতে পাই, যিনি এই কৌশল ও পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর এই কৌশল চর্চার সাথে সাথে নিজের মধ্যে ভাবনার জারণ বিজারণ ঘটিয়ে তিনি দর্শকধন্য হয়েছেন।

উপকরণ বা সরঞ্জাম

অভিনয় বিদ্যা এমন একটি সিস্টেম বা ব্যাবস্থাপনা যা তারা শ্রমের বিনিময়ে আয়ত্ত করেছে , প্রায়শই চরিত্রে অভিনয়ে পর একটা কথা চালু আছে, সেটা হল 'ফ্রাঙ্কেনস্টাইন'। 
অর্থাৎ আপনার অভিনয়ের সময় যে একাধিক পদ্ধতি ও দর্শনের সংস্পর্শে এসে তদোপরি নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তি প্রয়োগ, এ সবই অভিনয় বিদ্যার এক একটি সরঞ্জাম বা উপকরণ। অনেক সময় এইসকল প্রয়োগ উপকরণ অনেকেরই প্রয়োজন হয় না, আর তখন বুঝে নিতে হবে সেই অভিনেতা তার কৌশলে ঘটে বহু জায়দা রপ্ত করে ফেলেছে। যা তিনি সময় মতো সুনিপুনভাবে ব্যবহার করেন। তবে সেই কৌশলগুলি ও তত্ত্বগুলি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। আর সেই লক্ষ্যেই যারা অভিনয়কে পেশা করতে চাইছেন তাদের উদ্দেশ্যে এই নিবন্ধ।  তাদের অভিনয়ে উৎসাহিত করতেই এই লেখা।  
 আর তাই এই দশটি চিন্তার উল্লেখ এখানে করা হল। 

এই ১০টি কৌশল অভিনেতার অনুসরণ করা উচিত। একাধিক তত্ত্ব ও চিন্তাধারা পঠন পাঠনের পর দশটি চিন্তাকে বেছে নেয়া হয়েছে। যা একজন অভিনেতাকে প্রাথমিক স্তর উত্তরণে সহায়তা করবে মাত্র।

 

যে ১০টি অভিনয় কৌশল প্রতিটি অভিনেতার অন্বেষণ করা উচিত।

  1. উদ্দেশ্য (Objectives)
  2.  ক্রিয়া (Actioning)
  3.  কল্পনা (Imagination – the big ‘IF’)
  4.  লক্ষ্য স্থির করা (Targeting)
  5.  অন্তর্গত জীবনের বিকাশ (Developing an Inner Life)
  6.  উপস্থিত থাকা বা বশে থাকা (Being Present)
  7.  একক/ ধারক (Units/Beats)
  8.  বাইরে থেকে ভেতরে (Outside In)
  9.  শ্বাস আয়ত্ত্ব করা (Mastering Breath)
  10. নিরপেক্ষ শরীর (Neutral Body)
আপনি স্ট্যানিস্লাভস্কি, স্ট্রাসবার্গ, মেইসনার, বা চেকভ (মাইকেল বা অ্যান্টন) এর মতো মহান তাত্ত্বিকদের কাজগুলির জানুন, পড়ুন। পড়াই উচিত, কিন্তু তবুও বলবো, এটাই সব নয়। আপনি যা অধ্যয়ন করছে তার চাইতে অনেকগুণ বেশী চর্চা করে নিজেকে যোগ্য করে গরে তুলতে হবে। তাকে প্রায়োগিক জায়গায় নয়ে যেতে হবে। 

১০টি অভিনয় কৌশলের সংক্ষিপ্ত আলোচনা  

#১ উদ্দেশ্য (Objectives)


ধরা যাক একজন অভিনেতা অভিনয় করার জন্য শিক্ষকের কাছে এলেন। তখন তাকে বলা হল- ‘আপনি কি চান’? যদি আপনার উত্তর দেবার না থাকে তাহলে আপনাকে বসে পরতে হবে। এখানেই এই পাঠ শেষ।

এবার প্রশ্ন ‘কেন’?

এই প্রশ্নের উত্তরেই সব কিছু লুকিয়ে আছে। আপনার সহকর্মীর সাথের যখন অভিনয় করবেন, তখন নিজেকে প্রশ্ন করবেন   আপনি ‘কি করতে চান’ স্বাভাহাবিকভাবেই উত্তর আসবে আপনি ওমুক চরিত্র করতে চান। এবাত প্রশ্ন আসবে, ‘কেন’? সে যা উত্তর দেবে তাকে আবার তার চরিত্র নির্মানে সহায়তা করবে। এই দ্বন্দ্বই সেই না.নাটকের সারাংস হতে পারে। যা প্রথমে বোধগম্য ছিল না, কিন্তু এই চর্চায় থেকে নিজের সাথে নিজের একটা ধারাবাহিক বার্তালাপ চলতে থাকে।

মানুষ আকাঙ্খার দ্বারা পরিচালিত

মানুষের চাহিদা যা তাদের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছু করতে বাধ্য করে। ধরা যাক আপনি অভিনয় শিখবেন বলে আপনি ‘সার্চে’ লিখে খোঁজ  করলেন, এবং নিবন্ধটি পড়তে শুরু করে দিলেন, তাহলে কি দাঁড়াল? আপনার ইচ্ছা আপনাকে জোর করে কর্মে .ঠেলে দিয়েছে। এবং এই নিবন্ধ পড়ার পরে দেখা গেল আপনি একটি দল বা গোষ্ঠীতে  যোগ দিয়ে ফেলেছেন।

চরিত্রগুলি চাহিদা অনুযায়ী নির্মানের পথে হাঁটে। আমাদের চাওয়া বা চাহিদা প্রায়ই জাগতিক ও অরুচিকর হতেই পারে, কিন্তু সেখানে আমরা ব্যক্তি মানসিকতার ধার ধারলে চলবে না। নিজেকে মেলে ধরতে হবে, আমার ব্যক্তি ইচ্ছা অনিচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েও। নিজের মধ্যে সেই চরিত্রে দ্বন্দ্ব, অনুসন্ধান, উদ্ঘাটন বা মুক্তি (conflict, quests, revelations or redemption) খোঁজ  চলতেই থাকে। অর্থাৎ চরিত্রের ইচ্ছাই গল্পের অস্তিত্বের কারণ।

  • রোমিও জুলিয়েটকে চায়, জুলিয়েট রোমিওকে চায়। বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
  • ম্যাকবেথ রাজা হতে চায়, কিন্তু পথের মানুষ আছে। ম্যাকবেথ এই লোকদের হত্যা শুরু করে, বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
  • থানোস মহাবিশ্বের অর্ধেক জীবন ধ্বংস করতে চায়, ভাবনা শত্রুতায় উপনীত হয়।

অর্থাৎ অভিনয় জগতে এই ইচ্ছাই হল উদ্দেশ্য। অর্থাৎ আগন্তুক অভিনেতার প্রাইমারী যোগ্যতা ইচ্ছা প্রকাশ। আর এই উদ্দেশ্যকে অস্ত্র করে সে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।  

# ২ ক্রিয়া (Actioning)

তাহলে উদ্দেশ্য তো পাওয়া গেল এবার তাকে কর্মে প্রয়োগ করতে হবে। এই ধাপে আপনি স্বাভাবিক ভাবেই ঐ ইচ্ছার কারনেই তাকে বজায় রাখতে তাকে অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেন। আর ইচ্ছা অর্জনের জন্য সবার আগে যাকে আপনি বেছে নেবেন তা কৌশল।

একটি ভেবে দেখুন , আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে এই ইচ্ছা চরিতার্থ করতে নানা কৌশলের ব্যবহার করে থাকি। এটি অনেকটা সোসিওপ্যাথের মতো। ধরা যাকে আমি কারো কাছে টাকা চাইছি। কিভাবে চাইব? বিনয়ের সাথে চাইবো, অনুরোধ করে চাইবো এবং শেষে দর কষাকষি করে চাইবো। এই সবের বাইরে গুটি বা স্পেকটার্মের উল্টোদিকে গিয়ে প্রতিপক্ষকে ধমক দিতে পারি, হুমকি দিতে পারি এমনকি ফ্লার্ট বা প্রতারণাও করতে পারি। অর্থাৎ আমার টাকার দরকার, আমি একবার ভালোভাবে চাইবো, কাজ না হলে অন্যভাবে বলবো, এইভাবে বারংবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে হতে আমি আমার কৌশল পরিবর্তন করবো। কারণ উদ্দেশ্যটা টাকা। অর্থাৎ পরিস্থিতির ওপর আমি নিজেকে সেইভাবে উপস্থাপন করবো। এই বারংবার লড়াই করে যাওয়াই ক্রিয়া। যা সচল।  

আমাদের এই ক্রিয়া, কৌশল ও পদ্ধতি সনাক্ত করার মাধ্যমে, শুধুমাত্র একটি উদ্দেশ্য অনুসরণ করছি না, তাকে কীভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং কীভাবে একজন দর্শক আমাদের চরিত্রটি জানতে পারবে এবং বুঝতে পেরে তা বেছে নেবে। অর্থাৎ ক্রিয়াগুলি অন্বেষণে সহায়তা করে, আর যে কারনেই একই  উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে একাধিক পদ্ধতির চেষ্টা করে একটি দৃশ্যে বৈচিত্র আনতে পারি।

# ৩ কল্পনা (Imagination – the big ‘IF’)

এটি অভিনয় দক্ষতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একটি ভাল  অভিনেতা হওয়ার মূল উপাদানই হল কল্পনার বিকাশ। এবং কোন শব্দটি কল্পনাকে সবচেয়ে বেশি জাড়িত করে?

‘IF’ বা ‘যদি’

এই দুটি অক্ষর ভীষণভাবে কাজ করে, ধরা যাক, তাহলে কী হবে…? এটা কি আলাদা কিছু হবে যদি…? আমি আপনাকে বললে আপনি যদি… ইত্যাদি প্রশ্ন বারংবার মাথায় আসবে। ‘IF’ হল হাইপোথেটিক্যাল। যা সর্বাপেক্ষা প্ররোচনামূলক এবং অনুমাননির্ভর হয়ে সেখানে অভিনেতাদের উন্নতি ঘটায়। 

এই ‘দ্য ম্যাজিক ইফ’ কনসেপ্ট স্ট্যানিস্লাভস্কি বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে এটি ব্যবহারিক নন্দনতত্ত্বে  ‘Its as if I…’ হিসাবেও দেখা যায়। এমনকি যারা অভিনয়ের বই পড়েননি তারাও এইভাবে চরিত্রের বিশ্লেষণপূর্বক চরিত্র নির্মানে ব্রতী হন।

“If I were married to her, how would I hold her hand?”

“How would I feel if they did that?”

অর্থাৎ IF হল কল্পনার চাবিকাঠি। আপনি চরিত্রের মধ্যে থাকলে কীভাবে অভিনয়/ অনুভূতি/ আচরণ/ প্রতিক্রিয়া করবেন তা নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে। একটি চরিত্র এবং তার  চারপাশকে সম্পূর্ণরূপে জেনে বুঝে তাকে বাস্তবায়িত করে গরে তুলতে হবে।

# ৪ লক্ষ্য স্থির করা (Targeting)

ডেক্লান ডোনেলানের ‘দ্য অ্যাক্টর অ্যান্ড দ্য টার্গেট’ (The Actor and the Target by Declan Donnellan) নামে একটি খুব স্পষ্ট বই রয়েছে। এই লক্ষ্য স্থিরের ধারণাটি সুন্দরভাবে বর্ণনা করা আছে। একটু দেখে নেয়া যাক।  

এই সংলাপে আপনি অবস্থান করুন। ‘নাস্তার জন্য তুমি কি করেছো?’

কি উত্তর পাচ্ছেন? কল্পনা আপনি করতে শিখে গেছেন। নিশ্চই আপনার ব্রেক ফাস্টের একটা ছবি আপনার মাথায় এসে গেছে। অর্থাৎ এই নাস্তা বা সকালের জলখাবার নিয়ে আপনার মধ্যে ভাবনার ঝড় ওঠাতে হবে। এক্ষেত্রে তা পজিটিভ নাও হতে পারে। হয়ে পারে আপনার কফি করা পাত্রটি আজ সকালে ভেঙ্গে গিয়েছে। আর ঠিক তখন এই প্রশ্ন কি আপনাকে বিব্রত করবে না? আএ এখানেই আপনার মধ্যে দেখা যাবে সকালের খাবারের হতাশা যা আমি ভাবতে শুরু করি।

এবার ধরা যাক বলা হল-  ‘আপনি যা বলছেন(সংলাপ) তা নিয়ে ভাবুন।‘ 

আমরা অভিনয় করার সময় আমাদের এই ছবিগুলোকে   ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদেরব মনের মধ্যে বসাতে হয়। সচেতনভাবে চরিত্রের ছবি আঁকা এবং অভিজ্ঞতাগুলিকে ভেতর থেকে টেনে বার করে আনা। যদি শৈশবের সেই গাছের কথা বলা হয়, তখন আমাদের সেই নির্দিষ্ট গাছটির একটি ছবি মনের মধ্যে এঁকে ফেলতে হবে। চরিত্রটি একটি ভয়ানক গাড়ি দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলে আমরা এটি সম্পর্কে এগিয়ে যেতে পারবো।

আপনি যদি অভিনেতা এবং টার্গেটের ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে আরও জানতে চান তবে এটি পরীক্ষা করে দেখুন!

# ৫ অন্তর্গত জীবনের বিকাশ (Developing an Inner Life)

কল্পিত চরিত্রের অন্তর্গত জীবন যা দর্শকের কাছে উপস্থাপিত হয় তা কতটা ‘বাস্তব’ বা ‘real’ সম্মত হয়েছে সেটাই সেই চরিত্র নির্মানের সাফল্য। অভিনয় করার সময় অভিনেতার ও চরিত্রের ভেতরকার দ্বন্দ্ব অতবরত ক্রিয়াশীল তাহা দরকার। অভিনেতার উচ্চারিত সংলাপ এবং তার প্রক্ষেপণ তখনই সফল হবে।
সংলাপ উচ্চস্বরে বলুন আর তা নিচে বলুন সংলাপের আভ্যন্তরীণ অর্থ অনুধাবন না করতে পারলে তাকে সেই চরিত্রের আভ্যন্তরীণ কার্যকলাপের সাথে না মেলাতে পারলে সর্বোপরি অভিনেতার আভ্যন্তরীণ যুক্তি বোধের সাথে লাগাতার চর্চা না চললে সেই চরিত্র বাস্তব হয়ে উঠবে না।  
আমাদের প্রত্যেকের চারপাশের সবকিছু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা বাধ্যতামূলক। কারণ সেই সকল দর্শন বা অবজারভেশন  কল্পিত চরিত্র নির্মানে সহায়তা করে। 
যে সংলাপ অভিনেতাদের বলতে হয় অর্থাৎ স্ক্রিপ্টে লিখে রাখা সংলাপ, তার বাইরেও অনেক সংলাপ বা শব্দগুচ্ছ থেকে যায় তা আবিস্কার ক’রে প্রকাশ করতে পারলেই সেই চরিত্রের যথাযথ নির্মাণ সম্ভব।
 এখানে একটি কৌশল সম্পর্কে কিছু অভিজ্ঞতার উল্লেখ করছি

অভ্যন্তরীণ মনোলোগিং (Inner monologuing) হল চেতনা  মনোলোগের একটি অনুশীলন মাত্র যা একটি দৃশ্য সম্পাদন করার সময় অভিনেতার মনে চলতে থাকে।

আবার সংবেদনশীল স্মৃতি বা সংবেদনশীল স্মরণ (Emotional memory or emotional recall) হল বিশেষ পরিস্থিতিতে চরিত্রটি অনুভব করে সেই আবেগগুলিকে বুঝে চরিত্র চিত্রণ করাই অভিনেতার লক্ষ্য অর্থাৎ consciousness monologue।   

স্ট্রাসবার্গের পদ্ধতিতে একটি দৃশ্যে অভিনেতারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তার অন্বেষণ ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশের জন্য চরিত্র বোঝাটা খুব জরুরী।

সক্রিয় বিশ্লেষণ (Active analysis) -এর মাধ্যমে চিত্রনাট্যের  সীমাবদ্ধতা ছাপিয়ে চরিত্রের অভ্যন্তরীণ প্রেরণাগুলি (inner motivations) অনুসরণ করতে ইম্প্রোভাইজেশন ব্যবহার করা হয়।  

বর্তমানে চরিত্রের মতামতের ওপর আলোকপাত করা হয়। যেমন-

Opinions = Thoughts + Feelings, Irrelevant of facts অর্থাৎ মতামত = চিন্তা + অনুভূতি, তথ্যের অপ্রাসঙ্গিক। 

প্রথমে আরোপ (imposing) করা, তারপরে চরিত্রকে সেই গল্পের লোক, স্থান এবং ঘটনা (people, places and events) সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করা যা এক শক্তিশালী অন্তর্গত জীবনের জন্ম দেয়।    

এক্ষেত্রে এই বিষয়ে তদন্ত করার জন্য এই প্রক্রিয়াটি বেছে নিন কিন্তু সবার আগে সেই চরিত্রের অন্তর্গত জীবনের কৌশলগুলিতে বোঝা এবং তা বিনিময় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

# ৬ উপস্থিত থাকা বা বশে থাকা (Being Present)  

এটি আজ পর্যন্ত সকল অভিনেতাদের জন্য একটি চিরকালীন অধরা সমস্যা যা অসংখ্য তাত্ত্বিককেও মোকাবেলা করতে হয়।

কিভাবে নিখুঁতভাবে নিজেকে দর্শকের কাছে উপস্থিত করতে হয়।

আমরা যখন প্রথমে কোনো স্ক্রিপ্ট পড়ি, তখন তা কীভাবে অভিনীত হবে তা নিয়ে আমাদের মধ্যে তাৎক্ষণিক আবেগ ক্রিয়াশীল হয়। প্রথমবার জোরে লাইনগুলি পড়ার সময় তা স্বাভাবিকভাবেই আনুভূমিক থেকে যায়। এরপর আমরা যেভাবে কল্পনা করেছি তাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে একে একে এগিয়ে যাই। আর মূর্ত অভিনয়াংশের জন্যে নিজেকে প্রয়োজনে চালাকির স্বারা সরিয়ে রাখতে হবে, যা আক্ষরিক অর্থে নিজেকে প্রতারিত করা। তখন পাশ থেকে কথা ভেসে আসা সত্বেও “আপনি শুনছেন না।” আমি নিশ্চিত যে আপনি “অভিনয় প্রতিক্রিয়ায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন”

এবার দেখা যাক উপস্থিত থাকাটা (Being present) কি?  

যদিও এই বিষয়ে অনেকগুলি অনুশীলন রয়েছে এবং অনেক  তাত্ত্বিক এটির জন্য নিজেদেরকে উত্সর্গ করেছেন স্যানফোর্ড মেইসনার, এড অ্যাসনার এবং ল্যারি মস কয়েকটির নাম বলতে পারেন (Sanford Meisner, Ed Asner and Larry Moss to name a few)।

এখানে আমার কী করা উচিত নয় বা কি করা উচিত

বেশিরভাগ অভিনেতা তাদের সংলাপগুলিকে বার বার চারপাশে ছুড়ে দিতে থাকে, আর সেগুলি কিভাবে প্রক্ষিপ্ত হচ্ছে তা শিখতে থাকে। অভিনয়ের এই মহড়া চলাকালীন অভিনেতার অনুভূতিকে বেশী গুরুত্ব দিতে হয়। সেই সময় অভিনেতার অন্যান্য প্রতিক্রিয়া শূণ্যতায় এসে দাঁড়ায় যেন মনে কম্পিউটারে কে যেন প্রোগ্রামিং করে দিয়েছে। আর সেই মত অভিনেতা সচল থাকছে।  

