বিজয়কুমার দাস
নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে এগিয়ে চলেছে বাংলা থিয়েটার। একটি থিয়েটার নির্মাণ মানে একটি নাট্যদল বা একজন নির্দেশকের কাছে যেন একটি যুদ্ধ। রাজ্যের কলকাতা সহ জেলায় জেলায় বিভিন্ন নাট্যদলে সেই যুদ্ধটা অহরহ চলছে। নানা সমস্যার কাঁটা সরিয়ে একটি থিয়েটার নির্মাণ করতে হয়। একদা থিয়েটার ছিল নিছক শখ মেটানো, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে থিয়েটার তার খোলস পালটে সময়োপযোগী হয়ে উঠতে চেয়েছে। একটা সময় ছেলেবেলায় শখ করে পাড়ায় পাড়ায়, নানা উৎসবে, ক্লাবে মঞ্চ বেঁধে থিয়েটার হত। তারপর সেইসব অভিনেতা অভেনেত্রীরা সময়ের চাহিদায় অনেকেই হারিয়ে যায়। আবার অনেকেই মাথার মধ্যে থিয়েটারের পোকাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এই মুহূর্তে বাংলা থিয়েটারে অনেক শক্তিশালী অভিনেতা অভিনেত্রী আছেন। তাঁরা প্রতিদিন নানা মঞ্চ মাতাচ্ছেন। কিন্তু এই সব থিয়েটারে এইসব খ্যাতিমান অভিনেতা অভিনেত্রীদের পাশাপাশি নানা প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কাজ করছে। এদের অনেকেই থিয়েটারে থাকতে এসেছে, অনেকে কিছুদিন থেকে অন্য বিকল্প কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। কেউ কেউ চাকরি,ব্যবসার পাশাপাশি থিয়েটারটাও করে। সেই নতুন প্রজন্মের অনেকেই কিন্তু খ্যাতিমান অভিনেতা অভিনেত্রীর পাশাপাশি স্বল্প সময়েও দর্শকের আকর্ষণ আদায় করে নেয়। এদের অনেকে থিয়েটারকে ভালবেসে থিয়েটারে থেকে যায়, অনেকে থাকতে পারে না। কিন্তু তাদের ভূমিকা তো স্বীকার্য। থিয়েটার নিয়ে পড়াশুনো করে অনেকেই থিয়েটারে যুক্ত হচ্ছে।থিয়েটারে থেকে যেতে চাইছে। থিয়েটারকে পেশা হিসাবে নিতে চাইছে। যদিও এ পোড়া দেশে থিয়েটার করে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন কাজ।তবু কেউ কেউ তো এই কঠিনেরে ভালবেসে থিয়েটারে থেকে যেতে চাইছে।
এটা কিন্তু প্রমাণিত আচমকা কারো ডাকে থিয়েটার করতে এসে অনেকেই মঞ্চে অভিনয়ে দর্শকদের চমকে দিয়েছে, চমকে দিচ্ছে। প্রায় সব নাটকের দলেই থিয়েটার করার ছেলে পাওয়া গেলেও থিয়েটার করার জন্য মেয়েদের পাওয়া যায় না।অথচ একটা নাটকে আর কটা স্ত্রী চরিত্র থাকে?… তবু অভিনেত্রী খুঁজতে খুঁজতে বহু পরিচালকের মাথা ভর্তি চুল বিরলকেশে পরিণত হচ্ছে। এই মুহূর্তে কিন্তু বিভিন্ন নাট্যদলে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ভাল অভিনয় করছে। সবাই যে থিয়েটারের অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে, তা নয়।কিন্তু থিয়েটার করার জন্য মঞ্চে নেমে দর্শকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে। হয়তো তাদের কেউ ছেলেবেলায় রবি ঠাকুরের “ডাকঘর” নাটকে অমল বা সুধা করে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনেকে তাও করেনি। তবু অভিনয়টা ভালই করছে।গ্রুপ থিয়েটারের কর্ণধার বা নির্দেশকরা অনেকটা যেন গোয়েন্দার মত। সবসময় নজর রাখে এলাকার কোন মেয়েটি ভাল নাচে, কোন ছেলেটি ভাল আবৃত্তি করে। সঙ্গে সঙ্গে ” এই, থিয়েটার করবি?”… বলে ডেকে নিয়ে এসে একটা নাটকে জুড়ে দেয়। অনেক সময় সেই ছেলেটি বা মেয়েটি দর্শকের বাহবা পায়। কিন্তু তারা সবাই কি থাকে থিয়েটারে?…
সময় বদলে যাচ্ছে। রুটিরুজির লড়াই তীব্র হচ্ছে। তাই অনেকেই থিয়েটারের দল ছেড়ে সামান্য বেতনে কোন মিলে বা দোকানে বা কারখানায় কাজে লেগে যাচ্ছে। অনেকে ছাত্র ছাত্র পড়ানোয় যুক্ত হয়ে আর থিয়েটারে সময় পায় না।
তবু সব গল্পই হেরে যাওয়ার গল্প নয়। বিভিন্ন নাট্যদলে নতুন প্রজন্মের অনেকেই তাক লাগিয়ে দিচ্ছে।সব বাধাকে তুচ্ছ করে থিয়েটার করছে।এটাও একটা লড়াই।থিয়েটারের মত একটি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই। গিরিশচন্দ্র যেভাবে বিনোদিনীকে রঙ্গমঞ্চের প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী করে তুলেছেন, সেরকম ছোট মাঝারি বড় সব নাট্যদলে নির্দেশকরা নতুন প্রজন্মকে থিয়েটারে নিয়ে এসে তাদের গড়েপিটে অভিনেতা – অভিনেত্রী করে তুলছেন।
এইসব নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জীবনেও গল্প আছে। অভিনেতা অভিনেত্রী হয়ে ওঠার গল্প।
বাংলা নাটক ডট ইন সেই নতুন প্রজন্মের গল্প শোনাবে, যারা দুই, তিন, চার, বা পাঁচ বছর অভিনয় করতে করতে আশা জোগাচ্ছে বাংলা থিয়েটারকে। তাহাদের কথা। সেইসব নতুন নক্ষত্রের কথা।