অশোক রায় , বীরা
নাটক- অনুচ্চারিত
নাট্যকার- বারীন চক্রবর্তী
নির্দেশক- দিলীপ মজুমদার
প্রযোজনা- এপিক থিয়েটার
গত ২৪ মার্চ যোগেশ মাইম একাডেমী মঞ্চে অভিনীত হল, এপিক থিয়েটার প্রযোজিত বারীন চক্রবর্তীর মৌলিক নাটক (Natok) ‘অনুচ্চারিত’।
মানব সভ্যতার ইতিহাস প্রকৃতি ও মানুষের যৌথ ইতিহাস। মানুষ প্রকৃতির সন্তান অথচ প্রকৃতির সাথে তার সম্পর্ক বৈরিতা ও সংঘাতের। উন্নততর প্রযুক্তির আগমন, বিশ্বায়ণ প্রকৃতির প্রতি নির্ভরশীলতা কমাতে পারেনি উল্টে সংঘাতের মাত্রার উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই ঘটিয়ে চলেছে।
প্রকৃতির বিপন্নতা, জলবায়ুর পরিবর্তন মানবজীবনে বয়ে আনছে উত্তরোত্তর সংকট। প্রকৃতি আর মানুষের এই যৌথ বিপন্নতার মাঝে পুঁজি আরো আরো মুনাফার লোভে মত্ত। তখন প্রতিবাদী মানুষের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় পরিবেশ রক্ষার লড়াই-এর অংশ হয়ে ওঠা। মানুষ ও প্রকৃতির আন্তঃ বিপাকীয় সম্পর্কের পুনরুদ্ধার এর মাধ্যমেই উৎপাদন সম্পর্কের পরিবর্তনের সাথী হয়ে ওঠা। এ আমাদের দায়বদ্ধতা।
আর এমনই দায়বদ্ধতা থেকেই জন্ম নেয় এক গভীর প্রতিবাদের নাটক “অনুচ্চারিত”। এখানেই সার্থক সমাজ ও সময় সচেতন নাটককার বারীন চক্রবর্তী। সমাজ ও সময় সচেতনতার স্বাক্ষর বারবার বারীন চক্রবর্তীর লেখনীতে উঠে আসছে, ইদানীং আমরা দেখতে পারছি যা আমাদের দর্শককুলকে সমৃদ্ধ করছে।
এই দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখেই এপিক থিয়েটার তাদের নবতম প্রযোজনা বারীন চক্রবর্তীর “অনুচ্চারিত”-এর সার্থক রূপায়ণ ঘটালো ।
এক গভীর সংকটের কথা সহজ ভঙ্গিতে দর্শকের সামনে উপস্থাপিত করা অবশ্যই খুবই দুরূহ কাজ। কিন্ত ভালোবাসা থাকলে, নাটকের প্রতি কমিটমেন্ট থাকলে কঠিন কাজও যে সহজ হয়ে ওঠে তার উজ্জ্বল নিদর্শন এপিক থিয়েটারের এই নবতম প্রযোজনা। এটি অনুচ্চারিত-এর প্রথম প্রদর্শন তাই বিশেষ কাঁটা ছেড়া করা অনুচিত। নাটকটির সকল কলাকুশলী যে অনুভবে এক জটিল ও গভীর সংকটকথা উপস্থাপন করলেন তার জন্য অভিবাদন জানাই সকলকে।
সঠিক ভাবে স্পেসের ব্যবহার না করা, অতিরিক্ত স্ক্রিপ্ট অনুসরণ ইত্যাদি ছোটোখাটো ত্রুটি ছাড়া প্রত্যেকের প্রাণঢালা অভিনয় বহুদিন মনে থাকবে। নাটকের বিষয় নির্বাচনে সাহসী পদক্ষেপ ও দক্ষ নির্দেশনার জন্য নির্দেশক দিলীপ মজুমদারের কাছে ঋনী থাকলাম। মঞ্চ নির্মাণ-এর মুন্সীয়ানা নজর কেড়েছে। আলো ও সঙ্গীত-এর ব্যবহার যথাযথ। তবে আশা রাখবো পরবর্তী অভিনয়ে আলো ও সঙ্গীত বিষয় নিয়ে নির্দেশকের আরো মনোযোগ। কোরিওগ্রাফি নিয়ে ভাবনাকে আরো প্রসারিত করতে হবে বলেই মনে হয়েছে।
সর্বোপরি অনুচ্চারিত অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা নাট্য মঞ্চে এপিক থিয়েটার যে গভীর দায়বদ্ধতার ছাপ রেখে গেল তা অভিবাদনযোগ্য। আজ আমাদের চারপাশের পরিবেশ বিপন্নতা, অসহিষ্ণুতা, কেড়ে খাবার লড়াই, সুচতুর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন সব কিছুর মধ্যেও নাট্যকার উষ্ণ মরুতে এক আঁচলা জল এই অনুচ্চারিত। পারিবেশের প্রতি আমদের যে দায়বদ্ধ থাকা জরুরী সেটা আমাদের দেখিয়ে দিলেন এপিক থিয়েটারের কলাকুশলীরা। সেলাম এপিক থিয়েটার। আগামিদিনে এভাবেই নাটকে নিয়ে মঞ্চে থাকুন।