আপনার সংলাপাগুলি আগে শিখুন, নিজের কর্মক্ষমতাকে উজার করে দিন। ভাবনায় ও তা প্রয়োগে দ্বিধাহীন থাকুন। বাড়ী থেকে প্রস্তুতি না নিয়ে সে পরিচালকের সামনে সেই চর্চায় নিয়োজিত রাখলে আউটপুট ভালো হবে।     

মনে রাখতে হবে আপনি যত বেশি বিকল্প বিবেচনা করে শব্দ প্রক্ষেপণ করবেন, তত বেশি আপনার সহযোগীরা আপনাকে পাল্টা কিছু নিক্ষেপ করবেন এবং আপনিও তাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত করতে সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ ‘সাহসী হওয়া’ দরকার যা আপনাকে সুফল দেবে। নিরাপদে খেলে কিছুই লাভ হয় না।

# ৭ একক/ ধারক (Units/Beats)  

একজন অভিনেতাকে চিত্রনাট্য এবং দৃশ্য বিশ্লেষণ করা   অপরিহার্য। যিনি স্ক্রিপ্ট লিখেছেন বা সাহিত্য অধ্যয়ন করেছেন  তাঁরা জানেন যে একটি গল্পের জন্য কাঠামো কতটা গুরুত্বপূর্ণ।    প্রকৃতপক্ষে, গল্পের কাঠামো বিশ্বব্যাপী সকল রচনার মধ্যে একটা কমন ফ্যাক্টর। তবে বলার মধ্যে পার্থক্য হতে পারে। এখানে অনেক অভিনেতাই এটিকে বুঝতে ভুল করেন। কাঠামোর দৃষ্টিপাত না দিলে আপনি অবশ্যই আসল বিষয়টি থেকে বেড়িয়ে যাবেন।

স্ক্রিপ্টের কর্ম, বিষয় বা শক্তির মুহূর্তগুলিতে ( objective, action or emotion)  ভাগ করার জন্য বীট বা ইউনিট ব্যবহার করা হয়। এই স্ক্রিপ্টে বীট/ইউনিটগুলি বার বার পাল্টে পাল্টে চিহ্নিত করে রাখা এবং দৃশ্যের নতুন তথ্য কিছু মাথায় এলে তা সনাক্ত রাখা যা পরবর্তিতে চরিত্র চিত্রণে সাহায্য করবে। এটিকে ‘ওয়ান নোটিং’ থেকে বিরত রাখতে পারে।

# ৮ বাইরে থেকে ভেতরে (Outside In)

অভিনয় শিল্প ও নৈপুণ্যের সমান। নৈপুণ্যের উপাদানটিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়, কারন এতিকে উপেক্ষা করে অনেক বড় অভিনেতা আসল সময়ে মঞ্চে উঠে অস্ফল হন।

কখনও কখনও, আপনি আপনার নিজস্ব সৃজনশীল আবেগ দ্বারা সম্পূর্ণরূপে ইন্ধনপ্রাপ্ত হন। এবং আপনার কল্পনা আপনাকে চরিত্রে উপস্থিত বা মূর্ত হতে সাহায্য করে। তাই এক্তি বিষয় নিয়ে পরে থাকলে হবে না। 

‘ইনসাইড-আউট’ অভিনয় (অভিনয় যেখানে শারীরিক এবং কণ্ঠ্য শক্তি অভ্যন্তরীণ মনস্তাত্ত্বিক উদ্দীপনা দ্বারা প্রভাবিত হয়) একটা দারুণ ব্যাপার। কিন্তু অনেক সময় অভিনেতাকে সেই চরিত্রে পাওয়া যায় না। আসল কথাটা হল আপনি কি সত্যিই নিজের ভেতর থেকে বিষয়টি অনুধাবন (‘feeling it’ internally or not) করছেন?  

দিনের শেষে, একমাত্র ব্যক্তি যাকে আসলে কিছু অনুভব করতে হয় তা হল একমাত্র দর্শক।  

লাবানের (Laban) মনস্তাত্ত্বিক অঙ্গভঙ্গি (psychological  gestures), আন্দোলনের কিছু অসম্ভব ভালো কাজ রয়েছে যা আবগ প্রকাশ করে আবার কখনও একটি নির্দিষ্ট অবস্থাকে প্ররোচিত করে, যেমন রাশিয়ান অনুশীলনকারী ভেসেভোলোড  মেয়ারহোল্ড (Vsevolod Meyerhold) করেছিলেন। স্টানিস্লাভস্কি (Stanislavski) শরীরকে নাড়াচাড়া করার কথা বলেছিলেন।

অর্থাৎ ভিতর-বাইরের পদ্ধতিগুলির (inside-out methodologies) ভারসাম্য বজায় রাখা যা তাকে খ্যাতি এবং স্বীকৃতি এনে দেয়। ALBA ইমোটিং এবং PEMS অঙ্গবিন্যাস, মুখের মুখোশ এবং শ্বাসের প্যাটার্ন নিয়ে কাজ করেন।  যা প্রকাশ করার জন্য কোরিওগ্রাফি হিসাবে শেখা যেতে পারে।

# ৯ শ্বাস আয়ত্ত্ব করা (Mastering Breath)

অভিনয়ের আবশ্যিক চাবি হল এও শ্বাস। এই চাবির সাহায্যের একজন অভিনেতা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকেন। অভিনেতা ভালো না খারাপ এই বিভাজনের মধ্যকার একমাত্র কারণ এই ‘শ্বাস’ (‘breath-taking’) । 

ভাল অভিনেতারা পারফরম্যান্সকে তাদের শ্বাসের দ্বারা প্রভাবিত করতে দেয় আবার তাদের শ্বাস দ্বারা অভিনয়কে প্রভাবিত করতে দেয়। এই পারস্পরিক চলন অভিনেতাকে বাড়তি আকর্ষণে সাহায্য করে। আর যারা একে উপেক্ষা করেন তারা চিরকালই খারাপ অভিনেতাই থেকে যান। তার হয়তো সংলাপ বলেন কিন্তু অভিনয়ের সেই মাত্রায় তারা যেতে পারেন না।   

একমাত্র আবেগই হল শ্বাস। যেমন হাসিতে শ্বাস গ্রহন ও ত্যাগে ব্যাঘাত ঘটে, একইভাবে কান্না ক্ষেত্রেও তাই। যখন আমরা   হতবাক হই তখন তীব্রভাবে শ্বাস নিই। যখন আমরা আতঙ্কিত হই তখন আমাদের শ্বাসের হার বেড়ে যায়। যখন ব্যথা অনুভব করি তখন সেই আবেগের মাধ্যমে শ্বাস নিতে বলা হয়। আবার  নিজেদেরকে শান্ত করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের শ্বাস ধীর করে দিই। যখন আমরা কিছু দেখি বা অবিশ্বাস্য কিছু অনুভব করি তখনও এই শ্বাসের ব্যবহার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর এই প্রক্রিয়া অভিনয়ের ক্ষেত্রে অভিনেতার জন্য অপরিহার্য দিক।  

শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরণগুলির আয়ত্ব করা তাই অভিনেতার আসল কাজ। যদিও এটি খুব কঠিন কাজ কারণ এটি মূলত অবচেতনের একটি অংশ।

অর্থাৎ নিয়মিত নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাস করা জরুরী। একজন প্রশিক্ষকের সাহয্যেই এই কাজ করা ভালো, নচেৎ ভুল ব্যায়ামের ফলে আমাদের কন্ঠ ও মস্তিস্কের নানা স্নায়ু বিকল হতে পারে। এই ক্ষেত্রে আমাদের নিয়মিত যোগা অভ্যাস আরো ভালো ফল দেবে। 

# ১০ নিরপেক্ষ শরীর (Neutral Body)   

“শব্দের সাথে ক্রিয়া, কর্মের সাথে শব্দ।” (Suit the action to the word, the word to the action.) এই মন্ত্রে অনুসরণ করে একজন অভিনেতাকে তার অভিনয় চর্চায় নিয়োজিত থাকতে হবে। 

