নিজস্ব প্রতিনিধি
নাটক চলার মাঝেই বারবার বেজে উঠল ফোন। বার বার ছন্দ হারাল নাটক। এমন ঘটনায় বেজায় ক্ষেপে গেলেন অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী। যা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘‘দর্শকাসনে বসে তখন সকলে হোয়াটসআপ করছে সেটাও দেখা যাচ্ছে। ফোন বেজে উঠছে হঠাৎ করে। এর ফলে মনোসংযোগ নষ্ট হয়ে যায়। আমরা শো শুরুর আগেই বলে দিই, তারপরেও এমন ঘটনা বারবার ঘটে। যতবার মোবাইল বাজে ততবারই বন্ধ করে দিতে হয় শো। এক দু’জনের জন্য বাকিরাও ভোগে। তবে তারপরেও বন্ধ হয় না এসব। জনে জনে গিয়ে তো বলা সম্ভব নয়। তখনই খুব অবাক লাগে, কেন এত অসম্মান, কেন এত উদাসীনতা।’’
এই মুহূর্তে বাংলা বিনোদন জগতের অতি পরিচিত মুখ অনির্বাণ চক্রবর্তী। ‘একেন বাবু’ হিসাবে দর্শকদের অঢেল ভালোবাসা কুড়িয়েছেন তিনি। ওটিটির পাশাপাশি রুপোলি পর্দাতেও সফল একেন বাবু। তবে মঞ্চের প্রতি টান এখনও ছিন্ন করতে পারেননি। মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিনয় আর দর্শকদের লাইভ রি-অ্যাকশন দেখার সুযোগ, এই দুইয়ের লোভ সামলানোটা বড় কঠিন রঙ্গমঞ্চের অভিনেতাদের পক্ষে।
তবে বড়পর্দায় জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও, নাটক বা থিয়েটারের মঞ্চে তাঁর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। রবিবার অভিনেতা সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। যেখানে লেখা, ‘আজ সকালে অ্যাকাডেমিতে নাটকের শো ছিল। কিছু “_____” দর্শক সমস্ত অনুরোধ উপেক্ষা করে মোবাইল চালু রাখলেন। ৬/৭ বার নাটক বন্ধ করতে হল। ফলে যা হওয়ার তাই হল।’কী এমন হয়েছিল সেদিন? কেনই বা বন্ধ করতে হয়েছিল নাটক?
ফোনের জ্বালাতনে অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী কেন এত অসম্মানবোধ করেছেন, সেই বিষয়ে তিনি সংবাদ মাধ্যমে মুখ খুলেছেন। অনির্বাণ চক্রবর্তীর কথায়, ‘এটা একটা ন্যূনতম ভদ্রতা, যখন কোথাও কোনও অনুষ্ঠান দেখতে যাব, তখন সেখানে নিজের ফোন সাইলেন্ট করে রাখব। এটা সেই শিল্পের প্রতি সম্মান এবং যাঁর অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছি, তাঁর প্রতিও সম্মান। নাহলে মনোসংযোগ ভীষণভাবে নষ্ট হয়। কারণ, কোনও শিল্পী যখন পারফর্ম করেন, তখন তিনি পুরোপুরি সেই বিষয়টার মধ্যে ডুবে যান। সেই সময় মোবাইলের আলো বা অন্য কোনও বাধা এলে সমস্যা হয়।’
এই বিষয়টি বহু বছর ধরেই ঘটে আসছে।তাই অভিনেতার কথায়, ‘এটা অসভ্যতা তো বটেই। নাটক বা থিয়েটার দেখতে গেলে আলাদা কনসেনট্রেশনের প্রয়োজন হয়। সেটা কারও নেই। এটাকে অসভ্যতা প্রদর্শন বলে। একবার হতে পারে, বারবার কী করে হতে পারে এই ঘটনা। কখনও কখনও খুবই মনখারাপ হয়। দর্শক দেখছেন বলে থিয়েটার বা ফিল্ম চলছে, এটা ঠিক। তবে তারাই সব এমনটা ভাবাও ঠিক নয়। ভদ্র দর্শক পাশে বসে থাকলে তাদের উপরও প্রভাব পড়ে।’
রুচিবোধ ও দায়বদ্ধতার প্রশ্ন টেনে অনির্বাণ বলেন,’রিলস একটা রুচির বিষয়, আমার ভাল না লাগলে আমি করব না। তেমনই তো থিয়েটার, যাঁর ভাল লাগবে, সে আসবে, যার ভাল লাগবে না, সে আসবে না। কেউ তো জোর করে না। কিন্তু আমি যখন দর্শক হিসেবে উপস্থিত হচ্ছি, তখন আমাকে সেই দায়িত্ববোধ ও দায়বদ্ধতাটা নিয়ে আসতে হবে।’
তবে সব দর্শকই দায়বদ্ধহীন এমনটা নয়। দিন তিনেক আগেই কল্যাণীতে নাটক করতে পৌঁছেছিলেন অনির্বাণ। সেখানে হলে একটা মোবাইলও বাজেনি। সেই কথাও নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় উল্লেখ করতে ভোলেননি অভিনেতা।
প্রসঙ্গত, সুজন মুখোপাধ্য়ায়ের পরিচালনায় অ্য়াকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে মহাত্মা বনাম গান্ধী নাটক উপস্থাপন করছিলেন অনির্বাণ ও তাঁর দলের লোকজন।