Tuesday, December 3, 2024
Tuesday, December 3, 2024
Homeআলোচনাপানিহাটি সাযুধ প্রযোজিত টার্গেট

পানিহাটি সাযুধ প্রযোজিত টার্গেট

মনোরঞ্জন গুহ 

নাটক: সুব্রত কাঞ্জিলাল

প্রয়োগ: অনুপ রায় কর্মকার

প্রযোজনা: পানিহাটি সাযুধ 

আমি থিয়েটারের লোক নই। ঘন ঘন থিয়েটার দেখার সুযোগ হয় না। সময় পেলে কখনো কখনো থিয়েটার দেখার জন্য আসলে বলতে হবে থিয়েটার দেখার পিপাসা মেটানোর জন্য কলকাতা এবং আশেপাশে চলে যায় আমার দেহ এবং মন। সেই ভাবেই গতকাল সোদপুর রাইসের ঘরে ঢুকে পড়েছিলাম। বিশ্বনাট্য দিবস উপলক্ষে গতকাল সোদপুর রাইসের আমন্ত্রণে এবং উদ্যোগে একটি মনগ্র সন্ধ্যার অংশীদার হয়ে ছিলাম। সর্বমোট তিনটে নাটকের স্বাদ গ্রহণ করলাম। ছোট্ট সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে বক্তাদের কথা শুনলাম। এসো নাটক শিখি দলটির নাটক দেখলাম। কিশোরদের নাটক। চেখব এর গল্প থেকে গিরগিটি নাটকটি তারা পরিবেশন করলেন।

দেখলাম সোদপুর রাইসের ছোট্ট একটি নাটক। মন ভরে গেল। বিশেষত পানিহাটি সায়ু ধ দলের টার্গেট নাটক আমাকে সারারাত জাগিয়ে রেখেছিল।

এই সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা। আমাদের মত দর্শকের ঘুম কেড়ে নেবার মতো গল্প। মধ্যবিত্ত সুবিধাবাদী যে সমাজটা বহুদিন ধরে কুম্ভকর্ণের মত ঘুমিয়ে আছে। আত্মস্বার্থ চরিতার্থের জন্য মেরুদন্ড হারিয়ে ফেলেছে। সমাজ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে রাজনৈতিক অজাচার চলেছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদহীন হয়ে পড়েছে। এই নাটক ওই সমাজের যদি ঘুম না ভাঙ্গাতে পারে তাহলে বলতে হবে, সমাজ ও জাতির অধঃপতনের শেষ সীমানায় আমরা পৌঁছে গেছি।

পূর্ববঙ্গ থেকে চলে আসা এক নারীর আর্তনাদ এই নাটকে মর্ম ভেদি হয়ে উঠেছে। রেবেকা নামের ওই নারী আজ বিপন্ন। Lumpen সমাজ ও প্রশাসনের অমানবিক আচরণে মেয়েটি আক্রান্ত হয়ে তবুও আত্মসমর্পণ করতে চাইছে না।

এই নাটকে আরো তিনজন প্রবীণ সম্পন্ন মানুষের দেখা পাওয়া যায়। যারা রেবেকাকে স্নেহ করে। রেবেকার চায়ের দোকানে দিনের প্রথম চা না খেলে যাদের দিন ভালো যায় না। ওই তিন প্রবী ন জীবনের প্রান্তে এসে দাঁড়িয়ে একটা সময় দিশেহারা হয়ে ওঠে।

তারা বুঝতে পারে না শ্মশানের দিকে পা বাড়িয়ে রেখে কিভাবে রেবেকার স্বাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে পাশে এসে দাঁড়াবে।

আলোচ্য নাটকের দলটি একটা সময় বাংলা থিয়েটারের ভান্ডারে অসংখ্য শিল্পসমৃদ্ধ জীবন্মুখী নাটকের উপহার দিয়েছে। দলের প্রবীণ অভিনেতা অভিনেত্রীরা আজ ও ক্লান্তিহীন। এই দলের সবচেয়ে বড় সম্পদ অভিনয়হীন অভিনয়।

কালকে প্রসে নিয়ম থিয়েটারের প্রচলিত মঞ্চ ছিল না।

স্কুল ঘরের মধ্যে অভিনেতাদের অন্তরঙ্গ হয়ে আমরা বসে ছিলাম প্রায় পঞ্চাশ জন দর্শক। আরো অনেকে এখানে ওখানে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। তথাপি কখনো মনে হয়নি, সামনে যা ঘটে চলেছে নাটকের গল্পের মধ্য দিয়ে সেটা আমাদের জীবনের সম্পর্কহীন।

এখানে আলোর ম্যাজিক ছিল না। ছিলনা সেটের নানারকম বৈচিত্র। ইলুয়েশন তৈরীর অবকাশ ছিল না।

তবুও তবুও অভিনয় সত্য হয়ে উঠেছিল।

আমি নন্দনতাত্ত্বিক নই। বিদগ্ধ শিল্প রসিক নই। সাদামাটা জীবনের সাদামাটা স্বপ্ন নিয়ে জীবনের ষাট বছর অতিক্রান্ত করে দিয়েছি। আমার অনুভব থেকে শুধু এটুকু বলতে পারছি, সত্যকে বিকৃত করবার যতই অপচেষ্টা থাকুক, খাঁটি শিল্প র মধ্যে দিয়ে জীবনের সত্যগুলো ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করবে।

টার্গেট নাটক এই সময়ের একটি বলিষ্ঠ প্রযোজনা এই কারণেই হয়ে উঠতে পেরেছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular