Sam Bahadur: স্যাম মানেকশ’র বায়োপিকে ভিকি কৌশল দুর্দান্ত

- Advertisement -

নৈতিক রায়

সাম্প্রতিক ছবি- স্যাম বাহাদুর

পরিচালক- মেঘনা গুলজার

স্ক্রীপ্ট- ভবানী আইয়ার, শান্তনু শ্রীবাস্তব ও মেঘনা গুলজার 

গত ১ ডিসেম্বর মুক্তি পেল শ্যাম বাহাদুর (Sam Bahadur)। মেঘনা গুলজারের পরিচালনায় এটি ভারতের প্রথম ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ’র জীবনীর আধারে নির্মিত বায়োপিক। স্যাম মানেকশ’র ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ভিকি কৌশল। এটি তাঁর অভিনয় জীবনের নিঃসন্দেহে মাইলস্টোন পারফর্মেন্স। সমগ্র সিনেমার ছত্রে ছত্রে অভিনেতা ভিকি কৌশল তাঁর অভিনয় দক্ষতা দেখাবার সুযোগ পেয়েছেন। এবং সেটা সফলভাবে করে দেখিয়েছেন।  

স্যাম মানেকশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর গর্ব। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইতিহাসে পাঁচ পাঁচটি যুদ্ধের সাক্ষী। এহেন একজন ঐতিহাসিক চরিত্র নিয়ে কাজ মানেই চলচ্চিত্র নির্মানের ক্ষেত্রে পরিচালক বা স্ক্রিপ্ট রাইটাদের একটা বাড়তি চাপ থাকেই। এসব কাটিয়ে ছবিটি বিনোদনের মাত্রা বজায় রেখে সুকৌশলে ইতিহাসে পাতা একটা একটা করে উন্মোচন করেছেন পরিচালক মেঘনা। ছবির ট্রেলার দেখেই বোঝা গিয়েছিল এই ছবি ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক সফল নির্মাণ।

ছবিটি বায়োপিক যার নামে তিনি আর কেউ নন, সর্বজনবিদিত স্যাম মানেকশ, তাঁর কীর্তির অন্যতম কৃতিত্ব বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সহায়তা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশ ও ইচ্ছা পালনে তিনি জয়ী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। অবিভক্ত ভারতের হয়ে বহুবার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে ভারতকে রক্ষা করেছেন তার দীর্ঘ চল্লিশ বছরের কর্ম জীবনে। তা সে বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে ৬২ সালের চীন যুদ্ধ পর্যন্ত।

সিনেমার পটভূমিকা শুরু স্যামের শৈশব থেকেই। শৈশবে তাঁর নাম ছিল, সাইরাস কিন্তু একটি অদ্ভুত কারণে  তার বাবা মা তার নাম পরিবর্তন করেন। এই ছবিতে বিশ্বযুদ্ধ থেকে চীন যুদ্ধ সবই চিত্রায়িত হয়েছে। প্রায় ২৫ কোটির বাজেটে নির্মিত  এই ছবিটি। বক্স অফিস প্রত্যাশা করছেন এর বহুগুণ অর্থ উঠে আসবে।

একজন সামরিক বাহিনীর ফিল্ড মার্শালের যে চরিত্র, যাতে আছে দুরদর্শিতা, শারীরিক সক্ষমতা মানসিক দৃঢ়তা, কতৃত্ব, সঠিক সময়ে সঠক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা, বাচল শৈলী সব কিছুকে অভিনেতা দারুন দক্ষতা সাথে রপ্ত করে স্যাম মানেকশ হয়ে উঠেছেন। ছবিটি দেখে মনে হবে, যেন ইতিহাসের সেই মুহুর্তে আমরা চলে যাচ্ছি।

ছবি নির্মাণে হাস্যরসের ব্যবহার ছবিটিকে বানিজ্যিক সফলতা এনে দিয়ে পারবে বলে চলচ্চিত্র মহল মনে করছেন। ইতিহাস আশ্রিত কাহিনীও অনেকসময় বিনোদন হয়ে ঊঠতে পারে না। কিন্তু এই’স্যাম বাহাদুর; যেন তা থেকে বেশ আলাদা থেকেই এগিয়ে গেছে। চারিত্রিক বিশ্লেষণে সাম মানেকশ’র রসবোধও সর্বজনবিদিত। সেই হাস্যরসকে পরিচালক বেশ সফল প্রয়োগ করেছেন। ফিল্ড মার্শাল ইন্দিরা গান্ধীকে ‘সুইটি’ বলে ডাকতেন। এবং সুক্ষম বিষয়টিকেও এই ছবিতে উপপাদ্য করা হয়েছে। এমনকি বার্মা যুদ্ধের সময় বুকে ন’টি গুলি লাগারপরও তিনি হাসতে পাঁচেন, এবং তাকে চিকিৎসা করার জন্য একজন অস্ট্রলিয়ান চিকিৎসক প্রথলে জানিয়েই দেন, যে তিনি আর বাঁচবেন না। স্বাভাবিক সেটা। নটি গুলি খেয়ে কেউ বেঁচে থাকতে পারে? কিন্তু সেদিন মানিকশ’র সেই হাসির কারণে সেই চিকিৎসক তাকে সুস্থ করে তুলেছিলেন।

সম্পূর্ণ ছবি জুড়ে ভিকি কৌশল দর্শকদের মাতিয়ে রাখতে সফল হয়েছেন। অন্যান্য চরিত্রেরা সেভাবে আলোকপাত হতে পারেনি। ছবিতে তার দাপুটে অভিনয় অনেক অভিনেতাকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে বলেই মনে করছেন বলিউড ইন্ডাস্ট্রি। এই ছবিতে ইন্দিরা গান্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছে ফাতিমা সানা শেখ, তার স্ত্রীর ভুমিকায় অভিনয় করেছেন সানিয়া মালহোত্রা, ইয়াহিয়া খানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোহাম্মদ জিশান আইয়ুব, পন্ডিত নেহেরুর চরিত্রে ছিলেন নীরজ কবি প্রমুখ। এনাদের উপস্থিতি পর্দায় থাকলেও তাঁদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট কিন্তু এই ছবিতে সচেতনভাবে এরিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ এটি স্যাম মানেকশ’র বায়োপিক। তাই ভিকি কৌশল সম্পূর্ণভাবে স্যাম মানেকশ হয়ে উঠতে সফল। তাই ইতিহাস ও অভিনয় দুটিই দেখা ও জানার জন্যই স্যাম বাহাদুর দেখা উচিত।   

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -