Natok: বরানগর এবং নাট্যদলের নাটক ‘নিখোঁজ শুভ্র’ – প্রসেনিয়াম থিয়েটারে আশ্চর্য একটা ছবি

- Advertisement -

ডক্টর বাসুদেব বসুশিলিগুড়ি

নাটক: নিখোঁজ শুভ্র

রচনা: সুব্রত কাঞ্জিলাল

প্রয়োগ: সমিত দাস

প্রযোজনা: বরানগর এবং

গত 24 শে মার্চ’ ২৩ বরানগর রবীন্দ্রভবনে নাটক (Natok) দেখার আমন্ত্রণ পেয়ে তাদের নাটক দেখতে গিয়েছিলাম, তারই একটি প্রতিক্রিয়া জানালাম ‘বাংলানাটক’ (banglanatok.in)-কে 

এই দলটাকে এবং নাট্যকারকে থিয়েটার মহলের সবাই চেনেন না। থিয়েটারের দর্শকরাও এঁদের অপরিচিত নয়। মূলত এঁদের আকর্ষণে আমিও ছুটে গিয়েছিলাম বরানগরে।

রাতে বাড়ি ফিরে, বারবার মনে হল, প্রসেনিয়াম থিয়েটারে আশ্চর্য একটা ছবি দেখে ফিরলাম। এ যেন ঠিক থিয়েটার নয়। থিয়েটারের ভাষায় অন্য ধরনের সিনেমা দেখা।

সিনেমার শটের মত, দৃশ্য বিন্যাস এর মত ছোট ছোট টুকরো টুকরো ছবিগুলো জুড়ে জুড়ে ৪০ বছরের দীর্ঘ সময়ের একটা গল্প দেখে এলাম। একটা সাইকেলের গল্প। শুভ্র নামের একটি মানুষের গল্প। আশির দশকের শুরুতে করুণা নামের একটি মেয়েকে যে ভালোবাসতো। ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সংসার করবার স্বপ্ন দেখতো। ঠিক একই রকম ভাবে সে ভালোবাসতো তার প্রয়াত দাদুর কাছ থেকে পাওয়া সাইকেলটাকে।

শুভ্র ও করুণার প্রেম, বিবাহ, সংসার জীবন যাপনের মধ্যে আরও একজনকে আমরা পাই। সে হল সমাজ বদলাবার স্বপ্ন নিয়ে রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্রোর দাদা স্থানীয় বন্ধু সমর। এই মানুষটার অর্ধেক জীবন জেলে কাটাতে হয়। তাই সংসার করা হয় না। তাই বলে সে শুভ্র আর করুণার

প্রেম ভালবাসা সংসারের জটিলতা বুঝতে পারে না, তা কিন্তু নয়।

সাইকেলের অনুষঙ্গ নিয়ে বারবার ফিরে আসে শুভ্র’র প্রয়াত দাদু। এই বিগত জীবনের মানুষটি যেন শুভ্রর সংসারে জ্বলন্ত আগুনের মতো হয়ে ওঠে।

করুণা বিয়ের আগেই ঘোষণা করে দেয়, বিগত দিনের সাইকেলটাকে শুভ্রকে বর্জন করতে হবে। নইলে করুণাকে বর্জন করতে হবে।

নিখোঁজ শুভ্র নাটকের একটি দৃশ্য

শুভ্রর নতুন সংসারে সাইকেলের জায়গা হয় সিড়ির নিচের আস্তাকুড়ে।

এই নাটকের মধ্যে নাট্যকার বুকের রক্ত দিয়ে যে গল্প আমাদের শোনালেন তা হল, ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক জীবনের সংঘর্ষ। এই সংঘর্ষের মধ্যে দাঁড়িয়ে কী করবে শুভ্র? লোহার দামে সাইকেলটাকে বেচে দেবে?

শুভ্র নিখোঁজ হয়ে যাবার পর অন্তিম দৃশ্যে আমরা দেখতে পাই, রেললাইনে কাটা পড়ে যাওয়া সাইকেল এবং শুভ্র কে খন্ডবিখন্ডিত করে দর্শকএর সামনে

দর্শকের মাঝখান দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।

আমাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয় এই নাটক। আমাদের পিঠে সজোরে চাবুক চালিয়ে দেয় এই নাটক। আমাদের চৈতন্যের ঘুম ভাঙিয়ে দিতে পারবে কি না জানিনা।

আমি সারারাত চোখের জলে বালিশ ভিজিয়েছি।

অসামান্য প্রয়োগ পরিকল্পনা কথাটা বলবার পরেও কিছুই বলা হয় না। গ্রুপ অ্যাক্টিং অনবদ্য। তারই মাঝে করুণা চরিত্রে অনি দাস ও শুভ্র চরিত্রে সমিত দাস

এই মুহূর্তের বাংলা থিয়েটারের সম্পদ হয়ে উঠেছে।

আমার মতো প্রবীণ মানুষের চোখে দেখা শিল্পসম্মত আধুনিক কয়েকটি থিয়েটারের তালিকার অবশ্যই এই নাটকের নাম লেখা হয়ে থাকবে।

এই নাটক যারা দেখতে পাবে না, তারা দুর্ভাগা। এই নাটকের অভিনয় দেখার জন্য যাদের আগ্রহ তৈরি হবে না তাঁদেরকে একটি কথাই বলবো, আপনারা নিজেদের বঞ্চনা করলেন। বাংলা থিয়েটারের সত্যিকারের মান আজ যে কোথায় পৌঁছেছে এই নাটক তার প্রমাণ।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -