Tuesday, November 19, 2024
Tuesday, November 19, 2024
Homeসিরিজপরীমনির দুর্দান্ত কাম-ব্যাক ওয়েব সিরিজ রঙ্গিলা কিতাব-এ

পরীমনির দুর্দান্ত কাম-ব্যাক ওয়েব সিরিজ রঙ্গিলা কিতাব-এ

নিজস্ব প্রতিনিধি 

কিঙ্কর আসান-এর বহু বিক্রীত জনপ্রিয় উপন্যাস ‘রঙ্গিলা কিতাব’ এর ছায়া অবলম্ববে নির্মিত ওয়েব সিরিজ ‘রঙ্গিলা কিতাব’। সিরিজের ক্যাপশান ‘রক্তে রাঙা প্রেমের কিসসা’ জানান দেয় নির্মানের চরিত্রকে। অনম বিশ্বাসের ৮ পর্বের সিরিজ এই সিরিজটি হৈচৈ ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে গত ৮ নভেম্বর। ট্রেলার মুক্তি পাবার সাথে সাথেই এই ছবির দর্শকের প্রতিক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে।

বরিশালের পটভূমিকায় গঠিত এই সিরিজ। আ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলোর জন্য অ্যাকশন পরিচালক তো বটেই সিনেমাটোগ্রাফার, মূল পরিচালক এবং অভিনেতারা বড় রকমের একটা standing ovation পাবেন এই ছবির জন্য এরকমই নেটিজেনরা মনে করছেন। ইতিমধ্যে এধরনের দুর্দান্ত সব অ্যাকশনের দৃশ্য বাংলাদেশী কোন ওয়েব সিরিজগুলোতো বটেই এমনকি কোন বাণিজ্যিক সিনেমাতেও দেখা যায়নি। এক কথায় বেশ প্রশংসা পাচ্ছে এ ছবিটি।

‘রঙ্গিলা কিতাব’-এর গল্প        

সিনেমার শুরুতেই নদীতে এক এম পি-র লাশ ভেসে উঠেছে। মুহুর্তে তোলপাড় করে শুরু হয়ে যায় বাজার গরম করা এক কাহিনী। সেই মৃতদেহের কোনো মুণ্ডু পাওয়া যায় নি। লাসের সাথে মুণ্ডু না পাওয়ার খবর চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ এসে সেই লাস ময়না  তদন্তের জন্য পাঠায়। এদিকে শহরে রটে যায় নওরোজ শাহর ডান হাত প্রদীপ এই কাজটি করেছে। ইতিমধ্যে প্রদীপকে দেখা যায় পায়ে গুলি লাগা অবস্থায় গুলি বার করতে। যখন প্রদীপেরই এক বন্ধুকে নওরোজ শাহ ফোন করে বলে, ‘কাজটি কেন করলি, মেরে ফেলার কথা তো ছিল না।’ প্রদীপ জানায় যে সে খুন করেনি। নওরোজ তাকে গা ঢাকা দেওয়ার নিদান দেয়। কিন্তু প্রদীপ সেখানে জানায় বাড়িতে তার গর্ভবতী স্ত্রী রয়েছে। জ্যাঠা নওরোজ  কথা দেয় তার স্ত্রী সুপ্তিকে তিনি দেখে রাখবেন। এরপর ফ্ল্যাসব্যকে জানা যায় কে এই প্রদীপ আর নওরোজ। দুজনের এক অদ্ভুত সম্পর্কে কাহিনীতে প্রতিভাত হয়। খুন রাহাজানি মার্ডার সব কিছুই এই প্রদীপকে দিয়ে করাতো জ্যাঠা নওরোজ শাহ। শহরের সকলেই প্রদীপকে ভয় পেত। বিয়ের পর প্রদীপ সেই কাজ থেকে রিটায়ার্ড নিয়ে নেয়। সে মুল স্রোতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্যে একটা দোকনও খুলেছিল। সেখানে দেখা যায় এক অশীতিপর বৃদ্ধাকে সে তার দোকানের আনাজ বিনিপয়সায় দয়াপরবস হয়ে দিয়ে দিচ্ছে। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল প্রদীপ ও সুপ্তির জীবনে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে প্রদীপ অবিলম্বেই আবারও বিপদে পড়ে।            