শরীর অভিনেতার আসল যন্ত্র। সেই শরীরকে গড়ে তোলা অভিনেতার মূখ্য কাজ।  

অভিনেতার শরীর কখনোই চরিত্রের শরীরের প্রতিনিধিত্ব করছে না। অভিনেতা একজন পর্যবেক্ষক হিসাবে পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন মাত্র, অংশগ্রহণকারী হিসাবে নয়। অভিনেতাদের শরীর নিরপেক্ষ নয়। তারা তাদের শরীরে অবস্থান করেই চরিত্রের শরীর হয়ে ওঠেন।   

যখন ‘নিরপেক্ষ শরীর’ শব্দটি বলি, তখন অভিনেতাদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক একটা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যে নিরপেক্ষতা ব্যাপারটা খুব খারাপ! নিরপেক্ষতা সব কিছুতেই অকার্যকর অর্থাৎ তারা মনে করেন চরিত্রের পক্ষপাত না থাকলে চরিত্র হয়ে ওঠা যাবে না।  

সামনে একটি ফাঁকা ক্যানভাস চিন্তা করুন. যেখান থেকে যা খুশি করা সম্ভব। আমি তাতে আমার মতো করে ছবি আঁকতে পারি, কোনোরকম পুর্বধারনা বা প্রস্তুতি নিয়ে নয়। তবে আমরা যদি অন্য কিছু আঁকতে চাই তবে আমরা যাই আঁকি না কেন তাতে সেই চিহ্নের পটভূমিই থাকবে। আবার তাতে সাদা রঙের প্রলেপ লাগিয়ে আবার নতুন করে ছবি আঁকার ক্ষেত্রও তৈরি হয়।

নিরপেক্ষ শরীর (Neutral body) সবসময় অভিনেতার অভিব্যক্তি প্রকাশে মুক্ত। সেখানে কোনো বাঁধা নেই। অভিনেতার এই অবস্থান তার দ্বারা নির্মিত চরিত্র চিত্রনে অসামান্য ভ|ূমিকা গ্রহন করে। 

অর্থাৎ শারীরিক নিরাপত্তাহীনতা আসল অভ্যাস বা অসহায় idiosyncrasies -গুলিকে বাধা না দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে আপনার শরীর প্রতিক্রিয়া করার জন্য স্বাধীন হয়ে ওঠে।   

আবার আপনার শরীরকে নিরপেক্ষ অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে দেওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি একটি দক্ষতা যা অবশ্যই অভিনেতাকে আয়ত্ত করতেই হবে।

নিরপেক্ষতায় ফিরে যাওয়ার অনুশীলন (মনে রাখবেন যে আমি আপনার নিরপেক্ষ সম্পর্কে কথা বলছি, সর্বোপরি আপনি নিজেই) আপনার শরীরকে পরের মুহুর্তের সাথে যুক্ত হতে সহায়তা করবে। অর্থাৎ এই অবাধ চলন না হলে অভিনেতা মূর্ত হয়ে উঠতে পারবেন না। চেতন ও অবচেতনের এই প্রক্রিয়া খুব সহজ অভ্যাস নয়। তাকে নিয়মিত চর্চার মধ্যে নিয়ে আসতেই হয়।

আশা করি এই তালিকাটি আপনাদের কাজে লাগবে, এবং যারা নতুন অভিনয় করতে চাইছে তারা নিজেক পরিমাপ করে নিতে পারবেন। অভিন্য কোনো সহজ বিদ্যা নয়, এর ব্যাপ্তি অনেক। অর্থাৎ আপনার ইচ্ছা কীভাবে ধীরে আপনাকে অভিনেতাতে পরিণত করতে পারে তারই একটি সরল ব্যাখ্যা এখানে দেয়া হল। আগামী দিনে আমরা আরও বিষয় নিয়ে এখানে আসবো।

নিজেকে পরিমাপের পর আপনি যেদিন এই কাজে নিয়োজিত হবেন, তখন আপনি অবশ্যই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করবেন। এই অভিনয় বিদ্যা আসলে মানুষের মননশীল চেতনার প্রকাশে সাহায্য করে। মানুষ হিসেবে নিজেকে খনন করা যায়। পৃথিবীতে একজন সৃষ্টিশীল মানুষ হয়ে বেঁচে থাকায় আনন্দ অনেক।  

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -