নিজস্ব প্রতিনিধি
গতকাল অশোকনগর শিব বাড়ির মাঠে উদ্বোধন হয়ে গেল অশোকনগর নাট্যোৎসব ‘২৩। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চোখে পড়ার মতো ভীড়। প্রধান আকর্ষণ অবশ্যই মোশারফ করিম (Mosharraf Karim)। আর এই কাজের নেপথ্যের যিনি প্রধান পুরোহিত তিনি আর কেউ নন, এই অঞ্চলের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। তাঁরই মস্তিস্ক প্রসূত এই নাট্যায়োজন। আর তাঁর এই আন্তরিক আহ্বানে বাংলাদেশ থেকে সস্ত্রীক ছুটে এসেছেন ওপার বাংলার তথা আমাদের সকলের পছন্দের অভিনেতা মোশারফ করিম (Mosharraf Karim)। মঞ্চে তাঁকে প্রথমে সম্বর্ধনা দেয়া হল। এবং তাঁর অব্যবহিত পরেই তাঁকে বক্তব্য রাখার জন্য আহ্বান জানানো হল। জনতার মুখরিত উল্লাসধ্বনি নিমেষে জানান দিয়ে গেল এই অভিনেতাকে বাংলা মানুষ কতটা ভালোবাসেন, আর সেই উষ্ণতার ফলস্বরূপ তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে আনন্দের সাথে ঘোষণা করলেন এই বাংলা নাট্যমঞ্চে তথা অশোকনগরের নাট্যমঞ্চে অভিনয় করতে চান। সেই কথা শোনার সাথে সাথে সমবেত দর্শকমন্ডলীর কড়াতালিতে ফেটে পড়লো চারদিক।
মোশারফ করিম (Mosharraf Karim) ঠিক কি বললেন তা জেনে নেওয়া যাক। ‘আমি এখানে আরোও একবার আসতে চাই অথবা বহুবার। এবং আসতে চাই অভিনয় করার জন্যই। ইচ্ছা করছে এখানকার মঞ্চে অভিনয় করি। পরের বার যাতে একটা মঞ্চ নাটক নিয়েই আসতে পারি। … খুব বেশী দূরে না তো, আমি অশোকনগর আবার আসবো, বারবার আসবো, এবং বার বার আসতে চাই আসলে এবং সত্যি সত্যি অভিনয় করার জন্যই আসবো। নারায়নদা তো আছেন, ডাকলেই চলে আসবো, বা যে কেউ ডাকলেই চলে আসবো। অসুবিধা নাই, ধন্যবাদ। ডাক দিয়েন হ্যাঁ!’
এমন আন্তরিতায় চাওয়া এই আবেদন সত্যিই বাস্তবায়িত হতে চলেছে বাংলা নাট্যমঞ্চে। এমনই ইঙ্গিত বা তা বাস্তবায়িত করার প্রস্তাব রাখলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এই মঞ্চে শ্রীবসুর উপস্থিতির সাথে সাথে এই বাংলার আর এক মন্ত্রী পার্থ গোস্বামীও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন নাট্য আকাডেমীর সদস্য অভি চক্রবর্তী। অশোকনগর নাট্যোৎসবের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যেন নিমেষে চাঁদের হাটে পরিণত হয়েছিল। এই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মোশারফ করিম মহাশয়ের স্ত্রী রোবেনা রেজা জুঁই। তাঁকেও উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে সম্বর্ধনা দেওয়া হল।
মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নাট্যকার ব্রাত্য বসু তাঁর ভাতৃপ্রতীম বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাপতি নারায়ণ গোস্বামীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি তাঁকে উদ্দেশ্য করে দাবী করেন এই অশোকনগরের উন্নতির অন্যতম প্রধান কারিগর ও রুপকার হিসেবে। তিনি ধন্যবাদ দেন নারায়ণ গোস্বামীকে কারণ তিনি নিজ উদ্যোগে মোশারফ করিমকে (Mosharraf Karim) নিয়ে এসেছেন বলে। তিনি একবাক্যে স্বীকার করে নেন, মোশারফ করিমকে নিয়ে আসার কোনো উদ্যোগ তাঁর পক্ষ থেকে থেকে ছিল না। অর্থাৎ তাঁকে এমন একটি অনুষ্ঠানে নিয়ে আসার একমাত্র দাবীদার নারায়ণ গোস্বামী নিজেই। তাঁর বক্তব্যে ধরা পড়ে, যেহেতু মোশারফ করিম তাঁর সিনেমায় কাজ করেছেন, তারই যোগাযোগ সূত্রে মোশারফ ভাইকে এই মঞ্চে উপস্থিত করা সম্ভব হয়েছে। এমনটা সাংবাদিক ভাইদের মনে হতেই পারে। কিন্তু না এই ব্যাপারে তাঁর কোনোরকম সহযোগ ছিল না। এই কাজের পুরো কৃতিত্বই নারায়ণ গোস্বামীরই।
প্রকৃত গুণির মর্যাদা দিতে পেরে তিনি খুব খুশী। মোশারফ করিমের অভিনয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন তিনি। তাঁর অভিনয় দক্ষতাকে বেশটের এলিয়েনেসনের সাথে তুলনা করেন। তিনি বলেন এই অভিনেতা অসম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত, কিন্তু তিনি সবকিছু বার্ডস আই ভিউ থেকে দেখেন। একটু যেন পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন, একটু যেন পৃথিবী থেকে অসংলগ্ন, এই পৃথিবীর ধোঁয়া ধুয়ো তারা আলো এগুলো তাঁর গায়ে মেখে আছে, এবং সেগুলোর মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে্ন। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি এই নাটকের উৎসবের কথা বললেন। এবং কোথাও যেন অনুভব করেন, হতে পারে নাট্য শিল্পে পপুলিষ্ট কালচারের দরকার আছে কিন্তু নাটকটাকে দেখতে আসারও দরকার আছে। যারা শুধু মোশারফ ভাইয়ের কথা, ডায়লগ বা গান শুনে চলে গেলেন আর যারা তারপর অনুষ্ঠানে শেষ পর্যন্ত থাকলেন, এই দুই দিককে দারুণভাবে দর্শকপমনে উপস্থাপন করে দিলেন। এবং প্রতিদিন নাটক দেখতে আসার আবেদন রাখলেন।
শিববাড়ির অঙ্গনে অনুষ্ঠানের শেষে নারায়ণ বাবুর আহবানে শহীদ সদন প্রেক্ষাগৃহে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্যে দিয়ে এই নাট্য উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল। আগামী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই উৎসব। একটি নাটকের উৎসবকে সফল করার জন্য এরকম একটি পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে নাট্যমহলের একাংশের ভ্রু কুচকে উঠবে নিশ্চই।