ব্যাপারী আজম সাহেবের একটা মাদক বোঝাই ট্রাক ধরা পড়েছে। সেই ট্রাক ছাড়াতে টাকা নিয়ে আজম সাহেব গিয়েছিল এম পি-র কাছে। নওরোজ শাহই বর্তমানে এই সাজুভাইকে এম পি বানিয়েছে এটা এই আণ্ডার ওয়াল্ডের সকলেই জানে। আজম সাহেব আবার নওরোজ শাহ’রই লোক। কিন্তু সাজুভাই আজমের সেই ঘুষ নিতে চায় না উল্টে আজমসাহেবকে এটা চড় কষিয়ে বসে।      

নওরোজ শাহ-র সর্বক্ষণের সঙ্গী জাহাঙ্গীর। সে এমপিকে খুন করে দেবার কথা বললো। কিন্তু নওরোজ বলে যে, সেই কাজ জাহাঙ্গীরের পক্ষে সম্ভব নয়, যদি কেউ পারে, সে হচ্ছে প্রদীপ। তাই প্রদীপকে ফোন করা হয়। কিন্তু প্রদীপ তখন তার স্ত্রীকে নিয়ে হাঁসপাতালে ডাক্তারের কাছে গেছে। কিন্তু জ্যাঠা নওরোজ তাকে ফোনে না পেয়ে তার বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়। সে প্রদীপকে এমপিকে মারার কথা বলে। কিন্তু প্রদীপ যে কথা দিয়েছে সুপ্তিকে, সে এই কাজ আর করবে না, তাই সে প্রথমে রাজী হয় না। কিন্তু জ্যাঠা যখন তাকে বলে তাকে মেরে ফেলতে হবে না, বেশ কড়া করে হুমকি দিয়ে ভয় দেখালেই চলবে। তখন প্রদীপ রাজী হয়। পরদিন সকালে এম পি যখন প্রাতঃ ভ্রমণে বেড়িয়েছে, তখন প্রদীপ তাকে শাসাতে যায়। এম পি-ও প্রদীপকে পাল্টা হুমকি দেয়। রিভলবার বার করে। প্রদীপও রিভালভার বার করে। কিন্তু অদৃশ্য কোনো জায়গা থেকে গুলি এসে লাগে এম পি-র বুকে, তারপর দেহররক্ষীদের সাথে প্রদীপ আর তার সহযোগীর লড়াই বাঁধে, কোনোরকমে দুজনে সেই জায়গা থেকে পালায়। সেই সময় দেখা যায়, একটা চপাড় নিয়ে লাসের সামনে কে দাঁড়িয়ে। আততায়ীকে এই সময় রিভিল করা হয় না। পালানোর সময় সেইখানে প্রদীপের হাত থেকে বন্দুক আর মোবাইল পড়ে যাওয়ায় তথ্য প্রমাণ হিসেবে প্রাথমিক খুনের সন্দেহ গিয়ে পড়ে প্রদীপের ওপর।       

খুব স্বাভাবিক ভাবেই এম পি-র পোষা গুণ্ডাবাহিনী আক্রমন চালায় প্রদীপ ও প্রদীপের গর্ভবতী স্ত্রীর ওপর। দুজনেই দুই দিকে উদভ্রান্তের মতো দৌড়তে থাকে। এদিকে নওরোজ শাহের সন্দেহ গিয়ে পড়ে আজম সাহেবের ওপর, কারণ সে জানে তার অনুমতি ছাড়া প্রদীপ একাজ করতেই পারে না।        

গল্পের উত্তেজনা ক্রমশ বাড়তে থাকে। সুপ্তিকে প্রদীপ ঘর থেকে পালিয়ে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে বলে, সুপ্তি সেখানে যাবার জন্য তড়িঘরি বের হয়। এদিকে এম পি-র গুণ্ডা তাকে তারা করে। সেই গুণ্ডাবাহীনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সুপ্তি জলপথে একটি নৌকার সাহায্যে ওপারে  পালায়। এদিকে প্রদীপের একটার পর একটা বিপদ আসতে থাকে। একদিকে সুপ্তি তার থেকে কোথায় গেছে তার খবর সে জানে না, আর অন্যদিকে সে প্রায় ফেরার হয়ে তার দোকানের পেছনে কাঠের গোলায় যায়, দোকানের ছেলেটি তাকে সেখানে শুতে দেয়। এদিকে গুন্ডা বাহিনীর একজন সেটা জানতে পেরে প্রদীপকে সেখানে আক্রমন করে, সেখানে এক খণ্ডযুদ্ধে প্রদীপ সেই ছেলেকে পিষে মেরে ফেলে। নওরোজকে প্রদীপ ফোনে জানায়, ‘জ্যাঠা শেষমেশ আমাকে ফেরার হয়ে থাকতে হবে?’    

এদিকে এম পি-র লোকজন নওরোজ শাহের গাড়ির ওপর বোমাবর্ষণ করে। জাহাঙ্গীর প্রদীপকে পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়, কিন্তু সেখানেও বিপদ, পথে পুলিশ এসে পড়ে সুপ্তির লুকিয়ে থাকা শেফালির বাড়িতে। সেখান থেকে প্রদীপ সুপ্তিকে উদ্ধার ক’রে অন্যত্র দুজনে পালিয়ে যায়। সেই জায়াগাটা আবার জাহাঙ্গীর ঠিক করে দিয়েছিল, যে লোকটি তাদের আশ্রয় দিয়েছিল, তাকে সুপ্তির ভালো লাগে না, আসলে সেই লোকটি ভালো না সেও জাহাঙ্গীরেরই লোক। কারণ জাহাঙ্গীর ছিল প্রদীপের রাইভাল। সে-ই প্ল্যান করে তাদের আর এক বিপদের মধ্যে ফেলে। এদিকে টেলিভিশন নিউজ-এ প্রদীপ ও তার বন্ধুর ছবি প্রকাশিত হয়। ফলে তাদের পক্ষে গা ঢাকা দেওয়া বেশ বিপদজ্জনক হয়ে পড়ে।      

এদিকে এম পি মারা যাওয়ায় উপনির্বাচন নিয়ে আজম সাহেব মাঠে নেমে পড়েন। নওরোজ ছাড়া এমপি হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আজম ও মৃত এম পি স্ত্রী দুজনের সাট হয়ে নওরোজের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। ওদিকে প্রদীপের জীবন ক্রমশ সংকটে পড়তে শুরু করে, এক সহৃদয় হোটেল মালকিনের সাহায্যে তারা একটা থাকার ঘর পায়। সেখানেও জাহাঙ্গীরের লোক তাদের আক্রমন করে। তারা প্ল্যান করে বর্ডার পার হয় আসাম বা মিজোরাম পালিয়ে যাবে, সেখানে ও দালালের সাথে তাদের কথা হয়।

কিন্তু সেখানে আবার তাদের ওপর আঘাত এসে পড়ে। পথের কাটা নওরোজকে দুনিয়া থেকে সরাবার জন্য প্ল্যান করে আজম আর মৃত এম পি পত্নী। সাথ দেয় জাহাঙ্গীর। আর সেইকাজ করতে বাধ্য করা হয় প্রদীপকে।

ছবির ক্লাইম্যাক্সে গর্ভবতী পরীমনির সন্তান প্রসবের সময় একটা গাড়ি ডাকতে গিয়ে বিপদে পড়ে গুলি বিদ্ধ হয় প্রদীপ। সময় অতিক্রান্তে দেখা যায় পরীমনি তার সন্তান নিয়ে তারই ভিটেতে ফেরে যখন সেখানকার এম পি সেই মহিলা।

রঙ্গিলা কিতাব -এ অভিনয় পর্যালোচনা

পরীমনির জীবনের প্রথম ওয়েব ছবি এই ‘রঙ্গিলা কিতাব’। অনম বিশ্বাস তার খুব পছন্দের একজন পরিচালক। তিনি একটি ওয়েব নিউজ চ্যানেলে জানান, তিনি আসলে একজন প্রেগন্যান্ট মহিলার ফিচারটা ছুঁতে চেয়েছেন, শ্যুটিং –এর ঠিক আগে আগেই সে সন্তানের মা হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে তার মা হবার অভিজ্ঞতাকে তিনি ভীষণভাবে কাজে লাগান এই সুপ্তি চরিত্র চিত্রণে। এবং বলা যেতে পারে তিনি একশ শতাংশ সফল এই অভিনয়ে। একটা আঠারো দিনের টাইট শিডিউলে শ্যুট হয়েছে, যাতে করে অভিনেত্রী পরীমনি সুপ্তি চরিত্রের কন্টিনিউটি ধরে রাখতে পারেন।     

এদিকে মুস্তাফিজ নুর ইমরান অভিনয় করেছেন প্রদীপ চরিত্র। নায়ক মানেই সুটেট বুটেট থাকতে হবে, এই ধারনা থেকে বাংলা মুভি বের হচ্ছে এটাই তার প্রমাণ করলেন ইমরান। অনবদ্য তার অভিনয়। ভীষণ স্বাভাবিক।

এই ছবির মূল ভিলেন চরিত্র নওরোজ শাহ চরিত্রে অভিনয় করেছে বলিষ্ঠ অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। নষ্ট এক চোখ নিয়ে অসামান্য সব অভিব্যক্তি দিয়ে চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছে অভিনেতা বাবু। মূলত অভিনয় বলতে এই তিন চরিত্রই গোটা সিরিযে দাপিয়ে অভিনয় করেছে। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রের অভিনেতারাও বেশ ভালো কাজ করেছেন।

নিজেকে নিজেই ছাপিয়ে গিয়েছেন পরীমনি

এটাকে পলিটিক্যাল থ্রিলার বলা যায়, সাথে সাথে রোমান্স ও এক্সনের ছবিও বলা যায়। খুব স্বাভাবিক ছন্দেই ছবিতে রোমান্সের দিকটি এসেছে। কখনোই অতি রঞ্জিত মনে হয় নি। এখানে পরিচালকের কৃতিত্ব একশ শতাংশ। পরীমনির মতো হট ও বিতর্কিত অভিনেত্রীকে, তার অভিনয়গুণকে কাজে লাগিয়ে কি করে ছবি বানাতে হয় সেটা পরিচালক জানানে। আর এই ছবিতে একটি বিষয় ভীষণ ভালো করে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক, সেটা গোটা ছবির থ্রিলের ব্যাপারটা। দুইটি চরিত্র বার বার নানা ঘাত ও সংঘাতের মধ্যে দিয়ে পালাচ্ছেন, নানা সংকটকে অতিক্রম করছেন, শেষ পর্যন্ত এক ভালোবাসার আঙিনায় এসে দাঁড়াচ্ছেন, একে অপরের কাছে বিশ্বাসের কষ্ঠিপাথরে যাচাই না করে, শুধুমাত্র প্রেমের আবেগে ভেসে না গিয়ে, দুজন দুজনের প্রতি দায়িত্ববান থেকেছেন, যা এ সিরিজ মেকিং-এর একটি দুর্দান্ত দিক। একদিকে জীবনের ঝুকি, অন্যদিকে দুজনের সাথে দেখা না হওয়া, আবার সুপ্তির গর্ভবতী অবস্থায় একের পর এক বিপদের গণ্ডি অতিক্রম করা। আন্ডার ওয়ার্লেডের অপরিহার্য বিপদ ও সংকটের দিকটি খুব ভালো করে চিত্রায়িত হয়েছে এই ছবিতে। আবেগের টানাপড়েনও চুড়ান্তভাবে সফল হয়েছে। জ্যাঠা ও প্রদীপের সম্পর্কও বেশ নজর কেড়েছে। আসলে সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস যে একটা শক্তিশালী বিষয় সেটা পরিচালক বার মনে রেখে নির্মানে এগিয়েছেন।

তবে এই ছবির শেষ নিয়ে প্রশ্ন থেকে গিয়েছে। হয়তো সিরিজ দুই -এরই ইঙ্গিত দিয়ে গেছে। যদিও সেই ইঙ্গিত ভীষণ দুর্বল। গোটা ছবিতে তৈরি হওয়া প্রত্যাশা কেমন করে যেন শেষ হয়ে গেল। সব মিলিয়ে এই সিরিজ অসফল বলা যাবে না।       

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular